মুদগল কমিটির রিপোর্টে গুরুনাথ মইয়াপ্পনকে দোষী সাব্যস্ত করার পর আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কোনও কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি মনে করছে, এই অবস্থায় ১২-১৩ ফেব্রুয়ারির নিলাম পিছিয়ে দেওয়া উচিত। কারণ, নিলামের পর যদি সিদ্ধান্ত হয় চেন্নাই সুপার কিংসকে বাতিল করে দেওয়া হবে, তবে তাঁদের প্লেয়ারদের ভবিষ্যৎ কী হবে? বিশেষ করে যে দলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো ক্রিকেটার আছে। আবার কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজির মত, রিপোর্টের পরেও শ্রীনিবাসনের সমস্যা হবে না। কারণ আইপিএল কমিটি বা বোর্ডে তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার মতো কেউ নেই। মুদগল রিপোর্ট নিয়ে অবশ্য বোর্ড প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করতে চাননি। তাঁকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শ্রীনিবাসন বলেন, “আমি রিপোর্টটা পড়িনি। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।”
আইপিএল ‘রিটেনশন নীতি’ অনুযায়ী ধোনি, জাডেজা, রায়নার মতো ক্রিকেটারদের ধরে রেখেছে চেন্নাই। নিলামে এঁরা কেউ উঠবেন না। এ বার কয়েকটা ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রশ্ন তুলেছে, চেন্নাই বাতিল হয়ে গেলে ধোনিরা কোথায় যাবেন? কোন দল তাঁদের পাবে? পরে কি আবার তাঁদের নিলামে তোলা হবে? চেন্নাই বাতিল হয়ে গেল, আর ধোনিদের পরে নিলামে তোলা হল এ রকম পরিস্থিতি হলে সমস্যায় পড়ে যাবে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। কারণ নিলামে মোটামুটি সবাই তাদের নির্দিষ্ট অর্থ ক্রিকেটার কেনায় খরচ করে দেবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ধোনিদের কী ভাবে কেনা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। একটি ওয়েবসাইটকে এক ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তা বলেছেন, “আমরা কী করব? বর্তমান পুল অনুযায়ী নিলামে ওঠা ক্রিকেটারদের পিছনে সব অর্থ খরচ খরচ করব? না, ধোনি-রায়নাদের পরে পাওয়া যাবে ধরে নিয়ে টাকা বাঁচিয়ে রাখব?” |
ধোনি-ব্র্যাভোদের আইপিএল-ভাগ্য নিয়ে জল্পনা। |
সব ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তার অবশ্য এক চিন্তা নয়। এক কর্তা যেমন ফোনে বললেন, “আমরা ধরেই নিচ্ছি চেন্নাই সুপার কিংস এ বারও খেলবে। ওদের সাসপেন্ডটা করবে কে? সব জায়গাতেই তো শ্রীনি। আমরা মঙ্গলবারই ফুল টিম নিয়ে বেঙ্গালুরু চলে যাচ্ছি। ধরেই নিচ্ছি বুধ-বৃহস্পতিবারের নিলামই চূড়ান্ত।” নিলাম শুরুর আগে আইপিএল কমিটির কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলতে চান ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তারা। এক জন যেমন বলেছেন, “আমরা গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলব। আমাদের অবস্থাটা বোঝানোর চেষ্টা করব। অনুরোধ করব, যাতে নিলামটা পিছিয়ে দেওয়া হয়।” তবে এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে নিলাম পিছতে রাজি নয় বোর্ড। বোর্ডের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব শুক্ল তো বলেই দিয়েছেন, নিলাম ঠিক সময় হবে।
প্রশ্ন থাকছে রাজস্থান রয়্যালসের মালিক রাজ কুন্দ্রাকে নিয়েও। যদিও রিপোর্টে তাঁর সম্পর্কে অভিযোগ প্রমাণের কথা বলা হয়নি। কুন্দ্রা সোমবার রাতে বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তা হলে টিমে আমার যাবতীয় শেয়ার ছেড়ে দেব।” রিপোর্টে বলা হয়েছে, কুন্দ্রার বিরুদ্ধে আরও তদন্ত হওয়া উচিত। যা নিয়ে রয়্যালসের মালিক বলছেন, “দিল্লি পুলিশ চার মাস ধরে তদন্ত চালিয়েছে আমার বিরুদ্ধে। আরও কিছু সময় দেখা যাক না।”
|
গড়াপেটার অভিযোগ বোর্ডেরই দুই প্রাক্তন প্রধানের |
আইপিএলে নিয়মিত ম্যাচ গড়াপেটা হয় এবং গোটা বিষয়টার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া খুব জরুরি। বিচারপতি মুদগলের কমিটিকে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ভারতীয় বোর্ডের দুই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট! শুধু তাই নয়, কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্রিকেট মহলের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে মূলত সিএসকে ম্যাচগুলোই গড়াপেটা হয়। ফলে সুপ্রিম কোর্টকে জমা দেওয়া রিপোর্টে উপযুক্ত কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে এই অভিযোগের তদন্ত করানোর সুপারিশ করেছে কমিটি। মুদগল কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেন বোর্ডের চার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এ সি মুত্থাইয়া, ইন্দ্রজিৎ সিংহ বিন্দ্রা, জগমোহন ডালমিয়া এবং শশাঙ্ক মনোহর। এঁদের মধ্যে কারা গড়াপেটার অভিযোগ এনেছেন, স্পষ্ট নয়। তবে শ্রীনির বিরুদ্ধে সব থেকে গলা ফাটাচ্ছেন যিনি, সেই অপসারিত আইপিএল কমিশনার ললিত মোদীই যে চেন্নাই দল কিনতে শ্রীনিকে বেশি সাহায্য করেছিলেন, রিপোর্টে সে কথা স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে। |