শ্রীনির সঙ্গে ধোনিকেও কাঠগড়ায় তুললেন মোদী
শুধু ক্রিকেট নয়, খেলাধুলোর দুনিয়া থেকেই নায়ারণস্বামী শ্রীনিবাসনের আজীবন নির্বাসন চান ললিত মোদী।
বিচারপতি মুদগল কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে একেবারে খোলা তরোয়াল হাতে বোর্ড প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আক্রমণে নেমে অপসারিত আইপিএল কমিশনার অবশ্য আরও একটা বোমা ফাটালেন এ দিন। সরাসরি ভারত এবং চেন্নাই সুপার কিংস অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলে দিলেন, “শ্রীনিবাসনকে বাঁচাতে চেন্নাই দলে মইয়াপ্পনের ভুমিকা ধাপাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টায় ধোনিও সমান ভাবে জড়িত।” মোদীর আরও দাবি, আইপিএলে দুর্নীতি আর পচন রোধে অবিলম্বে আমূল সংস্কার দরকার। তার জন্য বর্তমান গভর্নিং কাউন্সিল ভেঙে দিয়ে ক্রিকেট কর্তা এবং টিম মালিকদের নিয়ে নতুন কমিটি তৈরি করা হোক।
এ দিন বেলায় মুদগল কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একের পর এক বিস্ফোরক টুইটে আসর গরম করে তোলা শুরু করেন মোদী। পরে সন্ধ্যায় কয়েকটি সর্বভারতীয় চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শ্রীনিবাসনের আজীবন নির্বাসনের দাবিতে সোচ্চার হন। মোদীর দাবি, শ্রীনিবাসন এক জন অপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ বলে এতদিন তিনি যা বলে এসেছেন, মুদগল কমিটির রিপোর্টে সেটাই সত্যি বলে প্রমাণ হয়ে গেল। তবে রিপোর্টে যেটুকু বেরিয়েছে, “সেটা স্রেফ হিমশৈলের চূড়াটুকু,” বলেছেন মোদী।
এক সঞ্চালক জানতে চান, রিপোর্টে তো শুধু এটা প্রমাণ হয়েছে যে মইয়াপ্পন বেটিংয়ে যুক্ত। তা দিয়ে শ্রীনিবাসনকে কী করে কাঠগড়ায় তোলা যায়? মোদীর ঝাঁঝালো জবাব, “যে লোকটা ভারতীয় বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, আইসিসি চেয়ারম্যান, ক্রিকেট দুনিয়ার সর্বময় দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, সে নিজের জামাইকে গড়াপেটা করতে প্রশ্রয় দিয়েছে। তার পরে পিঠ বাঁচাতে ক্ষমতার অপব্যবহারে সত্য আড়াল করেছে। শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে আর কী প্রমাণ চাই। আরও শুনে রাখুন, গত সপ্তাহে শ্রীনিবাসন দুবাইয়ের আইসিসি বৈঠকে যাওয়ার সময় মইয়াপ্পন একই প্লেনে ছিল। দুবাইয়ে দু’জনে একই হোটেলে ওঠে।” মইয়াপ্পনের বেটিংয়ে জড়ানোও শ্রীনিবাসনের সম্মতিক্রমে বলেও ইঙ্গিত দিয়ে মোদী বলেছেন, “শুধু আইপিএল কেন, ভারতীয় বোর্ড থেকে আইসিসি শ্রীনিবাসনের অনুমতি ছাড়া কোথাও একটা পাতাও নড়ে না।” আর এর পরেই ধোনির বিরুদ্ধে তোপটা দাগেন মোদী।
গত বছর স্পট ফিক্সিং কাণ্ডের পরে গুরুনাথ মইয়াপ্পনের সঙ্গে চেন্নাই সুপার কিংস দলের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছিলেন শ্রীনিবাসন। ধোনিও বলেছিলেন, টিম-ডাগ আউটে মইয়াপ্পন হাজির থাকলেও দলে তাঁর ভূমিকাটা ঠিক কী, সেটা তাঁর জানা নেই। ধোনির যে মন্তব্যকে মোদী এ দিন সটান “ন্যাকামি” বলে উড়িয়ে দিয়ে ভারত অধিনায়ককেই কাঠগড়ায় তুলে বলেছেন, “আসল ঘটনা ধাপাচাপা দেওয়ার কাজে ধোনিও অবশ্যই জড়িত। ধোনি আর শ্রীনিবাসন হাত মিলিয়ে চলে।”
মইয়াপ্পনই যে চেন্নাই দলের টিম প্রিন্সিপ্যাল সে কথা এ দিন আবার জোরের সঙ্গে বলেছেন মোদী। তাঁর কথায়, “টিমগুলো তৈরি হওয়ার সময় আমি নিজে ছিলাম। মইয়াপ্পন অবশ্যই চেন্নাই দলের টিম প্রিন্সিপ্যাল। সে জন্যই ওকে মালিকের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছিল। দল সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ওর রয়েছে।” এবং মালিক দুর্নীতিতে জড়িয়েছে বলেই আইপিএলের নিয়ম অনুযায়ী অবিলম্বে চেন্নাই ফ্রাঞ্চাইজিকে আইপিএল থেকে আজীবন নির্বাসনে পাঠিয়ে দলটা ভেঙে দিয়ে চেন্নাই থেকে নতুন কোনও টিমকে নিলামে তোলা উচিত, বলছেন মোদী।
শ্রীনিবাসন ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছেন বলেও মোদীর দাবি। তাঁর কথায়, “লোকটা প্রত্যেক প্লেয়ার আর কর্মকর্তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিটা দলে, প্রতিটা সংস্থার দফতরে ওর চর ঢোকানো আছে। তাই কে কী বলল, করল, কী খেল, কখন ঘুমোলো, সব খবর ওর কাছে চলে যায়।” একমাত্র তাঁর নিজের হাত বাঁধা নয় বলেই তিনি স্পষ্ট অভিযোগ আনতে পারছেন বলেও জানিয়েছেন মোদী। শ্রীনিবাসনের একনায়কতন্ত্রের উদাহরণ হিসাবে মোদী বলেন, “হায়দরাবাদের আসল টিম মালিকদের বঞ্চিত করে শ্রীনিবাসন নিজের বন্ধুর হাতে দলটা তুলে দিয়েছে।”
এমন দুর্নীতিগ্রস্ত লোকের খেলায় জগতে কোনও স্থান নেই জানিয়ে অপসারিত আইপিএল কমিশনারের দাবি, খেলার দুনিয়াটাকেই কলঙ্কিত করে দিয়েছেন শ্রীনিবাসন। তরুণ প্রজন্মের উপর তাঁর কুপ্রভাব পড়া রুখতেই তাই “শুধু ক্রিকেট নয়, শ্রীনিবাসনকে সব ধরনের খেলা থেকেই আজীবন নির্বাসনে পাঠানো হোক।”
বিতর্কিত সেই ম্যাচ
রাজস্থান রয়্যালস বনাম চেন্নাই সুপার কিংস, ১২ মে ২০১৩,
মাইক হাসি বো বিনি ৪০
মুরলী বিজয় রান আউট যাজ্ঞিক ৫৫
রায়না ক স্যামসন বো কুপার ১
ধোনি ক ওয়াটসন বো কুপার ২
জাডেজা ন.আ. ১২
ব্র্যাভো- ন.আ. ২৩
অতিরিক্ত
মোট ২০ ওভারে ১৪১-৪।
পতন: ৮৩ (হাসি ১১.৩ ওভার), ৮৬ (রায়না ১২.১ ওভার)
৮৯ (ধোনি ১২.৫ ওভার), ১১৩ (বিজয় ১৭.২)
প্রশ্ন কোথায়
• ১১.৩ ওভারে ৮৩-১ থেকে পরের ৫১ বলে ওঠে মাত্র ৫৮ রান। রায়না দু’বল, ধোনি তিন বল খেলে আউট হন। জাডেজা ১৪ বল খেলে ১২ রান করেন।
মুদগল কমিটিতে ওঠা অভিযোগ ও পাল্টা যুক্তি
• এর আগে গোটা টুর্নামেন্টে ছক্কার বন্যা বইয়ে দেওয়া চেন্নাই সুপার কিংস ইনিংসে একটা ছক্কাও নেই।
• নক আউট পর্বে চলে যাওয়ায় ম্যাচকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
• দ্বাদশ ওভারের শেষে ৮৬-১ থেকে সিএসকে ইনিংস শেষ ১৪১-৪।
• অনিল কুম্বলের কথায়, রাজস্থান রয়্যালস ঘরের মাঠে প্রায় সব ম্যাচেই জয়ী।
• হাতে ছিল ছয় উইকেট। জাডেজার মতো মারকুটে ব্যাটসম্যান থাকতেও রান তোলার গতি বাড়েনি।
• কুম্বলের বক্তব্য, জয়পুরে ইনিংসের শেষ দিকে বল সুইং করে। রাজস্থান রয়্যালসের বোলাররা শেষের দিকে ভাল বল করেছে।
• গুরুনাথ মইয়াপ্পন বিন্দু দারা সিংহকে বলেছিলেন, চেন্নাই সুপার কিংসের রান দাঁড়াবে ১৩৫ থেকে ১৪০-এর মধ্যে। ধোনিদের ইনিংস শেষ হয় ১৪১ রানে। শেষ বল ব্যাটের কানায় লেগে চার হয়ে যায়।
• মাইক হাসি, ধোনি এবং রায়নার উইকেট পড়ে




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.