|
|
|
|
ফ্রন্ট নয়, ভোটের আগে নীতির জোট চায় বামেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১০ ফেব্রুয়ারি |
কলকাতার ব্রিগেড সমাবেশ থেকে দিল্লিতে ফিরেই অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে বিকল্প জোট তৈরির কাজে নেমে পড়লেন প্রকাশ কারাট। দিল্লিতে আজ নীতীশ কুমার, এইচ ডি দেবগৌড়ার সঙ্গে বাম নেতাদের বৈঠকে ঠিক হল, সংসদের অধিবেশন মিটে গেলে আঞ্চলিক দলগুলির শীর্ষনেতাদের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে দিল্লিতে। যেখানে কারাট, নীতীশ, দেবগৌড়ার পাশাপাশি থাকবেন মুলায়ম সিংহ যাদব, নবীন পট্টনায়ক, জয়ললিতারা। সেই বৈঠক থেকেই জোটের কর্মসূচি ঘোষণা হবে। তবে বিকল্প জোট তৈরির চেষ্টা করলেও গত বারের মতো বিকল্প জোটের সরকার গড়ার ডাক দিচ্ছেন না প্রকাশ কারাটরা। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি এ দিন সাফ জানান, “লোকসভা ভোটের আগে কোনও ফ্রন্ট হচ্ছে না। ১৯৭৭ সাল থেকে যখনই এই ধরনের জোট হয়েছে, তা সে এনডিএ-ই হোক বা ইউনাইটেড ফ্রন্ট, সবই হয়েছে ভোটের পরে।”
তবে এখনকার এই তৎপরতা কীসের লক্ষ্যে? বাম নেতারা জানাচ্ছেন, বিকল্প ফ্রন্টের সরকার গড়ার ডাক না দেওয়া হলেও এই দলগুলি মিলে বিকল্প নীতি তৈরি করা হবে। তার ভিত্তিতেই আঞ্চলিক ধর্মনিরপেক্ষ জোটের দলগুলি নিজেদের মতো করে ভোটে যাবে। রাজ্য স্তরে যেখানে যেমন সম্ভব, তেমন ভাবে এই দলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতা হবে। বিকল্প জোটের মূল লক্ষ্য হবে, নরেন্দ্র মোদী তথা সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি-কে আটকানো। কারণ বাম ও আঞ্চলিক দলগুলির নেতারা মনে করছেন, রাহুল গাঁধী বা কংগ্রেসের পক্ষে মোদীর মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, সে ক্ষেত্রে কি তারা আখেরে কংগ্রেসেরই হাত শক্ত করছেন না? ইয়েচুরি বলেন, “আমরা কংগ্রেস ও বিজেপি-র নীতির থেকে পৃথক বিকল্প নীতির কথা বলছি। বিকল্প নেতা নয়, দেশের এখন প্রয়োজন বিকল্প নীতি।”
কংগ্রেস ও বিজেপি-র কোনও শীর্ষ নেতাই প্রকাশ্যে এই নীতির জোটকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছে, বামেরা নিজেরাই যেখানে জাতীয় রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে, সেখানে এই বিকল্প জোটের গুরুত্ব কতটুকু? তাদের দাবি, কেরল ও পশ্চিমবঙ্গে বামেদের শক্তি কমছে। তাই জাতীয় রাজনীতিতে ভেসে থাকার চেষ্টায় জোট তৈরির চেষ্টায় নেমেছেন বাম নেতারা। এই প্রশ্নের মুখেই বাম ও আঞ্চলিক দলের নেতারা এ দিনের বৈঠকে নিজেদের শক্তি নিয়েও আলোচনা করেন। এনডিএ ছাড়ার পর জাতীয় রাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব ধরে রাখতে এই আঞ্চলিক দলগুলির মঞ্চকেই কাজে লাগাতে চাইছেন নীতীশ। বিজেপি-র দাবি, বিহারে এ বার নীতীশের আসন কমবে। বৈঠকে নীতীশ কিন্তু আশ্বাস দিয়েছেন, জেডিইউ-এর ভোটের ফল নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। রাজ্য জুড়ে সঙ্কল্প-যাত্রায় ভালই সাড়া মিলছে। আবার গত কাল ব্রিগেডের জনসভায় উপচে পড়া ভিড়কে বামেদের জন্য ‘ইতিবাচক ও উৎসাহব্যাঞ্জক’ হিসেবে তুলে ধরেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা দেবব্রত বিশ্বাস।
গত বার মায়াবতীকে সামনে রেখে এমনই একটা বিকল্প জোট তৈরির চেষ্টা করেছিলেন কারাট। কিন্তু সেটাই গত লোকসভায় বামেদের দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এ বার তাই প্রথম থেকেই সতর্ক সিপিএম নেতৃত্ব। ভোটের আগে কোনও ফ্রন্ট নয়, নীতির জোট গড়ার কথা বলছেন। বামেদের বিকল্প জোটের এই স্ববিরোধ নিয়েই প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কটাক্ষ, “মাত্র পাঁচ দিন আগেই কমিউনিস্টরা নির্বাচনের আগে তৃতীয় ফ্রন্টের গল্প বেচছিলেন। আর আজ সব উধাও। আজ তাঁরা বলছেন, নির্বাচনের আগে কোনও জোট নয়। আমরা অবশ্য অবাক হইনি। কারণ একের পর এক নির্বাচনে মানুষ যাদের প্রত্যাখান করেছে, সেই সিপিএমের সঙ্গে কেউ কেন হাত মেলাতে যাবে!”
নয়ের দশকে তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার সময় বাম শিবিরের তরফে বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগের কাজটা করতেন হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ। কারাট এ বার সেই ভূমিকায়। দেবগৌড়ার বাড়িতে আজ প্রাতরাশ বৈঠকে নীতীশ ছাড়াও ছাড়াও ছিলেন এ বি বর্ধন, দেবব্রত বিশ্বাসরা। ঠিক হয়, কারাটই আগামী কিছু দিন নবীন পট্টনায়ক, জয়ললিতা, মুলায়ম ও অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানীতে আঞ্চলিক দলগুলি একসঙ্গে মিলে সভা করবে। দেবগৌড়া চাইছেন, প্রথম জনসভা হোক তাঁর কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে। আবার নীতীশ চাইছেন, সেটা হোক পটনায়। বৈঠক থেকে বেরিয়ে নীতীশ বলেন, “অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি ফ্রন্ট নিয়ে আজ ঘরোয়া আলোচনা হল। পরে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে।”
প্রশ্ন থাকছে, সরকার গড়ার পরিস্থিতি এলে এই নীতির জোটের প্রধানমন্ত্রী হবেন কে? দেবগৌড়া নিজে এক বার যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নেই বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “মুলায়ম, নীতীশ বা জয়ললিতা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।” |
|
|
|
|
|