|
|
|
|
ভোটেও ধর্মঘটেই ঝুঁকলেন বিমানবন্দর কর্মীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মনোভাবের বদল হল না এত দিনেও।
আট বছর আগে বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে ধর্মঘট ডেকে অচল করা হয় কলকাতা বিমানবন্দর। ধর্মঘটে পরিষেবা ধাক্কা খায় আরও একাধিক বিমানবন্দরে। তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল দেশ-বিদেশে।
কিন্তু শত সমালোচনাতেও মনোভাব যে বদলায়নি, তা ফের স্পষ্ট হয়ে গেল সোমবার। এ বারও সেই বেসরকারিকরণ ঠেকাতে ধর্মঘটে যাওয়ার পক্ষেই রায় দিলেন কলকাতা-সহ দেশের সমস্ত বিমানবন্দরের সাধারণ কর্মীরা। তা-ও ইউনিয়নের নেতাদের কথায় নয়, নিজেরাই সরাসরি ভোট দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সম্প্রতি কলকাতা-সহ দেশের ছ’টি বিমানবন্দর বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সিদ্ধান্ত রুখতে ধর্মঘটে যাওয়া হবে কি না, তা ঠিক করতে সরাসরি ভোটাভুটি করে কর্মী সংগঠনগুলি। সেই ভোটে কর্মীদের সিংহভাই ধর্মঘটের পক্ষে সায় দিয়েছেন।
এ দিন রাত পর্যন্ত দিল্লি-মুম্বই-কলকাতার কর্মীদের ভোটের ফল পাওয়া গিয়েছে। কলকাতার ১০৮৮ জন ভোট দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১০৬৩ জনই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা ধর্মঘট চান। একই অবস্থা দিল্লি-মুম্বইয়ের কর্মীদেরও। দেশের বাকি অংশের ভোটের ফল পেতে মঙ্গলবার সকাল হয়ে যাবে বলে কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে।
যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁরা সকলেই নিচুতলার কর্মী। আট বছর আগে দিল্লি-মুম্বই-কলকাতা-চেন্নাই বিমানবন্দর বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে এঁরাই সরব হয়েছিলেন। এই কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় প্রধানত কলকাতায় তিন দিনের জন্য বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শেষে সেনা নামিয়ে বিমানবন্দর চালু করতে হয়েছিল। কর্মীদের চাপেই সে বার কলকাতা ও চেন্নাই বিমানবন্দরকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া যায়নি। তবে দিল্লি ও মুম্বই বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণ হয়েছিল। পরে বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদে বেসরকারি উদ্যোগে দু’টি বিমানবন্দর তৈরি হয়।
সম্প্রতি কলকাতা ও চেন্নাইয়ের সঙ্গে আমদাবাদ-লখনউ-জয়পুর এবং গুয়াহাটি বিমানবন্দরকেও বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চায় বিমান মন্ত্রক। এ বার কর্মী সংগঠনগুলি সরাসরি ধর্মঘটের পথে না হেঁটে কর্মীদের মনোভাব জানতে ভোটাভুটির আয়োজন করে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় এসে ধর্মঘটের রাজনীতিকে সমর্থন না করার কথা ঘোষণা করেছে। তা ছাড়া বামেরা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা হারানোর পরে কলকাতা-সহ দেশের অন্যত্র বিমানবন্দর কর্মীদের মধ্যে বাম-ঘেঁষা ইউনিয়নের প্রভাবও অনেকটা কমেছে। এই অবস্থায় বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সবক’টি ইউনিয়নকে নিয়ে একটি জয়েন্ট ফোরাম তৈরি হয়েছে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়-কে সেই ফোরামের সর্বভারতীয় চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
এ দিন ভোটের ফল প্রসঙ্গে সৌগতবাবু বলেন, “সাধারণ কর্মীদের রুটি-রুজির প্রশ্ন। তাঁদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে। তাই সব স্তরের কর্মীরাই ধর্মঘটের পক্ষে রায় দিয়েছেন। এ নিয়ে আমরা জয়েন্ট ফোরামে আলোচনা করব।” কর্মী সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য, বিমানবন্দর বেসরকারিকরণ নিয়ে ইতিমধ্যেই চেন্নাই হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। ফলে কেন্দ্র এখনই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারবে না। তা ছাড়া, কিছু দিনের মধ্যেই লোকসভা নির্বাচন। ফলে এই সরকারের পক্ষে বিমানবন্দর বেসরকারিকরণ করা আর সম্ভব হবে না বলেই মনে করেন সৌগতবাবুরা। |
|
|
|
|
|