জেলের কুঠুরি থেকে ফোন যেত বিজ্ঞাপন সংস্থার দফতরে। জোগাড় করা হত বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীর নম্বর। তার পরে সেই ব্যবসায়ীদের কাজের ছুতোয় ডেকে এনে অপহরণ করত দুষ্কৃতীরা। শুক্রবার নিউ আলিপুরের এক ব্যবসায়ীর অপহরণের তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। অপহরণ চক্রের মূল চাঁই সঞ্জিত পুরকায়েত নামে এক যুবককে গ্রেফতারও করেছে লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখা। এই চক্রের বাকিদেরও খোঁজ চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার রামনগরের বাসিন্দা সঞ্জিতকে মাদক বিক্রির অভিযোগে দিন কয়েক আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার পর থেকে আলিপুর জেলে বন্দি রাখা হয়েছিল তাকে। সোমবার সেখান থেকেই তাকে ফের গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, জেলে থাকাকালীন একটি অনলাইন বিজ্ঞাপন সংস্থার দফতরে ফোন করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করত সঞ্জিত। তার পরে নিজেই ওই ব্যবসায়ীদের ফোন করত। ব্যবসা সংক্রান্ত কথা বলার জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় ডেকে পাঠাত। সেখানে পৌঁছনোর পরেই ওই ব্যবসায়ীদের আটক করত কয়েক জন দুষ্কৃতী। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই দুষ্কৃতীরা সঞ্জিতেরই শাগরেদ। তার নির্দেশেই ব্যবসায়ীদের অপহরণ করত তারা। তার পরে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করত ওই দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার এমন ফাঁদে ফেলেই অপহরণ করা হয়েছিল নিউ আলিপুরের এক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবসায়ী প্রবীণ চাঁচরকে। তদন্তকারীদের দাবি, কয়েক লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান তিনি। এর পরেই প্রবীণের পরিবারের পক্ষ থেকে লালবাজারের এক শীর্ষ-কর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়। ওই কর্তার নির্দেশেই তদন্তে নামে গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখা।
লালবাজার সূত্রের খবর, কাজের ছুতোয় ডেকে নিয়ে যাওয়া লোকটাই যে অপহরণের মূল পাণ্ডা, তা বুঝতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। সেই কারণেই প্রবীণের কল ডিটেলস ঘেঁটে ওই ব্যক্তির নম্বর নেওয়া হয়। দেখা যায়, ওই নম্বরটির টাওয়ারের অবস্থান আলিপুর। ওই ফোনটি থেকে মুক্তিপণ চাওয়া নম্বরটিতেও ফোন গিয়েছে। এর পরেই অন্যান্য সূত্র মারফত জানা যায়, জেলে বন্দি থাকা সঞ্জিতই এই চক্রের পাণ্ডা। নিউ আলিপুরের ওই ব্যবসায়ী ছাড়া আরও তিনটি এমন ঘটনার কথা জানতে পেরেছে পুলিশ।
এর আগে যীশু, গুড্ডার মতো দুষ্কৃতীরাও জেলে বসে অপহরণের চক্র চালাত বলে পুলিশ সূত্রের খবর। লালবাজারের এক কর্তার দাবি, জেলে বসে অপরাধচক্রের রমরমা বন্ধ করতে মোবাইল ফোনের উপরে নজরদারি চালানো হয়। আলিপুর জেল এলাকায় বসানো রয়েছে জ্যামারও। তা সত্ত্বেও কী ভাবে সঞ্জিত এই চক্র চালাত, তা নিয়ে খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। জেলে সঞ্জিতের কয়েক জন সহযোগী রয়েছে বলেও লালবাজারের অফিসারেরা জানতে পেরেছেন।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, সঞ্জিতের শাগরেদরা সবাই দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্থানীয় দুষ্কৃতী। আটকে রাখা থেকে মুক্তিপণ আদায়, সবই তারা করত। নিজেকে আড়াল করতে সঞ্জিতই এই ছক সাজিয়েছিল বলে দাবি পুলিশের। |