সকালের মহানগরে নিয়তির দুই বলি
সেতুতে বাসের ধাক্কা, মায়ের কোলেই প্রাণ গেল দু’মাসের শিশুর
সামনের বাসটিকে টপকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন চালক। যাত্রীরা বারবার সতর্ক করলেও কানে তোলেননি। বাসচালকের এই বেপরোয়া মনোভাবের জেরে সোমবার সকালে মায়ের কোলেই প্রাণ গেল দু’মাসের এক শিশুকন্যার। এমনটাই অভিযোগ বাকি জখম যাত্রীদের। পার্ক সার্কাসের চার নম্বর সেতুতে সোমবার সকালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কংক্রিটের রেলিংয়ের উপরে কাত হয়ে যায় বাসটি।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত শিশুটির নাম রাধিকা কুমারী। ধাপার মাঠপুকুর থেকে রাধিকা এবং দু’বছরের ছেলে রাজাকে নিয়ে সকাল আটটা নাগাদ বাসে উঠেছিলেন তাদের মা কিরণদেবী। সঙ্গে ছিলেন দিদিমা এবং এক জন পড়শি। সকলেই ধাপার মাঠপুকুর এলাকার কেএমসি কোয়ার্টার্সে থাকেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন ধরে খুব কাশি হচ্ছিল রাধিকার। তাই তাকে নিয়ে পার্ক সার্কাসের শিশু হাসপাতালে আসছিলেন তাঁরা।

সেতুর রেলিংয়ে পড়ে আছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই বাসের উইন্ডস্ক্রিন।
এই দুর্ঘটনায় জখম হন ১৬ জন যাত্রী। চিকিৎসার জন্য তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ১৫ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দ্রৌপদীদেবী নামে এক মহিলার আঘাত গুরুতর। তিনি হাসপাতালে ভর্তি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পার্ক সার্কাসের চার নম্বর সেতুর পরমা আইল্যান্ডের দিক থেকে তুমুল গতিতে আসছিল নিউ টাউন-পর্ণশ্রী রুটের ভূতল পরিবহণ নিগমের একটি বাস। তার সামনে আরও একটি বাস ছিল। সেই বাসটিকে টপকাতে গিয়ে নিউ টাউন-পর্ণশ্রী রুটের বাসটি সেতুর রেলিংয়ে সজোরে ধাক্কা মারে। ভেঙে যায় কংক্রিটের রেলিং। কাত হয়ে যায় বাসটি। সামনেটা দুমড়ে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায় বাসের কাচ। যাত্রীদের চিৎকারে ছুটে আসেন এলাকার বাসিন্দারা। খবর যায় পুলিশ ও দমকলে। বাসটি যে দিক কাত হয়ে সেতুর সঙ্গে সেঁটে গিয়েছিল, সে দিকেই ছিল বাসটির দরজা। তাই উল্টো দিকের জানলা দিয়ে যাত্রীদের বার করতে হয়।
ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা নাসিম মোল্লা বলেন, “আমরা গিয়ে দেখি কাত হয়ে থাকা বাসটির মধ্যে কিছু যাত্রী রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন। তখনই তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। বাসের মধ্যে দুটো বাচ্চাও ছিল। পরে জানলাম, দু’মাসের শিশুটি মায়ের কোলেই মারা গিয়েছে।”
এ দিন দুপুরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কোলের শিশুকে হারিয়ে শোকে রুদ্ধবাক মা কিরণদেবী। হাসপাতালের মেঝেতে বসে শুধু কেঁদেই চলেছেন। মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে কোমরে চোট লেগেছে তাঁর। চিকিৎসকরা কিরণের চোট পরীক্ষা করেছেন। অন্য আত্মীয়দের কোলে তখন চুপ করে বসে রাধিকার দাদা রাজা।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত শিশুটির মা।
রাধিকার বাবা বন্দিলাল পাসোয়ান খড়দহের একটি সংস্থায় কাজ করেন। সকালেই কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ ন্যাশনাল মেডিক্যালে এসে পৌঁছন। মেয়ের মৃত্যুর খবরে হাসপাতাল চত্বরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। রাধিকার মামা কেদার পাসোয়ান বলেন, ‘‘চিকিৎসার জন্য বেরিয়ে মেয়েটা আর বাড়িই ফিরল না। ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিশুটির দেহ ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটির একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন, সায়েন্স সিটির পর থেকেই বেপরোয়া ভাবে এগোচ্ছিলেন চালক। বেশ কয়েক বার সতর্ক করা হলেও সেই কথা কানেই তোলেননি তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত বাসচালক পলাতক।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় বাসের ধাক্কায় ভেঙে গিয়েছে চার নম্বর সেতুর রেলিং। চারপাশে ছড়িয়েছিটিয়ে জখম যাত্রীদের জুতো, জামা এবং কাচের টুকরো। এই ঘটনার জেরে এ দিন পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট-সহ সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় যানজট হয়। চার নম্বর সেতুতে আটকে পড়ে অনেক গাড়ি। ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলা বারোটার পরে এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

—নিজস্ব চিত্র।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.