|
|
|
|
দুই ‘ম’-এর মহাসঙ্কট |
সরব সব মহল কর্তারা ঘুমিয়ে
রতন চক্রবর্তী • কলকাতা |
ইস্টবেঙ্গলের কাছে পঁচাত্তরের শিল্ডে পাঁচ গোল খাওয়ার লজ্জাও কি পিছনে চলে গেল?
এ বার আইএফএ শিল্ড থেকে বিদায়ে টানা চার বছর ট্রফিহীন মোহনবাগান। ২০১৪-তেই ১২৫ বছরে পা দিতে চলা ক্লাবের ইতিহাসে এ রকম নজিরবিহীন লজ্জার ঘটনায় এই প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র। সেই পাঁচ গোলে হারের বছরও দু’টো ট্রফি জিতেছিল বাগানবরদলৈ ট্রফি এবং দার্জিলিং গোল্ড কাপ।
বিগ্রেডে রাজনৈতিক দলের সমাবেশের হিড়িকে হয়তো রবিবার মোহনবাগান তাঁবুতে আছড়ে পড়তে পারেনি ক্লাব সমর্থকদের কোনও বিক্ষোভ। যায়নি মোমবাতি হাতে কোনও মিছিল। শোনা যায়নি কর্তাদের উদ্দেশ্যে গো-ব্যাক। কিন্তু সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং থেকে পাড়ার রক, চায়ের আড্ডা থেকে উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির অন্দরমহলে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
চিরপ্রতিন্দ্বীর কাছে পাঁচ গোলে হার না, টানা চার বছর ট্রফিহীন থাকা কোনটা বেশি লজ্জার?
“পাঁচ গোলটা একটা ম্যাচ ছিল। একটা দুর্ঘটনা বলতে পারেন। এটা এখন বিশ্ব ফুটবলে দুটো বড় দলের ম্যাচে আকছার হয়। কিন্তু মোহনবাগানের মতো ক্লাব টানা চার বছর ট্রফি পায়নি, এটা অনেক বেশি লজ্জার,” গোয়া থেকে ফোনে বলে দেন সুভাষ ভৌমিক। |
|
কেন এই ধারাবাহিক ব্যার্থতা? অন্ধকার থেকে বেরনোর রাস্তা কী? দেশের একমাত্র কোচ হিসাবে দু’টো ক্লাবকে আই লিগ দেওয়া সুভাষ ফর্মুলা বাতলান“সঠিক প্ল্যানিং দরকার। ঠিক মতো টিম করতে হবে। কোচের হাতে টিম গড়ার দায়িত্ব দিতে হবে। জানি না, করিমকে তা দেওয়া হয়েছিল কি না? কর্তারা টিম করে দিয়ে থাকলে কোচের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। যেমন আমি চার্চিলে করেছিলাম গত বছর।”
ওডাফা-সহ বিদেশি নির্বাচন কি সঠিক ছিল? তা ছাড়া এত নতুন ছেলে? সতর্ক সুভাষ এ বার বলেন, “এটা নিয়ে কিছু বলব না। তবে প্রতি বছর দলে এত পরিবর্তন ক্ষতি করছে। সাফল্য পেতে হলে একটা ‘কোর টিম’ ধরে রাখতে হয়।”
সুভাষ বিতর্ক বাঁচিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেও অমল দত্ত চাঁচাছোলা। “কী ভাবে এই টিম সাফল্য পাবে? আরে, ওখানে তো কর্তারাই টিম তৈরি করে। ওরা ফুটবলের কিস্যু জানে? কোচকে শুধু সই করিয়ে নেয় টিম লিস্টের নীচে। কোচ চাকরি বাঁচানোর ভয়ে সই করে দেয়। ফলে যা হওয়ার তাই-ই হয়েছে।” একদা বাগান কর্তারা এয়ারপোর্টের এক হোটেলে মিষ্টির প্যাকেট হাতে ধরিয়ে অমল দত্তকে ছাঁটাই করে দিয়েছিলেন। এখনও মনে আছে তাঁর। “এই বসু-মিত্ররা তো বাগানটাকে পারিবারিক ক্লাব বানিয়ে ফেলেছে। প্রথম দিকে কিছু সাফল্য পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার পর ক্লাবটাকে নিজেদের জমিদারি ভেবে নিয়েছে। ওদের হাত থেকে মুক্ত না করতে পারলে টিমটা আরও ডুববে। আন্দোলন করতে হবে। মাঠ থেকে তাড়াতে হবে। ওরা তো বাড়ির কুকুর-বেড়ালকেও মোহনবাগানের মেম্বার করে রেখেছে। গণতন্ত্রের এই এক সমস্যা। তবে ক্লাবের যা অবস্থা আর সমর্থকদের যা ক্ষোভ দেখছি তাতে কিন্তু আজ না হোক কাল, এই কর্তারা পালাবেই।” |
অন্ধকার বাগান |
• ট্রফিহীন ১৩৫৫ দিন। (২০১২-এ এক ম্যাচের টুর্নামেন্ট এয়ারলাইন্স কাপ চ্যাম্পিয়ন হয় অবশ্য, যার কোনও গুরুত্ব নেই।)
• শেষ ট্রফি ২৫ মে, ২০১০। ইউনাইটেডকে ১-০ (পেনাল্টি গোল) হারিয়ে কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন।
• ডার্বি পারফরম্যান্স ১৩৫৫ দিনের মধ্যে ১৪ বার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলে জয় ৩, হার ৮, ড্র ৩।
• আই লিগ পারফরম্যান্স ’০৯-১০ পঞ্চম, ’১০-১১ ষষ্ঠ, ’১১-১২ চতুর্থ, ’১২-১৩ দশম। |
তথ্য: হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। |
|
কিন্তু দলটার সাফল্যের জন্য অমল-ফর্মুলা কী? “দলটাকে প্রথমেই ব্যালান্সড করতে হবে। ভাল বিদেশি দরকার। ওরাই ফ্যাক্টর হয়ে যাচ্ছে। তিন-চার জন প্রাক্তনকে জড়াতে হবে টিমের সঙ্গে। কোচের উপর আস্থা রাখতে হবে,” বলে দেন বহু চড়াই-উতরাই পেরনো প্রবীণ কোচ।
পঁচাত্তরে সেই পাঁচ গোলের ম্যাচের পর সুব্রত ভট্টাচার্যের মতো বাগানের কোনও কোনও ফুটবলার গঙ্গায় নৌকায় রাত কাটিয়েছিলেন। আবার এক দিন পরেই বরদলৈ খেলতে গুয়াহাটি গিয়ে ফিরেছিলেন ট্রফি হাতে। এ বার ওডাফাদের সেই সুযোগও নেই। বেঁচে থাকা টুনার্মেন্ট আই লিগে অনেক পিছিয়ে বাগান। ফলে তীব্র হতাশা-ক্ষোভে ফুটছেন বাগান সমর্থকরা। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?
এ বছরের শেষেই নির্বাচন বাগানে। ক্লাবের এই দুর্দিনে আপনি কি ফের হাল ধরতে ফিরবেন? প্রাক্তন রাজ্যপাল ও বিচারপতি শ্যামল সেন বললেন, “আবার মোহনবাগান ক্লাবে যাব? আমি কেন, যে কোনও ভদ্রলোকই এখন ওই ক্লাবে যেতে ভয় পায়। পরিবেশটাই নষ্ট করে দিয়েছে ওরা। বাগান শুকিয়ে গিয়েছে। গ্যালারি ঠিক হয়েছে? তাঁবু ঠিক হয়েছে? লনে সুন্দর বাগানটা আছে? সব ধ্বংসস্তুপ। আমি আদালতের নির্দেশে কাজ করতে গিয়েছিলাম। তাতেও আমার পিছনে লেগে গেল। নানা ভাবে সমস্যা তৈরি করল। তা-ও ট্রফি পেয়েছিলাম। রানার্স হয়েছিলাম মনে হয় চারটে টুর্নামেন্টে।”
তবে গত তিন বছর ব্যর্থতার পরেও এ রকম ক্ষোভের আগুন জ্বলেছে বাগানে। আবার কালের নিয়মে কিছু দিন পর নিভেও গিয়েছে। কর্তারা তাই নিশ্চুপ। তাঁরা জানেন ভোট পকেটে থাকলে সব আগুনকেই নেভানো যায়! |
পুরনো খবর: করিমের ভুল আর পোস্টে আটকাল ট্রফি ভাগ্য |
|
|
|
|
|