দুই ‘ম’-এর মহাসঙ্কট
চাই পরিবর্তনের ঝড়
শুরুতেই একটা ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা বলব। মোহনবাগান খারাপ খেলে কোনও ট্রফি থেকে ছিটকে গেলে আমার চোখমুখ মোটেই উজ্জ্বল হয় না। সতেরো বছর সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে খেলায় এই ক্লাব আমার হৃদয়ে। মোহনবাগান ট্রফি না পেলে বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। কান্না দলা পাকায় গলার কাছে।
ভাবতেই পারছি না, আমার ক্লাব টানা চার বছর কোনও ট্রফি জেতেনি। আরে, উনসত্তরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে পঁচাত্তরের ৬ জানুয়ারি মোহনবাগান একটা ম্যাচেও ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে পারেনি। কিন্তু সেই দুর্দিনেও মোহনবাগান ট্রফি জিতেছে। আজ পারছে না কেন?
আমি আর প্রশান্ত (বন্দ্যোপাধ্যায়) দু’বছর আগে আই লিগে মোহনবাগানকে পয়েন্ট টেবিলে খুব খারাপ জায়গা থেকে টেনে তুলে প্রথম পাঁচে রেখেছিলাম। তখন ক্লাব প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ট্রফি না পেলে কিন্তু কোচ বদল হবে। তা হলে করিম বেঞ্চারিফা সারা বছর জুড়ে কী ট্রফি জিতলেন যে, তাঁকে এখনও বদল করা হল না? ফুটবলার বেছেছেন করিম-ই। দুর্গাপুরে আবাসিক শিবির করিয়েছেন। তবু কেন ওডাফা সারা বছর জুড়ে পেশির চোটে ভুগে গেল? প্লেয়ার চোট পেলে তাকে কী ভাবে সুস্থ করে তুলে মাঠে ফেরাতে হবে? কী রিহ্যাব হবে? তার পর সেই প্লেয়ারকে কী ভাবে ব্যবহার করতে হবেএ সব তো কোচকেই জানতে হয়। করিম কি জানতেন না কলকাতা লিগ, ফেড কাপে ব্যর্থ মোহনবাগানের এ মরসুমে ট্রফি জেতার একমাত্র উপায় আইএফএ শিল্ড? যদি জানতেন, তা হলে আনফিট ওডাফাকে মহমেডানের বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি মাঠে নামিয়ে দিলেন কেন? কাকে খুশি করতে এ রকম পদক্ষেপ? আবার কানাঘুষো শুনছি, ওডাফা নাকি নিজেই নেমেছিল! তা হলে কি মোহনবাগানের মতো টিমের উপর কোচের নিয়ন্ত্রণ নেই? কতটা অপেশাদার হয়ে পড়লে একটা ঐতিহ্যশালী ক্লাবের এমন দশা হয়!
আসলে দোষটা বেশি তাঁদের, যাঁরা দ্বিতীয় বার বেছে নিয়ে এসেছেন এই সর্বজ্ঞ বিদেশি কোচকে। যে লোকটা সিঙ্গাপুর, গোয়া এমনকী নিজের দেশ (মরক্কো) সব জায়গা থেকে বিতাড়িত, তাঁর থেকে অন্তত যোগ্য কোচ এই বাংলাতেই মনে হয় অনেকে আছে। এর চেয়েও খারাপ দল নিয়ে কিন্তু সুভাষ ভৌমিক, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যরা কোচিং করিয়েছে মোহনবাগানে। কিন্তু ক্লাবকর্তারা আস্থা রেখেছেন এখন এমন একজনের উপর, যাঁর মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ হওয়ারও যোগ্যতা আছে কি না সন্দেহ। বরং ক্লাব ওকে জনসংযোগ কর্তার কাজটা দিতে পারত। করিম ভদ্রলোকটিকে যে ভাবে মিডিয়া-ভজনা করতে দেখি!
মোহনবাগান কর্তারা দিনের পর দিন মাঠে আসেন না। জানেন না কোন ফুটবলারের কী কন্ডিশন! ক্লাবের প্রাক্তনদের এই টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো দেখতে বলতেও কর্তাদের আপত্তি। এমনকী বড় ম্যাচের আগে প্রাক্তন ফুটবলার তাঁবুতে গেলে কোচকে লেলিয়ে দিয়ে বিতর্ক তুলতে তাঁরা সিদ্ধহস্ত। দু’যুগ ধরে ক্লাব প্রশাসন চালানোর নামে যা হচ্ছে তা স্বৈরতন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। তিন-চার জন কর্তা সব কিছু চালনা করেন। কিন্তু জানেন না পেশাদারি মানসিকতা কাকে বলে! ক্লাব, তাঁবু, লন নিয়ে আগের গর্বটাও এখন পাশের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে সরে গিয়েছে। এ ভাবে কোটি কোটি মোহনবাগান সমর্থকের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার ওঁদের কে দিল?
মনে পড়ছে, একাশিতে ডুরান্ড ফাইনালে মহমেডানের বিরুদ্ধে নামার আগে প্রদীপ চৌধুরীর চোট ছিল। ধীরেনদা (দে) ডেকে আনলেন চুনী গোস্বামীকে। চুনীদা বলে দিলেন, “শ্যাম স্টপারে খেলবে।” আমার সঙ্গে স্টপারে খেলল শ্যাম থাপা। জিতেও গেলাম। চুনীদারা আজও আছেন। কিন্তু তারও আগে সেই তাতানোর মতো ক্লাবকর্তা নেই মোহনবাগানে!
তা হলে এই কর্তাদের রাখার চেয়ে একটা পরিবর্তন চাইলে সদস্যরা কি ভুল করবেন? আমার তো মনে হয়, না।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.