কাঁকরভিটার অবাধ বাণিজ্যে কপালে ভাঁজ গোয়েন্দাদের
ন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য এবং প্রায় অনুমতিহীন যাতায়াতের সুযোগে নেপালের কাঁকরভিটা এলাকা ক্রমেই জঙ্গিদের নিরাপদ চলাচল বা ‘সেফ প্যাসেজ’-এর আখড়া হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
সীমান্ত, কিন্তু কাঁটাতারের বেড়া নেই। কার্বাইন হাতে উর্দিধারীরা রয়েছেন, কিন্তু আগুন্তুক দেখলে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদের রেওয়াজ নেই। রিকশায় চেপে পৌঁছে যাওয়া যায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে। ভ্যানরিকশা এবং সাইকেলে বস্তা চাপিয়ে আর্ন্তজাতিক সীমানা পেরিয়ে অনায়াসে পার হয়ে যাচ্ছে কমলালেবু থেকে আটা, নুন সবই।
আর এই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে জঙ্গিগোষ্ঠী। রাজ্য গোয়েন্দা দফতর এ ব্যাপারে আগেই সতর্ক করেছিল। সম্প্রতি কেএলও জঙ্গিরা সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশ কয়েকটি নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। উদ্বেগ বেড়েছে তাতেই।
শিলিগুড়ি মহকুমার খড়িবাড়ি ব্লকের রানিগঞ্জ-পানিশালি গ্রাম পঞ্চায়েত। গ্রামের শেষ প্রান্তের জনপদ পানিট্যাঙ্কি। সেখানকার বাস স্ট্যান্ডে সার দিয়ে দাঁড়ানো রিকশা। একটি করে বাস থামছে, রিকশাচালকদের মধ্যে চলছে যাত্রীটানার প্রতিযোগিতা। পানিট্যাঙ্কি এবং নেপালের কাঁকরভিটার মধ্যে যোগসূত্রে মেচি নদীর সেতু। পানিট্যাঙ্কির দিকে সেতুর মুখে পুলিশ এবং সশস্ত্র সীমা বলের (এসএসবি) ফাঁড়ি। দুই ফাঁড়ি পার হয়ে গেল রিকশা। সেতুর মুখে পুলিশ এবং এসএসবির জওয়ানরা থাকলেও, কোনও বাধা নেই। যদিও, একটি বস্তা বোঝাই রিকশা দেখে এগিয়ে এলেন এসএসবি জওয়ান, প্রশ্ন করলেন, কেয়া হ্যায়?
সাব, কাপড়া হ্যায়।
হাতের লাঠি দিয়ে বার দুয়েক বস্তায় আঘাত করে বললেন, “ঠিক হ্যায়, যাও।”
রিকশা এগিয়ে গেল মেচি সেতু দিয়ে। সেতুর অন্যপ্রান্তে সুবিশাল তোরণ জানান দিচ্ছে, ‘নেপালে আপনাকে স্বাগত’। তোরণের সামনে নেপাল সেনা বাহিনী এবং পুলিশের পাহাড়া। কংক্রিটের ‘বাঙ্কারে’ বন্দুক নিয়ে নজরদারি। যদিও সেখানেও যাত্রীবাহী রিকশাকে কোনও প্রশ্ন নেই। বস্তা বোঝাই রিকশা কিংবা সাইকেলে, সেতুর এ পারের মতোই সাদামাটা প্রশ্ন। নেপাল স্বাগতের তোরণ থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে কাকঁরভিটা ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে দাঁড়াল রিকশা। মাত্র ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে পৌঁছে যাওয়া নেপালে। সেখান থেকে যাওয়া যাবে কাঠমান্ডু থেকে বীরাটনগর যেখানে খুশি। অবাধ বাণিজ্যের সুযোগে, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই কয়েকশো বাসিন্দা নেপালের কাঁকরভিটা, ধূলাবাড়ি, ঝাপা, মেচি হাসপাতাল লাগোয়া এলাকায় গিয়ে ফুচকা, তেলেভাজা, পোশাক বিক্রি করে সন্ধ্যেবেলা ফিরে আসেন। তেমনিই কমলালেবু-সহ বিবিধ জিনিস নিয়ে সকালে শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় বিক্রির জন্য চলে আসেন নেপালের বাসিন্দারা।
১৯৫০’র জুলাই মাসের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ৬ এবং ৭ নম্বর ‘আর্টিকেল’ অনুযায়ী বাসিন্দাদের দু’দেশের মধ্যে অবাধ যাতায়াতের অধিকার দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যেও কোনও বিধিনিষেধ নেই। সেই চুক্তির কারণেই, ১৫ টাকায় রিকশা ভাড়ায় অথবা হেঁটেই দিনে যতবার ইচ্ছে পারাপার করা যায় আর্ন্তজাতিক সীমান্ত।
এর ফলে সুযোগ বেড়েছে জঙ্গি কার্যকলাপের। সম্প্রতি নেপাল সীমান্ত থেকে ধরা পড়েছে উত্তরবঙ্গ এবং অসমে নতুন করে তৎপর হয়ে ওঠা কেএলওর দুই শীর্ষ নেতা তরুণ থাপা এবং ইকবাল সিদ্দিকি। যাঁরা জলপাইগুড়ি বিস্ফোরণ কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত। গত অগস্ট মাসে আলিপুরদুয়ারে শক্তিশালী বোমা রাখার ঘটনাতেও অভিযুক্ত তাঁরা। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ ব্যবসায়ীদের থেকে তোলাবাজির অভিযোগও রয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ির বজরাপাড়ায় বিস্ফোরণের পরে দু’জনেই নেপালে গিয়ে আশ্রয় নেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। সে দেশে তাঁদের থাকার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, জলপাইগুড়ি জেলা থেকেই নেপালে ব্যবসা করতে যাওয়া এক ফুচকা বিক্রেতা। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ। কেএলও-এর আরও দুই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি সীমান্ত পার হয়ে আত্মগোপন করে রয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই দুই ঘটনাই আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে সাধারণ বাসিন্দা থেকে প্রশাসনের।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.