আর শুধু সেলাই মেশিন বা উল বোনা মেশিন চালানোর প্রশিক্ষণ নয়। হোমের মেয়েদের স্বনির্ভরতায় কারিগরি প্রশিক্ষণ দিতে এ বার পুরোদস্তুর আইটিআই কলেজ খুলতে চলেছে রাজ্য সরকার।
আবাসিক এই কলেজে সরকারি ও বেসরকারি হোমের মেয়েরা হাতেকলমে কাজ শেখার সুযোগ পাবে। নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরই এই মেয়েদের ভর্তির ব্যবস্থা করবে। ২০১৫ সালে অগস্ট মাসের মধ্যেই এই আইটিআই চালু হয়ে যাবে বলে কারিগরি দফতর সূত্রের খবর। কারিগরি শিক্ষা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “হোমের মেয়েদের স্বনির্ভর করতে আবাসিক আইটিআই তৈরি হচ্ছে। সারা দেশে হোমের মেয়েদের জন্য এমন কলেজ আর আছে বলে আমার জানা নেই।”
কারিগরি প্রশিক্ষণমূলক পড়াশোনার জগতে আইটিআইয়ের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। জেলায় জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি ব্লকে আইটিআই তৈরির কথাও বলেছেন। এই পরিস্থিতিতে হোমের মেয়েদের জন্য আইটিআই তৈরির উদ্যোগ অত্যন্ত বাস্তবসম্মত বলেই সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে। তবে হোমের মেয়েদের এই কলেজে প্রথাগত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাইরে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তার মধ্যে যেমন থাকবে আয়া বা বিউটিশিয়ান কোর্স, তেমনই থাকবে ডাটা অপারেটরের প্রশিক্ষণ। লক্ষ্য একটাই প্রশিক্ষণ শেষে যাতে সহজেই কাজ মেলে।
|
লক্ষ্য স্বনির্ভরতা |
• এই আইটিআইয়ে নানা ‘নন ইঞ্জিনিয়ারিং’ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
• আয়ার কাজ, বিউটিশিয়ান কোর্স, মোবাইল মেরামত, ডাটা অপারেটর, স্পেশ্যাল এডুকেটর বা হসপিটালিটি সার্ভিসের প্রশিক্ষণ পাবেন হোমের মেয়েরা।
• রাজ্যের ১৮টি সরকারি হোম ও ২৮টি বেসরকারি হোমের মেয়েদের হস্টেলে থেকে হাতেকলমে কাজ শেখার সুযোগ।
• ২০১৫ সালের অগস্টে এই আইটিআই চালুর কথা। |
|
কলকাতায় এস এন ব্যানার্জি রোডে প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘আইটিআই ফর ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড বয়েজ অ্যান্ড গার্লস’ নামে একটি কলেজ আছে। এই ভবনেই হোমের মেয়েটি আইটিআই চালু হবে বলে কারিগরি শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর। প্রতিবন্ধী কলেজ ভবনের তিন তলায় ‘ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ টেকনিক্যাল এডুকেশন’ এবং চার তলায় ‘ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং’-এর দফতর রয়েছে। কারিগরি দফতর সূত্রে খবর, এই দুটি অফিস রাজারহাটে কারিগরি দফতরের নিজস্ব ভবনে উঠে যাবে। সেই জায়গাতেই চালু হবে হোমের মেয়েদের আইটিআই। নতুন কলেজটি পরিচালনার দায়িত্বেও থাকবেন প্রতিবন্ধী কলেজটির কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবন্ধীদের আইটিআইয়ে দেড়শো আসনের যে ছাত্রাবাস তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে ৫০টি আসন ছাত্রীদের। এই ৫০টি আসনের মধ্যে ৪০টি হোমের মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। সেখানে থেকে পুরোপুরি সরকারি খরচে আবাসিক আইটিআইয়ে পড়তে পারবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সরকারি ও বেসরকারি হোমের মেয়েরা। হোমের আবাসিক সব ধরনের মেয়েরাই যাতে এখানে পড়তে পারে, সে কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হবে ‘সিলেবাস’। ঠিক করা হবে ‘ট্রেড’। অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণর জন্য যেমন থাকবে ‘আয়া’ বা ‘বেড সাইড অ্যাটেনডেন্ট’-এর কোর্স, তেমনই মাধ্যমিক পাশ মেয়েদের জন্য থাকবে ‘বিউটিশিয়ান অ্যান্ড হেয়ার ড্রেসিং কোর্স’। রাজ্যের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিংয়ের ডিরেক্টর হরিপ্রসন্ন দে বলেন,“আমরা এমন ট্রেড বাছতে চাইছি যেগুলির চাকরির বাজারে চাহিদা আছে। নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের সঙ্গে আলোচনা করেই তা স্থির করা হবে।”
বিষয়টি নিয়ে উৎসাহী নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরও। দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “এত দিন সেই সেলাই মেশিন আর উল বোনা মেশিনের প্রশিক্ষণ ছাড়া ওদের জন্য তেমন কিছুই করা হয়নি। অথচ এখন এই সব প্রশিক্ষণ নিয়ে তেমন কাজের সুযোগ নেই। আমরা সেই বিষয়টি নজরে রাখছি। আমাদের লক্ষ্য প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর যেন ওই মেয়েদের কাজের জন্য বসে না থাকতে হয়।” শশীদেবী জানিয়েছেন, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ছাড়াও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য স্পেশ্যাল এডুকেটর, মোবাইল রিপেয়ারিং, শপিং মল, হোটেল-রেস্টুরেন্টের চাহিদা অনুযায়ী -সহ একাধিক প্রশিক্ষণের কথা ভাবা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি পাওয়ার উপর। হরিপ্রসন্নবাবুর কথায়, “কর্মসংস্থানের জন্য আমরা এফআইসিসি, আই, ফিকি, বিসিসিআই-এর মতো একাধিক শিল্পপতিদের সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”
এই কলেজ চালু হলে হোমের মেয়েদের জীবন পাল্টে দেওয়ার একটা সুযোগ মিলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। নদিয়া জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন রিনা মুখোপাধ্যায় বলেন, “আইনি ও নিরাপত্তার কারণে হোমের মেয়েদের বাইরে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগ তেমন নেই। ওদের জন্য আবাসিক আইটিআই হলে ওরা সমাজে প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাবে।” |