ডিপোর জমি লিজ দিয়ে দ্বিগুণেরও বেশি আয় ট্রামের
লকাতায় ট্রাম কোম্পানির (সিটিসি) বিভিন্ন ডিপোর উদ্বৃত্ত জমি বেসরকারি সংস্থাকে দীর্ঘমেয়াদি লিজ দিয়ে আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য সরকার। সেই পথে হেঁটে প্রথম দফায় ২৭ কোটি টাকা নিজেদের কোষাগারে তুলল পরিবহণ দফতর। ওই টাকায় কর্মীদের স্বেচ্ছাবসরের পাশাপাশি সংস্থাকে চাঙ্গা করার প্রক্রিয়াও শুরু হবে বলে জানান পরিবহণকর্তারা।
গত নভেম্বরে টালিগঞ্জ, বেলগাছিয়া, শ্যামবাজার, কালীঘাট, খিদিরপুর ও গ্যালিফ স্ট্রিট— সিটিসি এই ছ’টি ডিপোর মোট ৩৭৩ কাঠা উদ্বৃত্ত জমি লিজে দেওয়ার আগ্রহপত্র (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) চেয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল পরিবহণ দফতর। প্রথম তিনটির ক্ষেত্রে সে ভাবে সাড়া না মিললেও শেষের তিনটি ডিপোর জমি চেয়ে আবেদন জানায় চারটি সংস্থা। তাদের মধ্যে সিইএসসি-ই সর্বোচ্চ দাম দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। শনিবার তিনি বলেন, “তিনটি ডিপোর প্রায় ৫০ কাঠা জমির জন্য সিইএসসি দেবে ২৭ কোটিরও বেশি টাকা। তাই তাদের হাতেই ওই তিনটি ডিপোর জমি তুলে দেওয়া হচ্ছে।”
উদ্বৃত্ত জমি লিজ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে কাঠাপ্রতি ন্যূনতম দাম বেঁধে দিয়েছিল পরিবহণ দফতর। দেখা যাচ্ছে, দরপত্র ডেকে জমি লিজ দিয়ে তার আড়াই গুণেরও বেশি দাম পেয়েছে সরকার। লিজ চুক্তি অনুযায়ী, ওই তিন ডিপোর মোট ৫০ কাঠা জমি পাচ্ছে সিইএসসি। এ জন্য ২৭ কোটি টাকা দেবে তারা। নির্মাণ-শিল্পমহল সূত্রের খবর, বর্তমানে খিদিরপুর ডিপো এলাকায় কাঠাপ্রতি ৫৫-৬০ লক্ষ টাকা, কালীঘাট ডিপো এলাকায় ৬০-৬৫ লক্ষ টাকা এবং গ্যালিফ স্ট্রিট ডিপো এলাকায় ৪০-৪৫ লক্ষ টাকায় জমি বিক্রি হচ্ছে। পরিবহণমন্ত্রী জানান, তিনটি ডিপোর জমি লিজ-চুক্তিতে দেওয়া হয়েছে গড়ে কাঠাপ্রতি ৫৫ লক্ষ টাকায়।
লিজ দেওয়া হল
  ডিপো কাঠা দাম
খিদিরপুর ২১.৮৮ ১৩.২১*
কালীঘাট ১২.৩৩ ৮.০১
গ্যালিফ স্ট্রিট ১৪.৯৫ ৬.৫১
* কোটি টাকা, সূত্র: পরিবহণ দফতর
এখনও লিজ হয়নি
• শ্যামবাজার ডিপো • টালিগঞ্জ ডিপো • বেলগাছিয়া ডিপো
শহরের মধ্যে এতটা জমি পেয়ে খুশি সিইএসসি কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, কলকাতায় একাধিক নতুন বিদ্যুৎ সাবস্টেশন তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও জমির অভাবে তা কার্যকর করা যাচ্ছিল না। এক কর্তা বলেন, “ওখানে এখনই হয়তো সাবস্টেশন তৈরি হবে না। তবে আগামী দিনে বিদ্যুতের চাহিদা যে হারে বাড়বে, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ওই জমিতে সাবস্টেশনই তৈরি হবে।” ওই কর্তা জানান, সাবস্টেশন ও শিল্পের প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরি করার জন্য সিইএসসি ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ তৈরি করবে। এবং সেই লক্ষে শহরে আরও জমি পেতে ভবিষ্যতে সরকারের ডাকা দরপত্রে অংশগ্রহণ করবে তারা।
সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বিভিন্ন নিগমের ৯৭৬ জন স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন। তাঁদের পেনশন ও গ্র্যাচুইটি বাবদ ইতিমধ্যে ৩৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে অর্থ দফতর। কিন্তু যে সংখ্যক কর্মী স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেছেন, তাঁদের পেনশন ও গ্রাচুইটির টাকা মেটাতে আরও এক হাজার কোটি টাকা দরকার। জমি বিক্রির টাকায় ওই কাজ গতি পাবে বলে জানান পরিবহণকর্তারা। পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “লিজ-চুক্তিতে জমি বিক্রি করে আয় বাড়ানো ছাড়া উদ্বৃত্ত কর্মীদের অন্য অফিসে বদলি ও একাধিক নিগমকে একই ছাদের তলায় এনে খরচ কমানোর পরিকল্পনাও হয়েছে।”
কিন্তু কেন অন্য তিনটি জমি কিনতে আগ্রহ দেখাল না বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি? পরিবহণ দফতরের একাংশ বলছে, শ্যামবাজার ডিপোকে ইতিমধ্যেই ‘হেরিটেজ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। হেরিজেট অঞ্চল নিয়ে বিতর্ক থাকার কারণে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি অনীহা দেখিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কোন পথে এগোনো যায়, তা জানতে পুরসভার হেরিটেজ কমিটির কাছে আবেদন জানিয়েছে পরিবহণ দফতর। বাকি ডিপোগুলির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক মহলের অনীহার প্রধান কারণ হিসেবে বিশ্ব বাজারের মন্দা এবং রাজ্যে লগ্নি টানার ক্ষেত্রেও মন্দাকেই ভাবা হচ্ছে। এই দু’টি ডিপোয় অন্যান্য ডিপোর তুলনায় জমির এলাকা অনেক বেশি। তাই বেশি অঙ্কের টাকা আটকে থাকার আশঙ্কাও এর কারণ হতে পারে। পরিবহণ দফতরের একাধিক কর্তার বক্তব্য, জমি লিজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার যে সব শর্ত দিয়েছে, সেগুলির সরলীকরণ চাইছে বাণিজ্যিক মহল।
উদ্বৃত্ত জমি নেওয়ার জন্য আগ্রহ তৈরি করতে ইতিমধ্যেই অবশ্য লিজ-চুক্তির শর্ত অনেকটা শিথিল করেছে রাজ্য। যেমন, শহরাঞ্চলে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন অনুযায়ী সাড়ে সাত কাঠার বেশি ফাঁকা জমি রাখার অনুমতি নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তার অনুমোদন দেবে সরকার। ৯৯ বছরের দীর্ঘমেয়াদি লিজ-চুক্তিতে উদ্বৃত্ত জমি বিক্রি করা হবে। চুক্তি অনুযায়ী, জমির মালিক অন্য কাউকে আবার জমি হস্তান্তর (সাব-লিজ) করতে পারবে। প্রথম ধাপে সিটিসি-র চিহ্নিত ছ’টি ডিপোয় ইতিমধ্যেই সিলিংয়ের বেশি জমি রাখার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভার সাব-কমিটি।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.