মা-মেয়ের পচাগলা দেহ উদ্ধার হল গড়িয়ায় ফ্ল্যাটে
পাঁচ দিন ধরে ভেতর থেকে বন্ধ ছিল গড়িয়ার আতাবাগানের ওই ফ্ল্যাটের দরজা। ডেকে সাড়া মেলেনি। মোবাইল ফোনও বন্ধ। শনিবার সকালে পচা গন্ধ পেয়ে থানায় খবর দেন বাড়িওয়ালা। বোড়াল মেন রোডে ওই তিন তলার ফ্ল্যাটে বাঁশদ্রোণী থানার পুলিশ দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। দেখা গেল, বিছানায় পড়ে রয়েছে মা ও মেয়ের পচাগলা দেহ। প্রাথমিক তদন্তে তাঁদের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পুলিশ পায়নি। সেই সঙ্গে উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোট, যাতে লেখা ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’ ওই দু’টি মৃতদেহের পাশে একটি কাচের গ্লাসে সাদা তরলের অবশেষ মিলেছে। সব মিলিয়ে তদন্তকারীদের অনুমান, মিতা চক্রবর্তী (৫৩) ও তাঁর মেয়ে মেহুলি চক্রবর্তী (২২) কড়া ঘুমের ওষুধ বা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
কিন্তু কেন তাঁরা এই পথ বাছলেন? গোয়েন্দারা জেনেছেন, গড়িয়াহাটের একটি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মেহুলি কিডনির সমস্যা ও মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। কোনও শক্ত খাবার তিনি খেতে পারতেন না। মা-মেয়ের দিন গুজরান হত মিতাদেবীর প্রয়াত স্বামী, সরকারি কর্মচারী বিষ্ণুপদ চক্রবর্তীর পেনশনের টাকায়। মা-মেয়ে কেউই লোক জনের সঙ্গে কার্যত মেলামেশা করতেন না বলে পুলিশ জেনেছে। পুলিশের বক্তব্য, আত্মহত্যার পিছনে মেহুলির অসুস্থতা ও সেই সঙ্গে আর্থিক অনটনও কাজ করে থাকতে পারে। মেয়ের অসুস্থতার জন্য মিতাদেবীও অবসাদে ভুগছিলেন বলে পড়শিরা পুলিশকে জানিয়েছেন।

আতাবাগানের ফ্ল্যাট থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উদ্ধার হওয়া দেহ। —নিজস্ব চিত্র।
তদন্তকারীদের সন্দেহ, ২ ফেব্রুয়ারি রাতে মা ও মেয়ে আত্মহত্যা করেন। ফ্ল্যাটের যে ঘরের খাটে দু’টি দেহ পড়ে ছিল, সেই ঘরের আলো জ্বলছিল। ৩ তারিখের দৈনিক সংবাদপত্র ওই ফ্ল্যাটের দরজার গ্রিলে গোঁজা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা ওই দিন সংবাদপত্র নেননি দেখে সংবাদপত্র বিক্রেতা পরবর্তী দিনগুলিতে আর সংবাদপত্র দেননি বলে পুলিশ জানিয়েছে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, ২ তারিখ সন্ধ্যায় আবাসনের সামনেই এক কেবল্ ব্যবসায়ীকে টাকা নিতে আসতে বলেন মিতাদেবী। তার পর আর কেউ তাঁকে দেখেননি।
পুলিশ জানায়, আতাবাগানের ওই চার তলা আবাসনের তিন তলার ওই তিন কামরার ফ্ল্যাটে মাসিক চার হাজার টাকা ভাড়ায় মা ও মেয়ে গত বছরের মে মাসে থাকা শুরু করেন। ১১ মাসের চুক্তিতে তাঁরা ৭০০ স্কোয়্যার ফুটের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। তার আগে তাঁরা সোনারপুরের অধিকারীপাড়ায় ভাড়া থাকতেন। বাড়িওয়ালা দীপঙ্কর দে জানান, প্রতি মাসের ৩ তারিখ মিতাদেবী ভাড়া দিতেন। দীপঙ্করবাবুর কথায়, “গত রবিবার, ২ তারিখ রাতে মিতা দেবীর মোবাইলে ফোন করি। ফোন বন্ধ ছিল। পর দিন সকালে ভাড়া নিতে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ডাকাডাকি করেও সাড়া মেলেনি।” দীপঙ্করবাবু জানান, “এর পরেও বেশ কয়েক বার ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি দরজা একই ভাবে ভিতর থেকে বন্ধ। বার বার ফোন করলেও মোবাইল সেই সুইচ্ড অফ-ই ছিল। ওই ব্যক্তির কথায়, “শনিবার আবার গিয়ে দেখি, দরজা সেই বন্ধই রয়েছে। ঘর থেকে পচা গন্ধ আসছে। তখন বাঁশদ্রোণী থানায় খবর দিই।”
মিতাদেবীদের এক প্রতিবেশী মিন্টু দাস বলেন, “আমাদের কারও সঙ্গেই মা-মেয়ের তেমন বাক্যালাপ ছিল না। অধিকাংশ সময়েই ওঁদের ফ্ল্যাট ভিতর থেকে বন্ধ থাকত।”
পুলিশ দরজা ভেঙে ঢুকে দেখে, দু’টি দেহ চিত হয়ে পড়ে রয়েছে। বিছানার পাশের একটি টেবিলে ঢাকা দেওয়া ছিল দু’জনের খাবার। মা-মেয়ের পচাগলা দেহে এবং ঘরের মেঝেতে পোকা।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘর থেকে একটি মোবাইল ফোন ও দু’জনের সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র পাওয়া গিয়েছে। মোবাইল ফোনটির কনট্যাক্ট লিস্ট-এ একটি নম্বর মিলেছে। কিন্তু সেই নম্বরটিতে যোগাযোগ করে দেখা গিয়েছে সেটি বন্ধ। ভোটার পরিচয়পত্রে সোনারপুরের যে ঠিকানা রয়েছে, সেখানেও পুলিশ খোঁজখবর করছে।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “মিতা চক্রবর্তীর কোনও আত্মীয়কে পাওয়া দরকার। কেন তাঁরা কারও সঙ্গে মিশতেন না, তা জানতে হবে।” ওই ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া গ্লাসে রাখা তরল পরীক্ষার জন্য ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দ্বারস্থ হচ্ছে পুলিশ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.