দগ্ধ ধর্ষিতার মৃত্যু -তদন্তে ডাক রসায়নবিদদের
ধ্যমগ্রাম -কাণ্ডে গণধর্ষিতা কিশোরীর অপমৃত্যুর তদন্তে রসায়নবিদদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে। মৃত্যুটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতেই রসায়নবিদদের মতামত অত্যন্ত জরুরি বলে গোয়েন্দা -সূত্রে জানানো হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য : ঘটনাস্থলে সাধারণ পুলিশি অনুসন্ধান, এমনকী ফরেন্সিক তদন্তেও এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য -প্রমাণ অধরা থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা, যার হদিস মিলতে পারে রাসায়নিক পরীক্ষায়। ক্ষেত্রেও সেই আশায় রসায়নবিদদের দ্বারস্থ হয়েছে সিআইডি। বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সিআইডি -সূত্রের দাবি, মেয়েটি নিজের গায়ে দাহ্য তরল ঢেলে তার পরে আগুন ধরিয়েছিল, নাকি অন্য কেউ তার গায়ে দাহ্য তরল ফেলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল, সে সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে রসায়নবিদদের রিপোর্টে। কী রকম?
এক গোয়েন্দা -কর্তার ব্যাখ্যা, “প্রথমত, আত্মহত্যা করতে গেলে সাধারণত সেই ব্যক্তি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজের গায়ে দাহ্য তরল ঢেলে দেয়। সে ক্ষেত্রে আশপাশের বেশি জায়গায় তরলটির না -ছড়ানোরই কথা। কিন্তু তাকে পুড়িয়ে মারতে চাইলে ঘাতকেরা সাধারণত তার গায়ে কেরোসিন বা পেট্রোল ছিটিয়ে দেয়। তখন বেশি জায়গা জুড়ে দাহ্য তরল ছড়িয়ে পড়বে।”
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে রসায়নবিদেরা এক বিশেষ রাসায়নিকের সাহায্যে যাচাই করে দেখবেন, দাহ্য তরল ঘরটির অন্য জায়গায় ছড়িয়ে গিয়েছিল কি না। “যার গায়ে অন্য কেউ দাহ্য তরল ঢালছে, সে ছটফট করবে। একাধিক লোক চেপে ধরলেও নিজেকে ছাড়াতে চাইবে। ওই ঝটাপটিতেও ঘরের বিভিন্ন জায়গায় দাহ্য তরল ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা। মেয়েটির ক্ষেত্রে তেমন হয়েছিল কি না, রসায়নবিদেরাই তা নিশ্চিত করে বলতে পারবেন।’’ মন্তব্য এক সিআইডি অফিসারের। তাঁর বক্তব্য, ঘরের ভিতরে কতটা জায়গা জুড়ে দাহ্য পদার্থের চিহ্ন মিলছে, তা থেকেও আঁচ পাওয়া সম্ভব যে, সে দিন ঠিক কী ঘটেছিল।
গণধর্ষণের নালিশ দাখিলের ‘অপরাধে’ ফের ধর্ষণের শিকার হওয়া মেয়েটি গত ২৩ ডিসেম্বর অগ্নিদগ্ধ হয়। ৩১ ডিসেম্বর আরজিকরে সে মারা যায়। অন্তিম জবানবন্দিতে মেয়েটির অভিযোগ ছিল, তার গায়ে আগুন লাগানো হয়েছে। জন্য দুই যুবকের দিকে আঙুল তুলেছিল সে। পুলিশ খুনের মামলা রুজু করলেও মেয়েটির পরিবার রাজ্য প্রশাসনের উপরে ভরসা রাখতে না -পেরে সিবিআই তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। হাইকোর্টের নির্দেশেই স্পেশ্যাল আইজি দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে সিআইডি’র বিশেষ দল ঘটনার তদন্তে নেমেছে।
এবং এখানে যে প্রশ্নটির ফয়সালা গোয়েন্দাদের কাছে বিশেষ জরুরি, তা হল : মেয়েটিকে কি পুড়িয়ে মারা হয়েছে? নাকি সে নিজেই নিজের গায়ে কোরোসিন ঢেলে আগুন লাগায়? বিশেষত ঘটনার পরে পরেই তার মায়ের বক্তব্যের জেরে নিয়ে কিছুটা ধন্ধের সৃষ্টি হয়েছিল। মহিলা তখন জানিয়েছিলেন, তিনি বাড়িতে ছিলেন না। ফিরে এসে দেখেন, মেয়ে জ্বলছে। ঘরের দরজা ভেঙে মেয়েটিকে বার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন মা। - বলেছিলেন, ওই অবস্থায় যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মেয়ে তাঁকে বলেছিল, “তুমিও মরে যাও। তুমিও তো মেয়ে !
ফলে এমন একটা ধারণাও গড়ে ওঠে যে, বারবার ধর্ষণের অপমান সইতে না -পেরে কিশোরীটি আত্মঘাতী হতে চেয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর ক’দিন আগে হাসপাতালের বেডে শুয়ে দগ্ধ মেয়েটি পুলিশকে যে জবানবন্দি দেয়, তাতে সে দুই যুবকের নাম করে পরিষ্কার জানিয়েছে, তারাই সে দিন ওই এক কামরার বাড়িতে ঢুকে তাকে ধর্ষণ -মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। শাসায়। গালিগালাজ করে, শেষমেশ গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে পালায়। প্রসঙ্গত, মধ্যমগ্রামের ধর্ষণ -কাণ্ডের পরে মেয়েটির বাবা -মা তাকে নিয়ে এয়ারপোর্ট থানা -এলাকার ওই ভাড়াবাড়িতে উঠে এসেছিলেন। এবং উল্লিখিত দুই যুবকের এক জন হল বাড়িওয়ালারই ছেলে রতন শীল। অপর জন তার আত্মীয় মিন্টা শীল, যে কিনা মধ্যমগ্রামের গণধর্ষণে মূল অভিযুক্ত ছোট্টুর পড়শি।
এমতাবস্থায় হাইকোর্টের নিদেশে রহস্যের জট খুলতে দময়ন্তী সেনের নেতত্বাধীন ছ’সদস্যের বিশেষ গোয়েন্দাদল এয়ারপোর্ট থানা -এলাকার বাড়িটিতে গিয়ে ওই ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। ফরেন্সিক -বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি নমুনা সংগ্রহ করেছেন রসায়নবিদেরাও। গোয়েন্দাদের আশা, নমুনাদির রাসায়নিক পরীক্ষায় ফলাফল তদন্ত এগোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। প্রসঙ্গত, ২০০৮ -এর মে মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে আরএসপি নেতা তথা রাজ্যের তদানীন্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্করের বাড়িতে বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। হামলায় সুভাষবাবুর এক আত্মীয়া মারা যান। তার তদন্তে নেমেও সিআইডি রসায়নবিদদের সাহায্য চেয়েছিল।
একই ভাবে মধ্যমগ্রামের কিশোরীর মৃত্যু -তদন্তেও যাতে কোনও ফাঁক না -থাকে, সে জন্য বারও রসায়নবিদদের সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছিল সিআইডি। রাজ্য ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখে ভবানী ভবন এই মর্মে অনুরোধ করে। সিআইডি - এক কর্তা বলেন, “ঘটনার এক মাসেরও পরে তদন্ত শুরু করেছি। অবস্থায় ঘটনাস্থলে থাকা কিছু প্রমাণ আমাদের নজর এড়িয়ে যেতেই পারে। এমনকী, ফরেন্সিকও সমস্যায় পড়তে পারে। কিন্তু রসায়নবিদেরা সাধারণত ভুল করেন না। গোটা ঘরে বিশেষ কেমিক্যাল ছড়িয়ে বিক্রিয়ার চেহারা দেখে তাঁরা হয়তো অনেক কিছু ধরতে পারবেন।”
সিআইডি -সূত্রের খবর : ঘরের দরজাটি ইতিমধ্যে ফরেন্সিকে গিয়েছে। রসায়ন -বিশেষজ্ঞদের সংগৃহীত নমুনার পরীক্ষা -রিপোর্ট ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে ভবানী ভবনে পৌঁছনোর কথা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.