আমতায় নির্যাতিতা কাদের, তরজায় বাম বিজেপি
মতার গ্রামে একই পরিবারের গণধর্ষিতা দুই মহিলার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে শুরু হল সিপিএম -বিজেপির তরজা।
মঙ্গলবার রাতে ঘটনার পরে শুক্রবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর নেতৃত্বে শুক্রবার উলুবেড়িয়া হাসপাতালে আসে বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দল। দিনই রাজ্য বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যও হাসপাতালে দেখা করেন দুই নির্যাতিতার সঙ্গে। ঘটনাস্থল আমতার মুক্তিরচক গ্রামেও যান তিনি। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির মহিলা মোর্চার প্রতিনিধিরা। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বিমানবাবু ঘটনাস্থল মুক্তিরচক গ্রামে যাবেন বললেও শেষমেশ আমতার সিটিসি বাসস্ট্যান্ডে একটি সভা করেন। গ্রামে আর ঢোকেননি।
দুই নির্যাতিতার এক জনের স্বামী সিপিএম নেতা হিসাবে এলাকায় পরিচিত বলে শুরু থেকেই দাবি করছিলেন জেলা নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত ভোটের পর এলাকায় প্রায় ৭০ জন পুরুষ সদস্য তৃণমূলের অত্যাচারে ঘরছাড়া বলেও তাঁদের দাবি। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ২৭ নভেম্বর মুক্তিরচক গ্রামের কিছু বাসিন্দা সিপিএম -তৃণমূল ছেড়ে তাঁদের দলে এসেছিলেন। নির্যাতিতা দুই মহিলার পরিবারও ছিলেন তাঁদের মধ্যে।

আমতার জনসভায় বিমান বসু।
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “গ্রামের কিছু সিপিএম -তৃণমূল কর্মী -সমর্থক আমার হাত ধরেই বিজেপি -তে এসেছেন। তারপরেই তৃণমূলের তরফে প্রতিশোধের চেষ্টা শুরু হয়। নানা গণ্ডগোলের পরে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।” শমীকবাবুর আরও দাবি, “ওই ঘটনায় দোষীরা পঞ্চায়েত ভোটের পরে তৃণমূলে যোগ দেয়। আগে তারা সিপিএম করত।” বিজেপির স্থানীয় নেতা তপন ধাড়া - দাবি করেছেন, নির্যাতিতা এক বধূর স্বামী যুব বিজেপির আমতার মণ্ডলের সভাপতি। ঘটনার প্রতিবাদে দিন সকালে উলুবেড়িয়ার বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে বিজেপি - লোকজন।
নিজেকে দিনও সিপিএম কর্মী হিসেবে দাবি করেই নির্যাতিতা এক বধূর স্বামীর প্রতিক্রিয়া, “আমার সম্পর্কে কেন সব বলা হচ্ছে বুঝতে পারছি না।” সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদারও বলেন, “এখন যে যা পারে বলছে। আমাদের কী করার আছে। ওরা প্রত্যেকেই আমাদের দলের সমর্থক।” এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা তপনবাবুর বক্তব্য, “এ কথা ঠিক, পুরো পরিবারই আগে সিপিএম করত। তাই হয় তো সিপিএম নেতাদের ভুল হচ্ছে। তবে তাঁরা এখন আমাদের দলের সঙ্গেই রয়েছেন।”
দিন অবশ্য নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের বাম প্রতিনিধি দলের সঙ্গেই দেখা যায়। হাসপাতালে বাম নেতৃত্বের সামনে কান্নাকাটি করে তাঁরা বলেন, “আমরা মাসের পর মাস ঘরছাড়া। আমাদের ঘরে ফেরানোর জন্য কিছু একটা করুন।” তাঁদের সান্ত্বনা দিয়ে সিপিআই নেতা মঞ্জুকুমার মজুমদার এবং আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য বলেন, “হাল ছাড়লে চলবে না। লড়াই করতে হবে।”

আমতার গ্রামে গণধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে উলুবেড়িয়ায় পথ অবরোধ বিজেপির।
দিন আমতার সভাতেও ছিলেন নির্যাতিতাদের পরিবারের সদস্যেরা। তবে এক জনের স্বামীকে দেখা যায়নি। নির্যাতিতা বধূর শিশুকন্যাকে চকোলেট দেন বিমানবাবু। তিনি বলেন, “সরকার রাজ্য জুড়ে ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের ঘটনাকে তুচ্ছ করে দেখাচ্ছে। ফলে দুষ্কৃতীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।” গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সকলকে গ্রেফতার এবং শাস্তির দাবি তোলেন তিনি। এই সবের বিরুদ্ধে রাজ্যে আন্দোলনের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানান ফ্রন্ট চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “এই বিষয়ে রাজ্য বামফ্রন্টের কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। আন্দোলনের কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডের জনসভায় সে সব বিস্তারিত জানানো হবে।”
তৃণমূলের হাওড়া জেলা (গ্রামীণ ) সভাপতি তথা বিধায়ক পুলক রায় বলেন, “দোষীদের কাউকে আড়াল করা হচ্ছে না। জন অভিযুক্তের মধ্যে জনকে ঘটনার পরপরই ধরা হয়েছে। অভিযুক্ত অন্য জনকেও ধরা হবে। বিমানবাবুর দিনের সফর লোকসভা ভোটের আগে ধর্ষণকে নিয়ে রাজনীতি করা আর কিছু নয়।” ‘ধর্ষণ নিয়ে রাজনীতি’র প্রতিবাদে আমতাতেই আজ, শনিবার তাঁরা সভা করবেন বলে জানিয়েছেন। বিজেপি প্রসঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, “সকলেই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে।”
ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বরুণ মাকালকে পুলিশ শুক্রবার রাত পর্যন্ত ধরতে পারেনি। তবে নির্যাতিত দুই মহিলার সঙ্গে সামান্য কথা বলতে পেরেছে পুলিশ। ওই মহিলারা যে আট জনের নামে এফআইআর করা হয়েছিল, তারা বাদেও ঘটনার দিন আরও জনা চারেক লোক দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ছিল বলে তাঁরা পুলিশকে জানান। পুলিশের দাবি, তাদের নাম জানাতে পারেননি দুই নির্যাতিতা। তবে ধৃতদের জেরা করে বাকিদের সম্পর্কে তথ্য জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

ছবি: সুব্রত জানা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.