|
|
|
|
তৃণমূলের আশ্রয়ে রয়েছে বরুণ, দাবি নির্যাতিতার স্বামীর
নিজস্ব সংবাদদাতা • আমতা |
গণধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বরুণ মাকাল তৃণমূলের আশ্রয়ে লুকিয়ে আছে বলে অভিযোগ করলেন নির্যাতিতা বধূর স্বামী। অভিযুক্ত আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর নেয়নি বলেও তাঁর অভিযোগ। তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজির পাল্টা দাবি, মঙ্গলবার রাতে আমতার মুক্তিরচক গ্রামে ওই ঘটনায় ধৃত সাত জনই সিপিএম সমর্থক।
কিন্তু মূল অভিযুক্ত বরুণ মাকাল তো গত পঞ্চায়েতে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন! জবাবে নির্মলবাবু বলেন, “অনেকে দাবি করছেন, বরুণকে ফাঁসানো হয়েছে। তবে বরুণ দোষী হলে দল তাকে আড়াল করবে না।”
পুলিশ অবশ্য বৃহস্পতিবারও বরুণকে ধরতে পারেনি। পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বরুণের খোঁজে তল্লাশি চলছে। দুই নির্যাতিতা আট জনের নাম বলতে পেরেছেন। ধৃতদের জেরা করে বাকিদের নাম জানার চেষ্টা চলছে।” পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, ওই সিপিএম নেতার বাড়িতে হামলা চালাতেই গিয়েছিল তারা। ধর্ষণের পরিকল্পনা ছিল না। মদের নেশায় এমন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে।
ঘটনার পরেই মুক্তিরচকে যান রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজ্য ফরেনসিক দফতরের পাঁচ জনের একটি দল মুক্তিরচকে আসে। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। ধৃতদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছে পুলিশ। তবে অসুস্থ থাকায় এখনও দুই নির্যাতিতার সঙ্গে সে ভাবে কথা বলতে পারেনি পুলিশ। তাঁরা সুস্থ হলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মহিলারা আদালতে গোপন জবানবন্দিও দেবেন বলে জানান পুলিশ কর্তারা। আপাতত উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই দুই মহিলার নিরাপত্তায় কড়া পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে। বুধবারই চার জন চিকিৎসকের একটি দল দুই নির্যাতিতার মেডিক্যাল পরীক্ষা করে তার রিপোর্ট দিয়েছে পুলিশকে। |
|
নির্যাতিতার বাড়িতে ফরেন্সিক দল। ছবি: সুব্রত জানা। |
নির্যাতিতা বধূর স্বামীর সঙ্গে বরুণ মাকালের পুরনো শত্রুতা ছিল। স্থানীয় পঞ্চায়েতটি তৃণমূল পরিচালিত হলেও মুক্তিরচক গ্রামের দু’টি বুথে জয়ী হয়েছিলেন সিপিএম সমর্থিত দুই নির্দল প্রার্থী। ভোটে দাঁড়িয়ে হারতে হয় বরুণকে। গত ১৭ ডিসেম্বর গ্রামে মারপিটের ঘটনায় জখম হয় বরুণ। তাকে মারধরের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন বধূর স্বামী তথা ওই সিপিএম নেতা। গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। ধরা পড়ে আরও ১৮ জন। দিন ১৫ হল জামিনে ছাড়া পেয়েছেন সিপিএম নেতা। পাকাপাকি ভাবে না ফিরলেও মাঝেমধ্যে যাতায়াত ছিল তাঁর।
এ দিন গ্রামে ফিরে ওই ব্যক্তি দাবি করেন, “তৃণমূল নেতারাই বরুণকে লুকিয়ে রেখেছে। তাই পুলিশও তাকে ইচ্ছা করে ধরছে না।” তাঁর আরও অভিযোগ, “ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত। কিন্তু পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগই নেয়নি।” এই প্রসঙ্গে তিনি স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। যদিও উত্তর উলুবেড়িয়া তৃণমূল সভাপতি বিশ্বনাথ লাহার বক্তব্য, “যে নেতার দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, তিনি নিজেই পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার রাতে অভিযুক্তদের সন্ধানে গিয়েছিলেন।” এ বিষয়ে অবশ্য পুলিশ কর্তারা মুখ খোলেননি।
মঙ্গলবার রাতের ঘটনার পর গ্রাম প্রায় জনশূন্য। দু-বছরের নাতনিকে নিয়ে ঘরে রয়ে গিয়েছেন নির্যাতিতা বধূর শাশুড়ি। হামলার ঘটনার কথা মনে করে এখনও শিউরে উঠছেন তিনি। “মুখে শিলনোড়া দিয়ে ঠুকে উঠোনে ফেলে দিয়েছিল বৌমাকে। দু’বছরের নাতনির হাত ধরে
টেনে উঠোনে ছুড়ে ফেলে এক জন। তত ক্ষণে পাশের ঘরে আরও কয়েক জন আমার জায়ের মুখে মাফলার পেঁচিয়ে অত্যাচার শুরু করেছে,” বলেন তিনি। বৌমা ও জায়ের সেই চিৎকার-গোঙানি আর নাতনির তারস্বরে কান্নার শব্দ এখনও
ভুলতে পারছেন না। বাড়িতে আপাতত পুলিশ পাহারা আছে। কিন্তু বরুণ মাকাল ধরা না পড়ায় আতঙ্কে ভুগছেন বৃদ্ধা।
|
পুরনো খবর: বাড়িতে চড়াও হয়ে গণধর্ষণ, ব্লেডের আঘাত, এ বার আমতা |
|
|
|
|
|