আইএফএ শিল্ডে তো নয়ই, আই লিগের (দ্বিতীয় পর্ব) শুরুতে অনিশ্চিত হয়ে পড়লেন ওডাফা ওকোলি। ক্লাব সূত্রের খবর, মহমেডান ম্যাচে জোর করে খেলতে নেমেই আরও বড় সমস্যায় পড়ে গেছেন মোহন-অধিনায়ক। জোর করে আই লিগে দু’একটা ম্যাচ নামলেও, এই মরসুমেই আর সে ভাবে পাওয়া যাবে না গোলমেশিনকে, ধরেই নিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
কোচ করিম বেঞ্চারিফা না চাইলেও বুধবার মহমেডানের বিরুদ্ধে জোর করে মাঠে নেমেছিলেন ওডাফা। আর নেমে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনেছেন বাগানের সবথেকে দামী ফুটবলার। ডাক্তারদের মত, পুরনো চোটই নতুন করে মাথা চাড়া দিয়েছে। ওডাফা কিন্তু বলছেন, “ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই বুধবার মাঠে নেমেছিলাম। আমারও কোনও সমস্যা হচ্ছিল না। কিন্তু খেলতে গিয়ে আবার একই জায়গায় লেগেছে।” মাঠে নামার জন্য কি এখন আফসোস হচ্ছে? ওডাফার সাফ জবাব, “দলের স্বার্থে নেমেছিলাম। আফসোস করব কেন?”
|
বল পায়ে নেমে পড়লেন করিম বেঞ্চারিফা। |
ক্লাব সূত্রের খবর, পেনদের বিরুদ্ধে মাঠে নামার জন্য বিরতিতে কোচ করিমকে বারবার অনুরোধ করতে থাকেন নাছোড় ওডাফা। তাঁর খেলার জন্য মরিয়া ইচ্ছে দেখেই মোহন-কোচ দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁকে। আখেরে অবশ্য লাভের বদলে ক্ষতিই হল মরক্কান কোচের। বৃহস্পতিবার হতাশ গলায় করিম বললেন, “ওডাফাকে মাঠে নামার জন্য ডাক্তার অনুমতি দিয়েছিল। ও নিজেও মুখিয়ে ছিল। আমাকে বারবার অনুরোধ করছিল। এই অবস্থায় দলের সেরা স্ট্রাইকারকে আমি কী ভাবে রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রাখি! ম্যাচ জেতার জন্যই তো চেষ্টা করেছিলাম।”
ওডাফার থাই-মাসলের যা চোট, সেই একই সমস্যায় বহু দিন মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল হোসে ব্যারেটোকেও। আর তাই ওডাফার চোটের গুরুত্ব বোঝেন বাগানের সবুজ-তোতা। ওডাফার জন্য তাঁর পরামর্শ, “বিশ্রাম নিয়ে একেবারে ফিট হয়ে মাঠে নামুক ওডাফা। তাড়াহুড়ো করতে গেলেই সমস্যায় পড়বে ও। আমি জানি, খেলতে না পারলে সব ফুটবলারই মানসিক ভাবে হতাশ হয়ে পড়ে। তবে এই খারাপ সময় কেটে যাবে। নিজেকে ফিট রাখতে জিমে বেশি সময় দিক ও।”
ওডাফা অবশ্য সব কিছু জানা সত্ত্বেও মাঠে নামার জন্য পাগল। এ দিন সকালে অনুশীলনে আসেননি। ব্যথা বেড়ে যাওয়ায়। বিকেলে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই আশাবাদী বাগান স্ট্রাইকার ফোনে বললেন, “আমি তো শিল্ডেই খেলতে চাই। জানি না পারব কি না? ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি।” সঙ্গে যোগ করলেন, “আমার জীবনে তো ফুটবল ছাড়া কিছু নেই। ফুটবল না থাকলে আমি বাঁচব কী করে? আমার সংসারও চলে ফুটবল খেলেই। খেলতে না পারলে আমারই বড় ক্ষতি হবে। এই যন্ত্রণা কেউ বুঝবে না।” বিষাদ ও হতাশায় ডুবে যায় তাঁর গলা। |
মোহনবাগানের অনেক হতাশার মাঝেও উজ্জ্বল শুধু মনোতোষ। |
বাগান স্ট্রাইকার যখন মহমেডান ম্যাচের পর আরও অন্ধকারে, তখন হাজার ওয়াটের আলোর নীচে ঝলমল করছে তাঁর দলের কিপার মনতোষ ঘোষের মুখ। কিছু দিন আগে পর্যন্তও যাঁকে চিনত না কেউই। সেই অনামী কিপারই এখন বাগান অনুশীলনে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। বুধবার তাঁর হার না মানা জেদের জোরেই মোহনবাগান বেঁচে গিয়েছে হারের হাত থেকে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মনতোষের মোবাইলের মেসেজ বক্সে উপচে পড়ছে শুভেচ্ছা। ফোনের রিং-টোনও নাগাড়ে বেজে চলেছে। তবু মন খারাপ মনোতোষের। কেন? ওডাফার জন্য বেজায় মন খারাপ বাগানের নতুন নায়কের। বলছিলেন, “ম্যাচের পর ওডাফা নিজে হতাশ হয়ে পড়লেও আমাকে কিন্তু শুভেচ্ছা জানিয়েছে। হ্যান্ডশেক করে বলেছে, ভেরি ওয়েল প্লেড। কিন্তু ও যদি না খেলতে পারে তবে দলের কিন্তু বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।” |