বিধ্বস্ত বাগানের মতোই বিপর্যস্ত কোচ
‘আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন’
ডাফা তো মাঠে হাঁটছিলেন, তাও নামালেন কেন?
“কিছু করার ছিল না। হাতে কেউ নেই। বাধ্য হয়েই....”
ওডাফা নামায় শেষ পঁয়তাল্লিশ মিনিট মোহনবাগান ‘দশ জন’ হয়ে গিয়েছিল। মানছেন?
“নো কমেন্টস। প্লিজ..।”
ওডাফা কি আর খেলতে পারবেন আইএফএ শিল্ডে? “পরের ম্যাচে খেলার কোনও সম্ভাবনা নেই। আবার চোট পেল। ফ্রিকিকটা মারার সময়েই বুঝেছিলাম।”
এই মরসুমেই ফিট হতে পারবেন আপনার ‘গোলমেশিন’?
“চেষ্টা তো করছি। দেখা যাক।”
দু’কোটির মোহন-অধিনায়ক সম্পর্কে যত প্রশ্ন হচ্ছিল, বাগান-কোচের মুখটা ততই তেতো হয়ে যাচ্ছিল। অনেকটা
ছবি: উৎপল সরকার।
ছুঁচো গেলার অবস্থা করিমের। সবচেয়ে দামি ফুটবলার নিয়ে বলতে গেলেই বিতর্ক, আবার বললেও সংবাদমাধ্যম ছিঁড়ে খাচ্ছে।
এবং চেয়ার ছেড়ে ওঠার আগে করিম যা করলেন তা শুধু অভিনব নয়, সম্ভবত নজিরবিহীন। সাংবাদিকদের বললেন, “একটা অনুরোধ আছে, শুনবেন? আমাদের জন্য একটু প্রার্থনা করুন।”
ম্লান মুখ। কিছুটা বিপর্যস্ত। বিভ্রান্তও!
কলকাতা লিগে রানার্স। ফেড কাপে ব্যর্থ। আই লিগ জেতার আশা নেই। ছিল শুধু শিল্ড সেই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল যাওয়াও বুধবার কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠল। এ দিন একই গ্রুপে বাংলাদেশের শেখ জামাল ধানমন্ডি ৩-১ গোলে সিকিম ইউনাইটেডকে হারিয়ে দেওয়ায়। পরিস্থিতি যা, তাতে করিমের বাগানকে শেষ চারে যেতে হলে শনিবার বাংলাদেশের ক্লাবটিরই বিরুদ্ধে অন্তত এক পয়েন্ট পেতে হবে। অর্থাৎ জিততে না পারলেও অন্তত ড্র চাই-ই।
কিন্তু বাংলাদেশে ফেড কাপ জিতে আসা ‘জামালের’ বিরুদ্ধে ‘কামাল’ করার ক্ষমতা কি গঙ্গাপারের ক্লাবের এখন আছে? করিম নিজে আশাবাদী হলেও বুধবারের যুবভারতীর গ্যালারি সেই আশাবাদের শরিক হতে চাইছে না। চাইবেই বা কেন? এ দিনই বর্ধমানের সূর্যপল্লির অখ্যাত গোলকিপারের ‘সোনার হাত’ যদি না থাকত, তা হলে তো গ্রুপ লিগেই শেষ হয়ে যেত বাগানের সব আশা।
মনোতোষ ঘোষ—মাত্র চার দিন হল তাঁকে চিনেছেন বাগান সমর্থকরা। প্রতিদিন যাঁর কাজ ছিল অনুশীলনে শুধুই আসা-যাওয়া। আর দলের এক সিনিয়র ফুটবলারের কালিন্দীর ফ্ল্যাটের অস্থায়ী বাসিন্দা হয়ে দিন গোনা কবে সুযোগ আসবে! সেই অপাঙ্ক্তেয় মনোতোষই এ দিন হয়ে উঠলেন বাগানের ত্রাতা। নিয়মিত দুই তারকা গোলকিপার শিল্টন পাল আর সন্দীপ নন্দীর চোটের জন্য খেলার সুযোগ পেয়ে মহমেডানের জোসিমার আর পেনের দুটি নিশ্চিত গোল বাঁচালেন মনোতোষ। বিপক্ষের বিষমাখানো কর্নার এবং ফ্রিকিক গ্রিপ করলেন অনায়াসে। “প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকতাম কবে সুযোগ পাব। দুটো ম্যাচ খেললাম। করিম স্যর পিঠ চাপড়ে দিলেন ড্রেসিংরুমে,” বলছিলেন দেশের তিন প্রান্তের তিন ক্লাব ঘোরা কিপার। তেরো কোটির বাগানে বছর চব্বিশের ছেলেটির পারিশ্রমিক কত? ক্লাব সূত্রের খবর, তিন লাখ টাকার মতো!
আটকে যাওয়া কাতসুমি। ছবি: উৎপল সরকার।
মহমেডান সেমিফাইনাল চলে গিয়েছিল আগেই। ফলে ম্যাচটা বাগানের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তা সত্ত্বেও খেলাটা হল বেশ উপভোগ্য। বল ঘুরল বক্স-টু-বক্স। প্রচুর সুযোগ তৈরি হল। ভাল মুভ, সেটপিস-ও দেখা গেল। দু’দলেরই গোললাইন থেকে ফিরল বল। ওয়ান-টু-ওয়ান পেয়েও গোল করতে পারলেন না দু’দলের জোসিমার আর সাবিথ।
করিম আর সঞ্জয় সেন আবার দু’জনেই কোচ হিসাবে ধুরন্ধর। প্রচুর অভিজ্ঞতা। তাই একে অন্যকে মেপে ফেলেছিলেন। দু’জনের ফর্মেশন অদ্ভুত ভাবেই মিলে গেল। হার না মানার স্ট্র্যাটেজি। ৪-১-৪-১। জোনাল মার্কিংয়েও দুই কোচের অদ্ভুত মিলবিপক্ষের গোলগেটারকে নড়তে দিও না। আর বিপক্ষের মাঝমাঠকে ঘেঁটে দাও। এই ফর্মুলা মেনেই জোসিমারের ঘাড়ে সারাক্ষণ নিঃশ্বাস ফেললেন ইচে। উল্টো দিকে সাবিথ এবং বিরতির পর নামা ওডাফার পিছনে ডাকটিকিট হয়ে রইলেন লুসিয়ানো। কাতসুমি বনাম পেনের ‘চোর-পুলিশ’ খেলা চলল পুরো নব্বই মিনিটই। জাপানি দৌড়লেই তাঁকে ধাওয়া করলেন নাইজিরীয়। উল্টোটাও হচ্ছিল। এবং এত সব অঙ্কের মধ্যেও ছিটকে বেরোলেন দু’দলের রহিম নবি বা পঙ্কজ মৌলা। দু’জনেই গোল পেতে পারতেন।
ম্যাচের রেফারিংটা যা খারাপ হল! বাগানের সাবিথ দু’টো নিশ্চিত অফসাইড থেকে ছাড় পেয়ে গেলেন। যার থেকে গোল হতেই পারত। এবং ঝামেলাও। কারণ সিদ্ধান্ত পছন্দ না হওয়ায় সাদা-কালো ফুটবলাররা মাঝে মধ্যেই তেড়ে যাচ্ছিলেন রেফারির দিকে। ওডাফা-লুসিয়ানো একে অন্যকে ধাক্কাধাক্কি করলেন, চোরাগোপ্তা মারামারিও হল। রেফারি সন্তোষকুমারের দুর্বল পরিচালনার জন্যই। মরসুমের শুরু থেকেই প্রচুর ম্যাচ খেলাচ্ছেন এই ফিফা রেফারি। ফুটবলারদের মতো তিনিও কি ক্লান্ত?
জিততে না পারলেও মোহনবাগান হারতে চায়নি। গোল আটকানোর জন্য করিম ছ’জনকে ব্যবহার করলেন। করিম সফল—অন্তত এক পয়েন্ট পেয়ে বেঁচে থাকল তাঁর বাগান। কিন্তু এর পর কী? সবুজ-মেরুন সমর্থকদের মনোভাব আঁচ করেই সম্ভবত করিম তাই ম্যাচ শেষে বলেন, “আমাদের জন্য একটু প্রার্থনা করুন।”
যা শুনে বুধবারই বিকেলে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফেরা সুব্রত ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেই যদি ম্যাচ জেতা যেত, তা হলে তো অনুশীলন না করে প্রতিদিন প্রার্থনা করলেই সব ম্যাচ জেতা যেত!”

মোহনবাগান: মনোতোষ, প্রীতম, ইচে, কিংশুক, আইবর, ডেনসন (ওডাফা), রাম (শঙ্কর), জাকির পঙ্কজ, কাতসুমি, সাবিথ (ওয়াহিদ)।
মহমেডান: ব্যারেটো, নির্মল, মেহেরাজ, লুসিয়ানো, ধনরাজন, ইজরায়েল, রাকেশ (সন্দীপ), মণীশ, পেন, নবি, জোসিমার (দীপেন্দু)।

ফ্লপ শো-র ৩ কারণ
১. গোলের জন্য যাঁর দিকে তাকিয়ে মোহনবাগান, সেই ওডাফা ওকোলির চোট। কবে সুস্থ হবেন কেউ বলতে পারছেন না।
২. আইএফএ-র নিয়মের বেড়াজালে আটকে আর এক গোলগেটার ক্রিস্টোফার চিজোবাও। খেলতে পারছেন না শিল্ডে।
৩. মাঝমাঠে ভাল পাসার নেই। উইং প্লে এবং সেট পিসে ব্যর্থতা।
ডেনসন চোট পাওয়ার পর বাধ্য হয়েই ওডাফাকে নামিয়েছি। হাতে তো আর কেউ ছিল না। বাধ্য হয়েই...

পুরনো খবর:
শিল্ড ফাইনাল ১৫ ফেব্রুয়ারি
আই লিগ শুরু হওয়ার আগেই আইএফএ শিল্ডের ফাইনাল হচ্ছে। ফেডারেশন আই লিগের ম্যাচ পিছিয়ে দিতে রাজি হওয়ায় শিল্ডের ফাইনালের তারিখ ঘোষণা করে দিল রাজ্য ফুটবল সংস্থা। ফাইনাল ১৫ ফেব্রুয়ারি। ১৩ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় স্থান নির্ধারণের ম্যাচ। আই এফ এ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় ফাইনালের তারিখ ঘোষণা করে দিলেও আই লিগের কোন ম্যাচ স্থগিত করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ফেডারেশন। আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর দিল্লি থেকে ফোনে বুধবার বললেন, “আমরা আই লিগের কোন ম্যাচ পিছিয়ে দেব, তা ঠিক করব শিল্ড সেমিফাইনালের টিম দেখে। যদি ইস্টবেঙ্গল ফাইনালে ওঠে তা হলে ১৫ ফেব্রুয়ারির ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ স্থগিত রাখা হবে। যদি অন্য কোনও দল ফাইনালে যায়, তা হলে তাদের ম্যাচ বন্ধ করতে হবে।” এ দিকে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচে লাল কার্ড দেখা স্ট্রাইকার র্যান্টি মার্টিন্সকে যাতে দু’ম্যাচ সাসপেন্ড করা না হয় সে জন্য আবেদন জানাল ইউনাইটেড স্পোর্টস। আজ বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে আইএফএ।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.