ওডাফা ওকোলি বল নিয়ে দৌড়োচ্ছেন। কিন্তু তাঁর হাঁটাচলা দেখে বোঝাই যাচ্ছে, চোটমুক্ত নন।
বাগান অধিনায়ককে রিজার্ভ দলে রেখে ম্যাচ খেলালেন করিম বেঞ্চারিফা। একটু দৌড়েই অবশ্য হাঁফিয়ে পড়লেন তিনি। দাঁড়িয়েও গেলেন।
কিন্তু মোহনবাগানের যে আজ আই এফ এ শিল্ডে বেঁচে থাকার পরীক্ষা! বলা যায় কার্যত ডু অর ডাই ম্যাচ। কোনওমতেই হারা চলবে না। কোনও অঘটন ঘটলে শেষ ম্যাচে তাদের সমস্যায় পড়তে হবে। কি করবেন বাগানের মরক্কান কোচ?
সরস্বতী পুজোর সকালে বাংলা যখন দেবী-বন্দনায় মেতে, তখন মোহনবাগান মাঠে গিয়ে দেখা গেল করিমের যাবতীয় ‘বন্দনা’ ওডাফাকে কেন্দ্র করে।
জোসিমার-পেনদের বিরুদ্ধে মিনি ডার্বি। শিল্টন নেই। সন্দীপ রিজার্ভে। গোলে সম্ভবত দলের তিন নম্বর গোলকিপার মনোতোষ ঘোষ খেলবেন। তা-ও ঠিক আছে। কিন্তু হাই প্রোফাইল এই ম্যাচে ওডাফা না থাকলে কী হবে, তা নিয়েই রাতের ঘুম ছুটেছে বাগান কোচের। সে জন্যই নানা ভাবে তাঁকে পরীক্ষা করলেন করিম। পুরো সন্তুষ্ট হতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আঠারো জনের দলে রাখলেন গোলমেশিনকে। রাতের খবর, তাঁকে প্রথম দলে রাখার সম্ভাবনা প্রায় নেই-ই। |
করিম রিজার্ভে রাখলেও ওডাফা কিন্তু মাঠে ফিরতে মরিয়া। তবে ইচ্ছে থাকলেও শরীর যে চলছে না! বাধ্য হয়েই মাঠে নামার ব্যাপারটি তিনি ছেড়ে দিয়েছেন কোচের উপর। মাঠ ছাড়ার আগে ওডাফা বলেও গেলেন, “আমি জানি না খেলব কি না। কোচ যা বলবেন সেটাই হবে।”
বাগানের যখন শিরে সংক্রান্তি, তখন সঞ্জয় সেনের মহমেডান বেশ ফুরফুরে মেজাজে। দু’ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে যাওয়ার ছাড়পত্র প্রায় পেয়ে গিয়েছে সাদা-কালো শিবির। সাম্প্রতিক কালে দুই প্রধানের ম্যাচে এ রকম মঞ্চ শেষ কবে হয়েছে মনে করা যাচ্ছে না। মহমেডান কোচ সঞ্জয় সেন অবশ্য আত্মতুষ্টিতে ভুগতে নারাজ। বরং তাঁর মন্তব্য, “আমরা তিনটে ম্যাচ জেতার লক্ষ্যেই নামব। মোহনবাগানকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।” মহমেডান আজ পাচ্ছে না তাদের অন্যতম সেরা অস্ত্র অসীম বিশ্বাসকে। গোড়ালির চোটে তিনি বাইরে। অসীম না থাকায় আক্রমণাত্মক হতে জোসিমারের সঙ্গে রহিম নবিকে জুড়ে দেওয়ার কথা ঘুরছে মহমেডান কোচের মাথায়।
ওডাফাকে শুরুতে না পেয়ে করিম তাঁর স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছেন কাতসুমি আর সাবিথকে সামনে রেখে। ফর্মেশনটা হবে ৪-৪-১-১। রক্ষণে সামান্য পরিবর্তন হচ্ছে। অনুশীলন দেখে মনে হল শৌভিক ঘোষের জায়গায় আইবর ফিরবেন প্রথম দলে। সে ক্ষেত্রে ইচে-আইবর-প্রীতম-কিংশুক খেলবেন। সিকিম ইউনাইটেড ম্যাচে গোল করে দলকে জিতিয়েছিলেন সাবিথ। দুরন্ত হেডে। ওডাফা না থাকলে তো আপনার বাড়তি দায়িত্ব? সাবিথ বলে দিলেন, “আগের ম্যাচে গোল পেয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরেছে। আরও খাটতে হবে। ফর্ম ধরে রাখতে হবে।”
তবে সিকিম আর মহমেডান তো এক নয়। ফেড কাপ থেকে ছিটকে গেলেও সঞ্জয় সেন দায়িত্ব নেওয়ার পর পেন-জোসিমাররা যথেষ্ট সংঘবদ্ধ। ওডাফার না থাকাটা যে তাঁদের সুবিধা করে দেবে জানাচ্ছেন মহমেডানের ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার লুসিয়ানো। বলছিলেন, “ওডাফা খুব ভাল স্ট্রাইকার। ওর না থাকাটা আমাদের রক্ষণের উপর চাপ কমাবে। কিন্তু তা বলে মোহনবাগানকে ছোট করে দেখার কোনও কারণ নেই।”
করিমও মানছেন মহমেডান যথেষ্ট ভাল দল। “ওদের দলে অনেক ম্যাচউইনার আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ম্যাচটা আমাদের জিততে হবে। সে জন্য আক্রমণাত্মক ফুটবলই আমার পছন্দ।” পাশাপাশি অবশ্য টিমের মানসিকতা বোঝাতে বাগান-কোচ বলে দিয়েছেন, “আই লিগের সবথেকে সংঘবদ্ধ এবং শান্ত ড্রেসিংরুম আমাদেরই।” যা বিতর্ক তুলতে পারে ভবিষ্যতে।
|
বুধবারে আই এফ এ শিল্ড
• মোহনবাগান: মহমেডান (যুবভারতী ৩-১৫)
• সিকিম ইউনাইটেড: শেখ জামাল ধানমন্ডি, বাংলাদেশ (যুবভারতী ৬-১৫)
|
ছবি: উৎপল সরকার, শঙ্কর নাগ দাস। |