র‌্যান্টির লাল কার্ডের ফসল তুলল ইস্টবেঙ্গল
মেজাজ গরম করে তারকা ফুটবলারের লাল কার্ড দেখা! রবিবার লা লিগার ম্যাচে সেই উত্তেজনার স্রোতে ভেসেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের রোনাল্ডো। আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় সাড়ে আট হাজার কিমি পেরিয়ে সেই স্রোত যে র‌্যান্টি মার্টিন্সের ইউনাইটেড স্পোর্টসে হানা দেবে তা কে জানত?
মঙ্গলবার যুবভারতীতে ম্যাচের বাহান্ন মিনিটে রেফারি রাহুল ডিসা যখন র‌্যান্টিকে লাল-কার্ড দেখালেন তখন এই প্রশ্নই আছড়ে পড়ল গ্যালারি থেকে ড্রেসিংরুমের কোনায় কোনায়।
প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর দ্বিতীয়র্ধের শুরুতেই তিন মিনিটের একটা ছোট্ট স্পেলএতেই ম্যাচটা পকেটে পুরে ফেলল আর্মান্দো কোলাসোর দল। একই সঙ্গে শিল্ড সেমিফাইনালের টিকিটও।
কী ঘটল এই তিন মিনিটে? দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু হতেই সুয়োকা-মোগার পা ঘুরে আসা বল ধরে বাঁ পায়ে দূরপাল্লার ট্রিগার টেপা শট লালরিন্দিকা রালতের। যার সামনে বিগত কয়েক বছরে অসহায়ের মতো আত্মসমপর্ণ করেছেন দেশ-বিদেশের অনেক গোলকিপারই। মিজো ফুটবলারের এই ইউএসপি-র কাছেই এ দিন হার মানলেন ইউনাইটেড কিপার অভিজিৎ। তাঁর কিছু করার ছিল না। এখান থেকেই ম্যাচের রাশ চলে যায় লাল-হলুদ জার্সিধারীদের হাতে।
ঠিক তিন মিনিট পরেই সেই ‘অঘটন’। সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেন র‌্যান্টি-সৌমিক। যোগ দিলেন ইস্টবেঙ্গল লেফট ব্যাট রবার্টও। খেলা বন্ধ রইল মিনিট চারেক। হঠাৎ দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে মাঠে পড়লেন সৌমিক। তাঁর ‘প্লে-অ্যাক্টিং’ বুঝতে পারলেন না রেফারি। পরিস্থিতি শান্ত করলেন চিডি। এর পরেই সহকারী রেফারির সঙ্গে আলোচনা করে র‌্যান্টিকে মার্চিং অর্ডার দিয়ে দিলেন রেফারি।
গোলের আগে মোগা। মঙ্গলবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার।
সৌমিকের দাবি, “কভারিংয়ের সময় কনুই চালিয়েছিল র‌্যান্টি।” আর র‌্যান্টি বললেন, “সৌমিক ক্রমাগত গোড়ালিতে মারছিল।” র‌্যান্টিদের প্রশ্ন, রবার্ট, সৌমিকরা ছাড় পেয়ে গেলেন কী ভাবে? অন্তিম লগ্নে বলদীপের গোলটা বাতিল হল কোন যুক্তিতে?
ম্যাচ শেষে তাই রাগে গজগজ করছিলেন রফিক-আসিফরা। বলছিলেন, “লাল কার্ড দেখে র‌্যান্টির বেরিয়ে যাওয়াটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।” যা আবার মানতে নারাজ সাংবাদিক সম্মেলনে আসা লাল-হলুদের সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরী। তাঁর মন্তব্য, “ওটা টার্নিং পয়েন্ট হতে যাবে কেন? আমরা তো তখন এক গোলে এগিয়ে।”
ড্র করলে দু’দলই সেমিফাইনালে চলে যাবে। তাই দু’দলই শুরু করেছিল সতর্ক ভাবে। আর্মান্দো যতই ‘শিল্ড গুরুত্বহীন’ বলে বিবৃতি দিন, তাঁর দল গঠনেই পরিষ্কার, ভিতরে-ভিতরে তিনি কিন্তু বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন শিল্ডকে। ৪-৪-২ ছকে র‌্যান্টি-এরিকদের দাপট সামলাতে আর্মান্দোও শুরু করেছিলেন ৪-৪-২। চার ব্যাকের আগে দাঁড়িয়ে ইউনাইটেডের বল বাড়ানোর ‘পাওয়ার হাউস’ এরিককে ধরলেন সুবোধ। কিন্তু খেলা পাঁচ মিনিট গড়াতেই আর্মান্দো ফেললেন তাঁর লুকোনো তাস। ক্রমাগত সুইচ ওভার করে দীপকদের রক্ষণকে ধাঁধায় ফেলে দিলেন লাল-হলুদের দুই উইং হাফ ডিকা আর তুলুঙ্গা। র‌্যান্টিরা আক্রমণে উঠলে ইস্টবেঙ্গল ৪-৪-১-১। মোগা বা চিডির মধ্যে কেউ একজন তখন নেমে আসছিলেন। আর লাল-হলুদের আক্রমণের সময় ইস্টবেঙ্গল ৪-২-৪। বেলোরা তখন সামলাচ্ছিলেন চিডি-মোগা-সুয়োকা-ডিকাদের চতুর্ভুজ। পিছন থেকে সেকেন্ড বল খেলার জন্য তৈরি হয়েই ছিলেন তুলুঙ্গা।
দ্বিতীয়ার্ধে ডিকার সেই অনবদ্য গোল এবং র‌্যান্টি বেরিয়ে যাওয়ার পরেও এরিক সুযোগ হারান দলকে সমতায় ফেরানোর। গোলের জন্য মরিয়া হয়ে দীপক, বেলোরা তাই অলআউটে যেতেই চিডির থেকে বল পেয়ে ঘাড়ের কাছে ধনচন্দ্রকে নিয়ে দ্বিতীয় গোল মোগার। কিন্তু গ্রুপে একটা হলুদ কার্ড রয়েছে বলে সেমিফাইনালের কথা ভেবে দক্ষিণ সুদানের এই স্ট্রাইকারকে মাঠে রাখেননি আর্মান্দো।
এ দিন হারলেও সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ রয়ে গিয়েছে ইউনাইটেডের। বুসান সানমুন-গেলাং ম্যাচ অমীমাংসিত ভাবে শেষ হওয়ায় শেষ ম্যাচে সিঙ্গাপুরের দলটির সঙ্গে ড্র করলেই শেষ চারের টিকিট পেয়ে যাবে কলকাতার দলটি।
আর ইস্টবেঙ্গল? তাঁদের ইতিবাচক দিক, সুবোধকুমারের দায়বদ্ধ ফুটবল। যিনি এ দিন এরিককে বোতলবন্দি করে রাখলেন। নজর কাড়লেন অভিষেক, লেনও। ছন্দে ফিরছেন মোগাও। চিডির সঙ্গে তাঁর জুটি ফুল ফোটাচ্ছে ধীরে ধীরে। বাড়ি যাওয়ার সময় মোগা বলেও গেলেন সে কথা।
কিন্তু সুয়োকার খেলায় এত ব্যাক পাস এবং স্কোয়ার পাস কেন? কেনই বা প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গল গোলের দরজা খুলতে পারছে না! ভিআইপি বক্সে বসে এ দিন এই তথ্যগুলো নিশ্চয়ই নোটবুকে তুলতে ভুল করেননি বাগান কোচ করিম বেঞ্চারিফা। সেমিফাইনাল বা ফাইনালে দেখা হলে তিনি এর ফায়দা তুলতেই পারেন।

ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, অভিষেক, রাজু, সৌমিক, রবার্ট, তুলুঙ্গা (লেন), সুবোধ (খাবরা), সুয়োকা, লালরিন্দিকা, মোগা (আলভিটো), চিডি।

ইউনাইটেড স্পোর্টস: অভিজিৎ, দীপক, বেলো, অনুপম, ধনচন্দ্র, রফিক (বলদীপ), আসিফ (রাজেন্দ্র), স্নেহাশিস (তপন), লালকমল, এরিক, র‌্যান্টি।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.