মোগাদের কার্ড দেখানো কণিকার উলটপুরাণ
‘বদমেজাজি’ জেমস মোগা, ‘রংবাজ’ সুয়োকাদের বাঁশি মুখে সামলেছিলেন প্রিমিয়ার ডিভিশনের হাই-প্রোফাইল ম্যাচে।
মারমুখী ফুটবলারদের তোয়াক্কা না করে কার্ড দেখিয়েছিলেন। দিয়েছিলেন পেনাল্টি।
বুধবার সেই রেফারি কণিকা বর্মনকেই দেখা গেল মোগা, সুয়োকাদের জায়গায় ফুটবলার হিসাবে। রেফারির সিদ্ধান্তে মোগাদের মতোই ‘আচরণ’ করলেন, প্রশ্নও তুললেন। একেবারে উলটপুরাণ।
আই এফ এ পরিচালিত লিগের বড় ম্যাচের রেফারি আইএফএ-র মহিলা লিগের ম্যাচে ফুটবলার হিসাবে মাঠ কাঁপাচ্ছেন! এমন ঘটনা ময়দানে নজিরবিহীন! কারণ এর আগে বাংলার কোনও মেয়ে রেফারিই প্রিমিয়ারের ম্যাচ খেলাননি।
ইস্টবেঙ্গল-রেলওয়ে এফসি ম্যাচ পরিচালনা করার এক মাস পাঁচ দিন পর বেলঘরিয়ার মাঠে এ দিন সেই দ্বৈতসত্তায় পাওয়া গেল শিলিগুড়ির মেয়েকে। রেফারি এবং ফুটবলারখেলার মাঠের দুই আলাদা চরিত্রকে সামলান কী করে? কণিকা বললেন, “বাঁশি মুখে নামলে মাঠের বস আমি। সবাই আমার কথামতো চলে। এটা যেমন ভাল লাগে, তেমনই ফুটবলার হিসাবে মাঠে নামলে খেলা উপভোগ করি। রেফারি ভুল সিদ্ধান্ত দিলে আমিও তেড়ে যাই।”
বুধবার মেয়েদের লিগে বিরতির পর মাঠে নেমেছিলেন কণিকা। রাইট হাফে খেলতে বেশি পছন্দ করেন। তবে এ দিন তাঁকে রাইট এবং লেফট হাফে অদল-বদল করে খেলতে দেখা গেল। নিজে গোল না পেলেও গোল করালেন। তাঁর দল জিতল ৬-০। এ রকম নজিরবিহীন দিনে আরও চমকপ্রদ হল, পেশায় গ্রিন পুলিশ কণিকার ‘পুলিশ’ টিম যাঁদের হারাল, তাঁরা সবাই এসেছিলেন একসময় মাওবাদীদের ডেরা জঙ্গলমহল থেকে। কিছু দিন আগেও যেখানে পুলিশ বনাম মাওবাদী গোলাগুলি লেগে থাকত। এটাও তো উলাট পুরাণ।
রেফারি থেকে ফুটবলার। বেলঘরিয়ায় কণিকা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
খেলার সঙ্গে কণিকার হাতেখড়ি অ্যাথলিট হিসাবে। রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে অংশ নিয়েছেন তিনি। কিন্তু ফুটবলের টানে ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম অনুশীলন শুরু করা। সেই টানেই কলকাতায় আসা। কে জানত উত্তরবঙ্গের ছোট্ট মেয়েই মোগা, চিডিদের শাসন করে ময়দানের ঘাসে নারী-বিপ্লব ঘটাবেন! বারাসত, বালির বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে আইএফএ লিগ থেকে ফেডারেশনের টুর্নামেন্টেও খেলেছেন। তবে বাঁশি মুখে ম্যাচ পরিচালনার স্বাদ পাওয়ার পর থেকেই তাঁর কাছে রেফারি সত্তাটাই বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কণিকা বলেও দিলেন, “চাকরির জন্য খেলতে হচ্ছে। তবে এখন রেফারিং করতেই বেশি ভাল লাগে। বাইশ জন ছেলে আমার কথা শুনে চলছে, ওদের পরিচালনা করছি, এটা তো যে-কোনও মেয়ের কাছেই বড় তৃপ্তির।”
ম্যাচ পরিচালনার সময় পুরুষ ফুটবলাররা অভব্য আচরণ করলে অস্বস্তি হয় না? কঠিন গলায় কণিকার এ বার জবাব— “কেউ ইচ্ছাকৃত ও সব করলে তার দাওয়াই আমার পকেটেই থাকে। লালকার্ড আছে তো! আর খেলার মাঠে পুরুষ-মহিলা এ সব নিয়ে ভাবি না। ও সব ভাবতে গেলে ম্যাচ পরিচালনা করা যায় না। রাস্তাঘাটে চলতে গেলেও তো অনেকের হাত গায়ে লাগে।” পেশায় পুলিশ বলেই কি এত দাপট বছর কুড়ির কুড়ি মেয়ের মধ্যে? আর এই দাপটকে সম্বল করেই ডার্বি খেলানোরও স্বপ্ন দেখেন তিনি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.