পুলিশের চোখের সামনেই শর্ট স্ট্রিটের বাড়ি থেকে বহিরাগত কয়েক জনের উপরে গুলি চালানো হয়েছিল বলে আদালতে অভিযোগ আনল কলকাতার গোয়েন্দা-পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি: বন্দুকধারীরা মোটেই আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়নি, বরং বহিরাগত হামলাকারীরাই তখন প্রাণের ভয়ে আশ্রয় খুঁজছিল। বস্তুত হত্যার উদ্দেশ্যেই অসহায় লোকগুলিকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয় বলে শর্ট স্ট্রিটের দ্বিতীয় মামলার চার্জশিটে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
গত ১১ নভেম্বর কাকভোরে শেক্সপিয়র থানা-এলাকার ৯এ শর্ট স্ট্রিটে সতেরো কাঠা জমি সমেত ওই বাড়িতে চড়াও হয়েছিল এক দল লোক। পাঁচিল টপকে কয়েক জন চৌহদ্দিতে ঢুকে পড়ে। বাড়ির ভিতর থেকে গুলি চলে। তাতে প্রাণ যায় দুই বহিরাগতের, আহত হয় একাধিক ব্যক্তি। পরে জানা যায়, হতাহতেরা এক নিরাপত্তাসংস্থার বাউন্সার, সম্পত্তির দখল নিতে যাদের পাঠানো হয়েছিল। বাড়িটিতে মন্টেসরি স্কুল চালাতেন মমতা অগ্রবাল নামে এক মহিলা। মমতা ও তাঁর সঙ্গীদের তো বটেই, পুলিশকর্মী, বাউন্সার, আইনজীবী, জমি-বাড়ির কারবারি সমেত মোট ১৫ জনকে ঘটনার পরে গ্রেফতার করা হয়। ফেরার তিন জন।
শর্ট স্ট্রিট-কাণ্ডে মোট দু’টো মামলা দায়ের হয়। একটি ষড়যন্ত্র ও বলপূর্বক অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত, অন্যটি খুনের। বুধবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে মুখ্য মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে প্রথম মামলার চার্জশিট পেশ হয়েছে। আর এ দিন দাখিল হল খুনের মামলাটির চার্জশিট। সরকারি কৌঁসুলি কৃষ্ণচন্দ্র দাস জানান, এ দিনের চার্জশিটে মমতা অগ্রবাল এবং তাঁর দুই সঙ্গী সফিক আহমেদ ওরফে পাপ্পু ও প্রমোদ সাহুর বিরুদ্ধে খুন ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তদন্তকারীরা ঠিক কী বলেছেন?
লালবাজারের খবর: ১১ নভেম্বরের সেই ভোরে ৯এ শর্ট স্ট্রিটের বাড়ির পাঁচিল টপকে বাউন্সারেরা ঢুকে পড়লে প্রথমে শূন্যে গুলি চালানো হয়েছিল। তাতে ভয় পেয়ে অধিকাংশ অনুপ্রবেশকারী পালাতে থাকে। কয়েক জন লুকিয়ে পড়ে বাড়ির এক জায়গায়। ইতিমধ্যে গোলমালের খবর পেয়ে শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, উপস্থিত পুলিশকর্মীদের সামনেই বাউন্সারদের লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে গুলি ছোড়ে মমতা-পাপ্পু-প্রমোদ। তাতে দু’জন মারা যায়, জখম হন তিন জন। শেক্সপিয়র সরণি থানার কয়েক জন পুলিশকর্মীর সামনেই যে অনুপ্রবেশকারী বাউন্সারদের গুলি করা হয়েছিল, তদন্তকারীদের হাতে তার তথ্য-প্রমাণও রয়েছে বলে চার্জশিটে জানানো হয়েছে। কী সেই প্রমাণ?
চার্জশিটের বক্তব্য: সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীরা তাঁদের সাক্ষ্যে ঘটনাটি বিবৃত করেছেন। বাড়ির সিসিটিভি-ফুটেজেও অভিযোগের প্রমাণ মজুত। তদন্তকারীদের দাবি: মমতা ও তাঁর সঙ্গীরা প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে নয়, বরং প্রাণ নেওয়ার উদ্দেশ্যে গুলি চালান। এ হেন অভিযোগ কেন?
গোয়েন্দাদের যুক্তি, ৯এ শর্ট স্ট্রিটে বহিরাগতেরা অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছিল জমির দখল নিতে। তাতে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল না। হামলাকারীদের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল না। চার্জশিটে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি আত্মরক্ষার্থে তখনই পাল্টা আঘাত হানতে পারেন, যখন তাঁর নিজের প্রাণহানির প্রবল সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ১১ নভেম্বরের ভোরে মমতা বা তাঁর দুই সঙ্গীর কারওই প্রাণের তেমন আশঙ্কা ছিল বলে প্রমাণ মেলেনি। উল্টে গোয়েন্দারা তদন্তে জেনেছেন, শূন্যে গুলি ছোড়ার পরে হামলাকারীরা পালাচ্ছিল। তারা পাল্টা আক্রমণ করেনি।
তা সত্ত্বেও প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেওয়া ওই সব ব্যক্তিকে মমতা ও তাঁর সঙ্গীরা ইচ্ছাকৃত ভাবে গুলি করেন বলে চার্জশিটে অভিযোগ এনেছে কলকাতা গোয়েন্দা-পুলিশ।
|