শিক্ষামানের উন্নয়ন তো বটেই। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়কে উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছে অনেক আগেই। ওই মান কোথায় নিয়ে যেতে হবে, সেই ব্যাপারে নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চান, প্রেসিডেন্সি ছাপিয়ে যাক অক্সফোর্ডকে। কেমব্রিজ, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সকেও। পথ দেখাক শিক্ষা বিপ্লবের।
সেই আশা থেকেই প্রেসিডেন্সির দু’শো বছর উপলক্ষে বিশ্ব শিক্ষা উৎসবের আয়োজন করার কথা বলেন মমতা। ওই উৎসব এক বা দু’দিন নয়, এক মাস চালানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিউ টাউনে প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মমতা প্রস্তাব দেন, দু’শো বছর উপলক্ষে বিশ্ব শিক্ষা উৎসবের আয়োজন করুক প্রেসিডেন্সি। বিশ্বের নামী শিক্ষাবিদ ও ব্যক্তিত্বদের এই উৎসবে সামিল করতে হবে। প্রেসিডেন্সির কৃতী প্রাক্তনীরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছেন। ওই বিশ্ব শিক্ষা উৎসবে তাঁদেরও সামিল
করতে হবে। তাঁর আশ্বাস, “রাজ্য সরকার এই কাজে বিশ্ববিদ্যালয়কে সাহায্য করবে।” |
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দেবাশিস রায়। |
তিন বছর পরেই প্রেসিডেন্সির দু’শো বছর হবে। এই তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ শেষ করার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্সিকে ওই ক্যাম্পাসের জন্য ১০ একর জমি এবং ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও সাহায্য দেওয়া হবে। তার পরেই বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তুলনা টেনে প্রেসিডেন্সির মান উন্নয়নের কথা তোলেন মমতা। তাঁর কথায়, “শুধু কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড বা লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের কেন বিশ্বজোড়া নাম হবে? মানের দিক থেকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়কে ওই সব প্রতিষ্ঠানকে ছাপিয়ে যেতে হবে। শিক্ষা বিপ্লবের পথ দেখাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়।”
প্রেসিডেন্সির উৎকর্ষ বাড়ানোর জন্য মেন্টর গ্রুপ গড়া হয়েছে। দেশ-বিদেশের নামী শিক্ষক আনার তোড়জোড় চলছে। এমনকী বিদেশি উপাচার্য নিয়োগের কথাও উঠছে। এই উদ্যোগের মধ্যেই খোদ মুখ্যমন্ত্রী এই প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা জানালেন। সরকারি সাহায্যের দরাজ প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি এ দিনের অনুষ্ঠানে বলেন, “ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। প্রেসিডেন্সিও এক দিন বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠবে। প্রতিবন্ধকতা জয় করতে হবে।”
বাধা জয়ের প্রশ্নে মমতা নিজের সরকারের প্রসঙ্গও তোলেন। নিজের সরকারের দুই মন্ত্রী অমিত মিত্র ও ব্রাত্য বসুকে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর সঙ্গে তুলনা করে তিনি জানান, অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও তাঁর অর্থ ও শিক্ষা দফতর ভাল কাজ করছে। ২৮ হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়ে গেলেও অমিত মিত্র খুব ভাল ভাবে তাঁর দফতর চালাচ্ছেন। অন্য দিকে, ৩৪ বছরে যা হয়নি, আড়াই বছরে এই সরকার সেটাও করে দেখিয়েছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। ৩১টা কলেজ তৈরির কাজ চলছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। ছ’টা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে।
এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, প্রেসিডেন্সির উপাচার্য মালবিকা সরকার, মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু, উচ্চ শিক্ষা দফতরের সচিব বিবেক কুমার। নিউ টাউনে প্রেসিডেন্সিকে ১০ একর জমি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান মালবিকাদেবী। তিনি জানান, নতুন ক্যাম্পাসে সায়েন্টিফিক ল্যাবরেটরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের আবাসন-সহ নতুন অনেক কিছু গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে। সুগতবাবু বলেন, “১৯৭ বছর আগে প্রেসিডেন্সি যখন পথ চলা শুরু করেছিল, তখন বাংলার নবজাগরণ হয়েছিল। আর এখন এই দ্বিতীয় ক্যাম্পাস একুশ শতকের বাংলার নবজাগরণের পথ দেখাবে।”
মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগতবাবু জানান, গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রেসিডেন্সির দরজা সব সময়েই খোলা। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্সির নতুন ক্যাম্পাস একটা স্বপ্নের প্রকল্প। এ দিন যে-বীজ বপন হল, তা ভবিষ্যতের জীবনকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।” |