নিজস্ব সংবাদদাতা • পাড়ুই |
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরে কেটে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি। কিন্তু এখনও পুলিশি নিরাপত্তা পায়নি পাড়ুইয়ের নিহত সাগরচন্দ্র ঘোষের পরিবার। সোমবার রাতেও তাঁদের বাড়ির কাছে কয়েকটি বোমা পড়েছে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের সদস্যদের।
সাগর ঘোষ হত্যা-মামলায় সিআইডি-র তদন্ত নিয়ে সোমবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্ট। সাত দিনের মধ্যে ঠিকঠাক তদন্ত রিপোর্ট জমা না দিলে তদন্তের দায়িত্ব সিআইডি-র থেকে কেড়ে নিয়ে কোনও নিরপেক্ষ সংস্থাকে দেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। নিহতের পরিবারের আইনজীবীর কাছ থেকে বিচারপতি জানতে পারেন, ঘটনার দুই প্রত্যক্ষদর্শী সাগরবাবুর স্ত্রী সরস্বতী ঘোষ ও পুত্রবধূ শিবানী ঘোষ নিরাপত্তা পাননি। বিচারপতি দত্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই দুই মহিলার ও তাঁদের পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন বীরভূমের পুলিশ সুপারকে। হাইকোর্টের এই নির্দেশ পালন না করলে আগামী সোমবার তিনি এমন কড়া নির্দেশ দেবেন, যা পুলিশ মনে রাখবে বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি।
সোমবার রাতে পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছিলেন, বিষয়টি তাঁদের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। যা বলার ও করার সিআইডি করবে। মঙ্গলবার অবশ্য তিনি বলেছেন, “আদালতের নির্দেশের প্রতিলিপি এখনও হাতে পাইনি। তা পেলে, নির্দেশ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অর্থাৎ, তত দিন পর্যন্ত পাড়ুইয়ের বাঁধনবগ্রামে ‘অরক্ষিতই’ থাকবে নিহতের পরিবার।
এই অবস্থায় পরিবারের লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রাতে তো বটেই, দিনের বেলাতেও বাড়িতে ভিতর থেকে তালা দিয়ে থাকছেন ওই পরিবারের সদস্যেরা। সাগরবাবুর ছেলে হৃদয় ঘোষ সোমবার রাতে হাইকোর্ট থেকে বাড়ি ফেরেন। তার পরেই তাঁদের বাড়ির কাছে দুষ্কৃতীরা বোমা ছোড়ে বলে পরিবারটির অভিযোগ। এই ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। এর আগেও বাড়ির কাছে বোমাবাজি হয়েছে। হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিবারের এক সদস্যের কথায়, “সব সময় মনে হচ্ছে, আমাদের উপরে নজর রাখা হচ্ছে। এলাকায় দাগি দুষ্কৃতী হিসেবে পরিচিত কিছু মুখ এবং মুখে গামছা বাঁধা আরও কয়েকজন ঘোরাফেরা করছে বাড়ির আশপাশে।”
এ সবের মধ্যেই কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে সাগর ঘোষ হত্যা-মামলার তদন্ত করানোর দাবি উঠছে এলাকায়। বিশেষ করে সিআইডি-তদন্ত নিয়ে হাইকোর্টের ক্ষোভ প্রকাশের পরে এলাকার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশ বলছেন, “আমরা এটাই চাইছিলাম! এর পরেও যদি সিআইডি ঠিকঠাক তদন্ত না করে, তা হলে আদালত নিশ্চয়ই সিবিআই বা সে রকম কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানোর নির্দেশ দেবে।”
পুলিশ প্রথমে যে চার জনকে ধরেছিল, তাদের মধ্যে ছিল হৃদয়বাবুর একাদশ শ্রেণিতে পড়া ভাগ্নেও। এ দিন গ্রামের বাড়িতে তার পরিবারের সদস্যরা বলেন, “আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের আর্জি নিয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু সিআইডি কী ধরনের নিরপেক্ষ তদন্ত করছে, তা বুঝতে পারছি না। নির্দোষ স্কুল-ছাত্রকে পুলিশ কেন এমন হেনস্থা করল, তারও সুরাহা হওয়া চাই।” হৃদয়বাবুর কথায়, “অভিযুক্তেরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আমাদের পরিবার আতঙ্কে কার্যত ঘরেই বন্দি হয়ে রয়েছে। পুলিশ নিরাপত্তার বন্দোবস্তও করেনি।”
সাগরবাবুর বাড়ির কাছে সোমবার সন্ধ্যায় বোমাবাজির প্রসঙ্গে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (নিহতের পরিবারের অভিযোগপত্রে তাঁর নাম একেবারে প্রথমে আছে) বলেন, “বোমাবাজি সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের দলের কেউ যুক্ত নয়। যদি কেউ করে থাকে, তারা দুষ্কৃতী।” সাগরবাবুকে তিনি চিনতেন না দাবি করে অনুব্রতবাবুর মন্তব্য, “আমি দোষী নই। বিচার ব্যবস্থার উপরে আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে।”
|