নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নিজেদের নথিপত্রে গোলমালের জেরে অবসরের বয়সের আগেই এক মজদুরের কর্মজীবনে ইতি টেনে দিয়েছিল কোল ইন্ডিয়া। উচ্চ আদালতে লড়াই চালিয়ে কর্মীটি নিজের প্রকৃত বয়সের প্রমাণ দিলেন এবং সেই অনুযায়ী আরও প্রায় পাঁচ বছর কাজ চালিয়ে যাওয়ার অধিকার আদায় করলেন। আদালতের নির্দেশ, ওই কর্মীকে অবসরের প্রকৃত দিন পর্যন্ত কাজ করতে দিতে হবে।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী প্রায় পাঁচ বছর চাকরির মেয়াদ বাড়ল প্রদ্যোত বিশ্বাস নামে কোল ইন্ডিয়ার ওই কর্মীর। সংস্থার নিজেদের নথিতে গোলমালের জন্যই ওই কর্মীকে নির্ধারিত বয়সের আগে অবসর নিতে বাধ্য করানো হয়েছিল বলে জানিয়েছে আদালত। শুধু তা-ই নয়, এই ঘটনায় সংস্থার ত্রুটি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রদ্যোতবাবুর আইনজীবী এক্রামুল বারি জানান, ১৯৮৪ সালে কোল ইন্ডিয়ার মজদুর-পদে যোগ দিয়েছিলেন প্রদ্যোতবাবু। ১৯৯৪ সালে তাঁকে সংস্থার কলকাতা সদর দফতরে বদলি করা হয়। সেই সময়েই তিনি সংস্থার সার্ভিস বুক দেখে জানতে পারেন, সেখানে নথিভুক্ত তারিখ অনুসারে ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারি তাঁর অবসর নেওয়ার কথা। কেননা সার্ভিস বুক অনুযায়ী চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারিই তাঁর ৬০ বছর বয়স হয়ে যাচ্ছে। অথচ তিনি নিজে জানেন, তাঁর বয়স অনেকটাই কম এবং ওই তারিখের পরেও বছর পাঁচেক তাঁর চাকরি থাকার কথা। চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় পূরণ করা বায়োডেটা ফর্ম বা জীবনপঞ্জি অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারি তাঁর বয়স দাঁড়ায় ৫৪ বছরের কিছু বেশি। কিন্তু সংস্থার নথিপত্রের ভুলে তার অনেক আগেই তাঁর কর্মজীবন শেষ হতে বসেছে।
কোল ইন্ডিয়া যাতে ভুল শুধরে নেয়, সেই জন্য প্রদ্যোতবাবু তখন থেকেই জন্মের শংসাপত্র এবং চাকরির বায়োডেটা ফর্ম-সহ নানা নথি নিয়ে সংস্থার বিভিন্ন বিভাগে দৌড়ঝাঁপ করতে থাকেন। কিন্তু আবেদন-নিবেদনে কোনও সুরাহা হয়নি। ২০১৪-র ৩১ জানুয়ারি তাঁর কর্মজীবন শেষ হচ্ছে বলে জানিয়ে ২০১৩ সালের শেষের দিকে প্রদ্যোতবাবুকে অবসরের চিঠি ধরানো হয়। তার পরেই তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
শুনানির সময় প্রদ্যোতবাবুর সার্ভিস বুক এবং বায়োডেটা ফর্মের মধ্যে বয়সের ফারাক দেখতে পায় উচ্চ আদালত। তার পরেই ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, বায়োডেটা ফর্মে উল্লিখিত জন্ম-তারিখকেই গ্রহণযোগ্য হিসেবে ধরতে হবে। আর সেই হিসেবে ২০১৯ পর্যন্ত চাকরি করতে পারবেন প্রদ্যোতবাবু।
আবেদনকারীর চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোল ইন্ডিয়ার মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্তৃপক্ষের গাফিলতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপতিরা। রায় দেওয়ার পরে বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ওই কর্মী যদি হাইকোর্টের দ্বারস্থ না-হতেন, তা হলে নির্দিষ্ট সময়ের পাঁচ বছর আগেই তাঁর অবসর চূড়ান্ত হয়ে যেত। সরকারি অফিসের এমন গাফিলতি আদালত বরদাস্ত করতে পারে না। এ ভাবে সংস্থার ভুল ও গাফিলতির ফাঁদে যে-সব কর্মীর ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, তাঁদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি বলেন, আরও কত কর্মী-শ্রমিকের যে এই অবস্থা হচ্ছে, তার হিসেব কে রাখবে! সকলেই তো বিচার চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন না। |