তিনি এলেন, খেললেন এবং জিতে নিলেন।
ঝটিকা সফর। আর তাতেই টাইগার উডসের জাদুতে মজে গেল রাজধানী। গল্ফার থেকে ক্রিকেটার কে ছিলেন না টাইগার ভক্তের দলে? আবেগ, রোমাঞ্চ, উল্লাস মিলেমিশে এক কোলাজের সৃষ্টি করল দিল্লি গল্ফ ক্লাবের কোর্সে।
ক্লাবের বিশাল কোর্স ঘিরে হাজার পাঁচেক মানুষের ঢল, যা অতীতে কখনও দেখেনি দিল্লি। এমন উন্মাদনা ক্রিকেটে দেখা গিয়েছে বহুবার। কিন্তু গল্ফে? ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটজয়ী দলের সদস্য মদনলালও ছিলেন ওই ভিড়ে। ডিজিসি থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, “এমন পরিবেশ দেখে চমকে গিয়েছি। অবশ্য হবে না-ই বা কেন? টাইগার উডসের জন্যই তো গল্ফ আজ এই জায়গায়। সেই কিংবদন্তিকে চাক্ষুষ দেখার উৎসাহ থাকবে না? আমি নিজেই তো বারো ঘণ্টা গাড়িতে করে ভোর চারটেয় দিল্লি পৌঁছে সকাল সকাল গল্ফ ক্লাবে চলে এসেছিলাম টাইগারকে দেখব বলে। এই সুযোগ কেউ ছাড়ে? ভারতে এমনিতেই এখন গল্ফ ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমি নিশ্চিত, আজকের পর এই জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।” |
শোনা যাচ্ছে, প্রায় পনেরো কোটি টাকা দিয়ে আনা হয়েছে টাইগারকে। আর তাঁকে ভারতে আনার মূলে যিনি, সেই হিরো মোটোকর্পের সিইও এবং এমডি পবন মুঞ্জল এও জানিয়েছেন, টাইগারের এটাই শেষ ভারত সফর নয়। মুঞ্জলের অতিথি ও দেশের সেরা গল্ফারদের সঙ্গে আঠারো হোলের খেলায় ৯ আন্ডার স্কোরে বিশ্বসেরা গল্ফারের জেতাটা বড় কথা নয়। বরং তাঁর উপস্থিতিই যথেষ্ট। গল্ফ কোর্স ঘিরে থাকা মানুষের ঢল সামলাতে হিমশিম নিরাপত্তারক্ষীরা। তবে কাউকে বঞ্চিত করেননি টাইগার। নীল টি-শার্ট ও কালো ট্রাউজার্সে কিংবদন্তি গল্ফার সবার সামনে গিয়েই হাত নেড়েছেন, হেসেছেন। আর তাতেই তৃপ্ত দর্শকরা। কিংবদন্তিকে সামনে থেকে দেখা তো গেল!
দর্শকদের মধ্যে থাকা আর এক ক্রিকেটার মুরলী কার্তিক বললেন, “আমি তো এখানে শুধুই দর্শক। অন্যদের মতো আমিও শিহরিত।” সাধারণত ক্রিকেটারদের দেখেই অন্য জগতের মানুষেরা এত দিন শিহরিত হয়ে এসেছেন। ভারতে পা দিয়েই উডস যেন .ছবিটা এক লহমায় বদলে দিলেন।
ভারতের মাটিতে প্রথম গল্ফ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে উডস নিজে কী বলছেন? তাঁর বক্তব্য, “ইট ওয়াজ অ্যান অ্যাবসোলিউট ব্লাস্ট। কী যে আনন্দ পেলাম এখানে এসে, তা বলে বোঝাতে পারব না। এখানকার গল্ফ কোর্সের প্রস্থ কম বলে নিজের টি শটগুলো নিয়ে একটু নার্ভাস ছিলাম। তবে আমার বন্ধু অর্জুনের (অটওয়াল) কাছে ভারতের গল্প যেমন শুনেছিলাম, এখানে এসে তেমনই ভাল লাগছে। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।”
আগের রাতে হোটেলে সচিন তেন্ডুলকর ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল টাইগারের। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে টুইট করলেন, “সচিন তেন্ডুলকর ওয়াজ সো কুল। ভারতে অভ্যর্থনাটাও বেশ পছন্দ হয়েছে আমার।”
মোট ১৮ হোলের খেলায় টাইগারের সঙ্গে খেললেন বাঙালি গল্ফার অনির্বাণ লাহিড়ীও। খেলার পর বললেন, “টাইগার উডসের মতো কিংবদন্তিকে এ ভাবে কাছ থেকে জানার রোমাঞ্চটাই আলাদা। ওর সঙ্গে ওর দৈনন্দিন জীবন নিয়ে কথা হচ্ছিল। কী ভাবে ডায়েট করে ওজন কমিয়েছে সেই গল্প বলছিল। দারুণ অভিজ্ঞতা। কোনও বড় ইভেন্টে ওর সঙ্গে খেলাটা আমার স্বপ্ন। সে কথাও ওকে জানালাম।” এ দিনের আর এক তারকা গল্ফার শিব কপূরের বক্তব্য, “একেবারে অন্য ধরনের অভিজ্ঞতা হল। দেশের মানুষের সামনে এ রকম একজন বিশ্বসেরা তারকার বিরুদ্ধে খেলা। চিরকাল মনে রাখব এই দিনটা।” দেশের সেরা মহিলা গল্ফার শর্মিলা নিকোলেটও ছিলেন টাইগারের বিপক্ষের তালিকায়। বেশ রোমাঞ্চিত শর্মিলা বলেন, “স্বপ্ন সত্যি হল। যেমন রোমাঞ্চিত ছিলাম, তেমন নার্ভাসও। জীবনের সেরা স্মৃতি হয়ে রয়ে যাবে এটা।”
রাতে তাঁর সম্মানে দেওয়া নৈশভোজের আসরে ঢোকার আগে গল্ফ তারকা টুইটারে লিখলেন, “আশা করি, আমার সফর সামান্য ভাবে হলেও এই অসাধারণ দেশে গল্ফকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে।”
|