পঞ্চাশ ওভারের লড়াইয়ে ওয়ান ডে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ৪-০ উড়িয়ে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে প্রত্যাশিত ভাবেই আত্মবিশ্বাসী নিউজিল্যান্ড। দু’ম্যাচের সিরিজে কিউয়িদের লক্ষ্য ‘আন্ডারডগ’ তকমাটা ঝেড়ে ফেলা। তবে বিপক্ষকে হালকা ভাবে নেওয়ার ভুলটা করছেন না ব্রেন্ডন ম্যাকালামরা। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে বৃহস্পতিবার প্রথম টেস্ট শুরুর আগে কিউয়ি ক্রিকেটমহল যথেষ্ট সমীহ করছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিম ইন্ডিয়াকে।
মার্টিন ক্রো যেমন উচ্ছ্বসিত বিরাট কোহলি নিয়ে। প্রাক্তন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক মনে করছেন, পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাওয়া ভারতীয় দলের ধ্রুবতারা কোহলি। নিজের কলামে ক্রো লিখেছেন, ‘তরুণ এই জায়েন্ট কিছু কিছু ক্ষেত্রে বীরেন্দ্র সহবাগ, সচিন তেন্ডুলকর আর রাহুল দ্রাবিড়ের কম্বিনেশন। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখে ও একান্ত নিজস্ব ক্রিকেটীয় ধরন সৃষ্টি করেছে। ওর মধ্যে রাহুলের তীক্ষ্নতা আছে। সহবাগের ঔদ্ধত্য আছে। আর আছে সচিনের অসাধারণ বৈচিত্র।’ সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘মাত্র ২২টা টেস্ট খেলেই ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের নেতা হয়ে উঠেছে কোহলি। খুব তাড়াতাড়ি শিষ্য থেকে গুরুর ভূমিকায় উঠে এসেছে ও। কোহলির পরের লক্ষ্য হল মাস্টার হওয়া। আর ওর চোখ দেখলে বোঝা যায়, সেটা ও পারবে।’ |
ভারতের কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তদের প্রত্যাশার চাপ নিয়ে খেলতে হচ্ছে কোহলিকে। বিশেষ করে চলতি সফরে, যেখানে ধোনি ছাড়া বাকি সব ব্যাটসম্যানই ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগছেন। এই চাপ সামলানো নিয়ে ক্রো-র দাওয়াই নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন। ‘কোহলিকে বুঝতে হবে যে বিশ্বের প্রতিটা কোনায় থাকা কোটি কোটি মানুষের আদর্শ হয়ে উঠতে গেলে ওকে নিজের অপ্রিয় দিকটাকে পোষ মানাতে হবে। এই শিক্ষাটা নিশ্চয়ই ও রাহুল আর সচিনের কাছ থেকে পেয়ে গিয়েছে।’
কোহলি-সহ ভারতীয় ব্যাটিংয়ের এই আগ্রাসনটাকেই আবার তাঁদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে চান কিউয়ি পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। “ভারতীয়রা খুব আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। সবাই জানে ওরা কী ভাবে খেলতে চলেছে। ওদের সুইংয়ের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করব। বল দু’দিকেই মুভ করলে ওরা যে ভাবে ডিফেন্ড করে, সেটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। আমরা যেখানে চাই সেই জায়গাগুলোয় ওদের দিয়ে শট খেলাতে পারলে তার পুরস্কার আমরা পাবই,” আত্মবিশ্বাসী বোল্ট। টেস্ট সিরিজে কিউয়ি বোলিং স্ট্র্যাটেজি নিয়ে বোল্টের ব্যাখ্যা, “ভাল লাইন আর লেংথের সঙ্গে শর্ট বল মিশিয়ে বল করব। দু’তিন ওভারের ব্যবধানে বাউন্সার দিলে ওরা থিতু হওয়ার বেশি সুযোগ পাবে না।” ইডেন পার্কে প্রথম টেস্ট হবে ড্রপ ইন পিচে, যেখানে বোল্ট মাত্র একটা টেস্ট খেলেছেন। তবে নিউজিল্যান্ডের সেরা র্যাঙ্কিংয়ে থাকা টেস্ট বোলার বলছেন, “পিচে প্রচুর বাউন্স আছে। ব্যাটিংয়ের জন্য ভাল, আবার শেষের কয়েক দিন বল টার্ন করে। যদিও এ বার ভারতীয় স্পিনারদের কথা মাথায় রেখে সেটা না-ও হতে পারে।”
এই টেস্টে অভিষেক ঘটাতে পারেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিউজিল্যান্ড লেগস্পিনার ইন্দ্রবীর সিংহ সোধি। ইশ সোধি নামে পরিচিত ২১ বছরের লেগস্পিনারের জন্ম লুধিয়ানায়। ছোটবেলায় কয়েক বছর ভারতে কাটানো সোধির আদর্শ অনিল কুম্বলে। লেগস্পিন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্নের ক্লাসও করে ফেলেছেন তিনি। ড্যানিয়েল ভেত্তোরির কথায় ‘বিশেষ প্রতিভা’ সোধি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৩ ম্যাচে ৪৬ উইকেটের মালিক, এবং ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন।
তুলনায় ভারতীয় বোলিং চলতি সফরে সম্ভবত তাদের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাডেজার মধ্যে যে কোনও এক জনের খেলার সম্ভাবনা অকল্যান্ডে। চাপে রয়েছেন ভারতীয় পেসাররাও। ৫৩ টেস্টে ১৪৯ উইকেট নেওয়া ইশান্ত শর্মা ধারাবাহিক ভাবে ভাল বল করতে পারছেন না। গত রবিবার প্র্যাকটিস ম্যাচে তাঁর দশটা নো-বল যার অন্যতম প্রমাণ। বোলিং বিভাগকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব তাই অনেকটাই জাহির খানের উপর, যাঁর প্রথম টেস্টে খেলার সম্ভাবনা যথেষ্ট উজ্জ্বল। মহম্মদ শামি অবশ্য ভাল ছন্দে রয়েছেন। তবে ছ’জন পেসারের মধ্যে কোন তিন জন শেষমেশ সুযোগ পাবেন, তা নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ আছে। ইশান্ত, শামি, জাহির ছাড়া ১৭ জনের স্কোয়াডে আছেন উমেশ যাদব, ঈশ্বর পাণ্ডে এবং ভুবনেশ্বর কুমার।
|