সাড়ে তিন মিনিটের অনুষ্ঠান শেষেও মায়াবী বিভ্রম কাটছিল না। বোঝা যাচ্ছিল না, কোথায় কাটল এই সময়টা? রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হল! না কি ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম! রাইসিনা হিলসে ‘ভারতরত্ন’ পুরস্কারের প্রতীকী আভিজাত্যকেও যেন ছাপিয়ে গেল সচিন-আবেগ।
সচিন তেন্ডুলকর এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তামণি নাগেসা রামচন্দ্র রাওকে এ দিন ভারতরত্ন পুরস্কারে সম্মানিত করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি ভবনে এ ধরনের অনুষ্ঠান যে আদবকায়দায় হয়, আয়োজন ছিল তেমনই। কিন্তু ফারাক গড়ে দিল পরিবেশটা। রাষ্ট্রপতি ভবনের গরিমা, তার প্রোটোকল, সব কিছু দূরে সরিয়ে রেখে ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তিকে ঘিরে আবেগে ভেসে গেলেন অতিথিরা। |
এখানেও সেই সই শিকারিদের ভিড়। এবং তা এতটাই যে, প্রণব-মনমোহন-সনিয়া-সচিনের চা চক্রের নিরাপত্তার বেড়া ভেঙে পর্যন্ত ঢুকে পড়তে চাইছে। কে নেই সেখানে! কেন্দ্রীয় সরকারের পদস্থ আমলা, তাঁদের স্ত্রী, পরিবার। এমনকী সেনা কর্তার উর্দির শাসনও মাথা নোয়াল এই উন্মাদনার কাছে।
অথচ মজার বিষয়, যাঁর জন্য এই প্রথা ভাঙা, তিনি অবিচল। বরং ক্যামেরার ফ্রেমে যেন আরও এক বার ধরা পড়ল গত ১৬ নভেম্বরের সেই সচিনকে। তাঁর অবসর নেওয়ার দিনের মতোই সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্ন নিলেন না। শুধু বলে গেলেন, “আমার ক্রিকেটজীবন শেষ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ভারতের জন্য ব্যাটিং করে যাব। এ দেশে জন্মে আমি গর্বিত।” |
গর্ব আজ গোটা দেশেরও। গর্বিত তাঁর প্রাক্তন সতীর্থরাও। এই প্রথম দেশের ক্রীড়াব্যক্তিত্বের জন্য খুলে গেল ভারতরত্নের দরজা। ক্রিকেটার হিসাবে এটা কতটা গর্বের, সেটাই বলছিলেন এক সময়কার সচিনের দুই অধিনায়ক।
অনিল কুম্বলের বক্তব্য, “ভেবে খুব গর্ববোধ হচ্ছে যে, একজন ভারতরত্নের সঙ্গে বছরের পর বছর একই দলে খেলেছি, একই ড্রেসিংরুমে থেকেছি।” তাঁর ‘ছোটবাবু’কে নিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের গলাতেও প্রায় একই সুর। “আমার এক সময়ের সতীর্থ আজ ভারতরত্ন, এই অনুভূতিটাই দারুণ। সচিন ভারতীয় ক্রিকেটকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছে। এই সম্মান ওর প্রাপ্য ছিল,” এবিপি আনন্দের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন সৌরভ।
শুধু সচিনের সতীর্থরা নন, খুশি প্রাক্তনরাও। মদনলাল যেমন বললেন, “সচিনের যা কৃতিত্ব, তাতে এই সম্মান ওর হাতেই মানায়।” বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সুরেশ রায়না নিউজিল্যান্ড থেকে টুইট করেছেন, “প্রেরণা। বিশ্বাস। আশা। সত্যিকারের ভূমিপুত্র। ভারতরত্ন সচিন।”
পুরস্কার ঘোষণার দিন থেকেই ধ্যানচাঁদ-বিতর্কের ছায়া পড়েছে সচিনের উপর। এ দিনও এক বারের জন্য উঠেছিল সেই প্রসঙ্গ। এবং খোদ সচিনের সামনেই। মাস্টারব্লাস্টার শুধু বললেন, “অবসর গ্রহণের দিন যে কথা বলেছিলাম, আজও সেই কথাটাই বলতে চাই। এই সম্মান আমার মায়ের পাশাপাশি দেশের সব মায়েদের উৎসর্গ করছি।” |
স্ত্রী অঞ্জলি এবং মেয়ে সারা-কে নিয়ে এসেছিলেন সচিন। যাবতীয় উৎসাহ তেন্ডুলকর পরিবারকে ঘিরে আবর্তিত হওয়ায় পার্শ্বচরিত্রে পরিণত হন অপর ভারতরত্ন প্রাপক অধ্যাপক সি এন আর রাও। তবে তাঁকেও কুর্নিশ জানাতে ভোলেননি সচিন। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করতে দেখা যায় ক্রিকেট কিংবদন্তিকে। পরে সচিন বলে যান, “অধ্যাপক রাও-কে অভিনন্দন জানাতে চাই। আশা করি তাঁর এই বিজ্ঞানসাধনা নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে।”
|
পুরনো খবর: আজ ভারতের রত্নবরণ |