সাবিথের সেই হেড। রবিবার যুবভারতীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
সাবিথকে নিয়ে চিমা-ওডাফা এবং সবুজ-মেরুন জনতার উচ্ছ্বসিত হওয়ার কারণ অবশ্য একটা নয়, অনেক। প্রধান স্ট্রাইকার ওডাফার চোট। ক্রিস্টোফারের আইএফএ শিল্ডে রেজিস্ট্রেশনই হয়নি। এই অবস্থায় করিমের হাতে প্রকৃত স্ট্রাইকার বলতে সাবিথ এবং শঙ্কর ওঁরাও। সিকিম ম্যাচে সাবিথ ব্যর্থ হলে মরক্কান কোচের সমস্যা নিঃসন্দেহে আরও বাড়ত। কিন্তু রবিবার বিপক্ষের চক্রব্যুহর মধ্যেও যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রায় চার ফুটের স্পটজাম্পে হেডে গোল করলেন সাবিথ, তাতে ‘আতঙ্কের রাত কাটানো’র থেকে হয়তো আপাতত মুক্তি পাবেন করিম! সাবিথ অবশ্য বললেন, “এ বার আই লিগের প্রথম ম্যাচেই বেঙ্গালুরুকে এ রকম গোল দিয়েছিলাম। কিন্তু দল জিততে পারেনি। আজ ভাল লাগছে। গোল করলাম, দলও জিতল।”
তবে একা সাবিথ নন, ওডাফার অভাব বুঝতে দিলেন না কাতসুমিও। অ্যাটাকিং থার্ডে সিকিম ডিফেন্ডারদের বেশ কয়েকবার নাকানিচোবানি খাওয়ালেন বাগানের ‘জাপানি-বোমা’। ডেনসন-ওয়াহিদকে নিয়ে একটা ‘ত্রিশূল’ বানিয়ে চমৎকার ওয়াল-প্লে খেলে গেলেন সারাক্ষণ। একইসঙ্গে উইংয়ে অনবরত ওঠানামা করা রাম, পঙ্কজের জন্য বল সাপ্লাইয়েরও কমতি রাখলেন না। ফুটবলে আক্রমণের নিখুঁত সমন্বয়ের উদাহরণ। ম্যাচে ৭০ ভাগ বলপজেশন ছিল মোহনবাগানেরই। যতটুকু সময় বল কন্ট্রোলের সুযোগ পেল সিকিম, তাতে লং-বল থিওরি বেছে নিয়েছিলেন কোচ একেন্দ্র সিংহ। ম্যাচ শেষে সিকিম কোচের সাফাই, “মাঝমাঠে বল ধরে খেলার লোক ছিল না আমার। বাধ্য হয়ে পাসিং ফুটবল ছেড়ে লং বল-এ যেতে হল। তবে মোহনবাগানকে কৃতিত্ব দিতে হবে।”
তা বলে কি রবিবারের বাগানে কোনও খুঁত ছিল না? ছিল। আর সে জন্যই অ্যাটাকিং থার্ডে দাপট নিয়ে খেলেও একটার বেশি গোল এল না। মাঝমাঠের সৌজন্যে গোলের সুযোগ হয়তো তৈরি হয়েছে কিন্তু ফিনিশ করার লোক নেই যে। কখনও নিশানায় গলদ, কখনও গোলের সামনে আত্মবিশ্বাসের অভাব। সে জন্য ম্যাচ শেষের তিন মিনিট আগে একটা পেনাল্টিও নষ্ট করলেন ওয়াহিদ। যে স্পটকিক মারলেন তাতে না জোর, না সাহস। যেন সতীর্থকে সাধারণ পাস বাড়াতে গিয়ে সিকিমের বাঙালি গোলকিপার দিব্যেন্দু সরকারের হাতে বল তুলে দিলেন!
তার পরেও সব মিলিয়ে রবিবাসরীয় দুপুরে ওডাফাহীন মোহনবাগান যে ফুটবল খেলল, তাতে শিল্ড জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারেন সমর্থকেরা! তবে তার জন্য করিমকে মাঘের সাতসকালে আরও ঘাম ঝরাতে হবে। বিশেষ করে সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে।
মোহনবাগান: মনোতোষ, শৌভিক (আইবর), ইচে, কিংশুক, প্রীতম, রাম, ডেনসন, ওয়াহিদ, পঙ্কজ (সাইজু), কাতসুমি, সাবিথ (শঙ্কর)
|
শিল্ডের প্রথম ম্যাচ দাপট নিয়ে খেলে জিতেও বাগান পুরোপুরি কন্টকমুক্ত হতে পারছে না। সেমিফাইনালে ওঠার পয়েন্টের অঙ্ক চিন্তায় ফেলেছে কোচ করিমকে। মোহনবাগানের সেমিফাইনালের টিকিট পাওয়ার রাস্তা হঠাৎ কঠিন হয়ে পড়ার পিছনে মহমেডান। রবিবার গ্রুপ ‘বি’র অন্য ম্যাচে বাংলাদেশের শেখ জামাল ধানমণ্ডিকে ২-১ হারিয়ে মহমেডান শেষ চারে ওঠা কার্যত নিশ্চিত করে ফেলল (২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট, গোলপার্থক্য +৪)। এবং তাতে সমস্যা বাড়ছে ওডাফাদের। কেননা পরের দু’টো ম্যাচ (মহমেডান ও ধানমন্ডি) থেকে মোহনবাগানকে অন্তত ৪ পয়েন্ট পেতে হবে। অর্থাৎ গ্রুপের বাকি দু’টো ম্যাচের একটাও হারলে চলবে না বাগানের (১ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট, গোলপার্থক্য +১)। ধানমন্ডি (১ ম্যাচে ০ পয়েন্ট, গোলপার্থক্য -১) এ দিন হারলেও তাদের সেমিফাইনালের আশা শেষ নয়। পরের দু’টো ম্যাচে সিকিম এবং বাগানকে বড় ব্যবধানে হারালে শেষ চারে চলে যাবে। আবার মোহনবাগান পরের ম্যাচে মহমেডানকে হারিয়ে শেষ ম্যাচে ধানমন্ডির কাছে হারলে সে ক্ষেত্রে তিন দলই ৬ পয়েন্টে শেষ করবে। তখন গোলপার্থক্য দেখা হবে। গ্রুপের শীর্ষ দু’দল উঠবে সেমিফাইনালে। এ দিন মহমেডান-ধানমন্ডি ম্যাচ ভিভিআইপি বক্সে বসে দেখার পর করিম বললেন, “গ্রুপ অব ডেথ-এ পড়ে গেলাম। পরের দু’টো ম্যাচ জিততেই হবে।” |