তিন নম্বর কিপার ভরসা তবুও ‘হাসি’ করিমের
কোমরে হাত দিয়ে লম্বা সুঠাম শরীরটা দাঁড়িয়ে। সামনে রাখা কাঠের চেয়ারে একটা হাত রাখলেন, কিন্তু বসলেন না। দু’টো চোখ মাঠের চার দিকে একবার বুলিয়ে সোজা উঠে পড়লেন টঙে। থুড়ি, চেয়ারের মাথায়!
একটু পরে কী খেয়াল হল, নিজেই নেমে বসলেন চেয়ারে। তবে সেখানেও বেশিক্ষণ নয়। সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা গোটা মাঠের এক চক্কর খাওয়ার আগেই ফের জায়গা-বদল। চেয়ার ছেড়ে এ বার সোজা টেবিলের উপর উঠে বসলেন করিম বেঞ্চারিফা। অনবরত দু’হাতের চেটো কচলাচ্ছেন, কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
শনিবার সাত-সকালে করিমের মুখ চুন করে বসে থাকার দৃশ্যে যদি মোহনবাগানের ‘ভেঙে-পড়া’-র ছবি ভেসে ওঠে, তা হলে অনুশীলনে তাঁর চনমনে মেজাজ হয়ে উঠতে পারে টিম স্পিরিটের সেরা বিজ্ঞাপন!
ওয়াহিদ সালি-প্রীতম কোটালদের নিয়ে কখনও খুনসুটিতে ব্যস্ত, কখনও আবার ইচে-সুয়োকার সঙ্গে হাসি-ঠাট্টায় মগ্ন। মাঝে মধ্যে তাঁর গমগমে গলা থেকে চিৎকারও ভেসে আসছে, “আমি তোমায় ভালবাসি। ওয়ান-টু-থ্রি মোহনবাগান।” মজার ব্যাপার হল, করিমের হাত থেকে এ দিন নিস্তার পেলেন না বাগান তাঁবুতে প্র্যাকটিস দেখতে আসা ওডাফা-ভক্তরাও। চোটের জন্য শিল্টন পাল ও সন্দীপ নন্দী খেলতে পারবেন না। অগত্যা অনামী মনোতোষ ঘোষ ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই। বর্ধমানের ছেলেটির এটাই প্রথম অভিষেক ম্যাচ। তাই গোলকিপারের খোঁজে সমর্থকদের খোলা প্রস্তাব দিতেও ছাড়লেন না তিনি। মজা করে কখনও মাঠ থেকে বল মারছেন গ্যালারির উদ্দেশে। কখনও ফুটবলারদের দিকে। আর কেউ বলে হাত দিলেই প্রশ্ন ভেসে আসছে, “আপনি গোলকিপিং করতে পারেন মনে হচ্ছে..., বাঁ হাত দিয়ে আরও একবার ধরুন তো..., দেখি আপনার ডান হাতটা ভাল মনে হচ্ছে।” যখন ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার জোগাড়, তখনই উচ্চঃস্বরে হেসে উঠছেন করিম!

হাল না ছাড়া পণ। বাগান প্র্যাকটিসে করিম।
শনিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
বোঝা গেল, এ দিন বাগানের মরক্কান কোচ কোনও নির্দিষ্ট অভিধান মেনে চলবেন না। একই সঙ্গে অনুশীলনের এই আপাতবিরোধী দুটো দৃশ্যই বুঝিয়ে দিচ্ছিল কী অপরিমেয় চাপ নিয়ে রবিবার আইএফএ শিল্ডে ইউনাইটেড সিকিম ম্যাচটা খেলতে নামছেন বাগান কোচ। নইলে যে টিমের অর্ধেকের বেশি ফুটবলার চোট আর রেজিস্ট্রেশনের সমস্যায় আটকে, সেই টিমের কোচ হাসি-ঠাট্টায় নিজেকে ব্যস্ত রাখেন কী করে? করিমের অবশ্য যুক্তি, “শুক্রবার রাতে হোপ ফর রেফিউজিস নামে একটা তথ্যচিত্র দেখছিলাম। সেখানে দেখাল কী কঠিন পরিস্থিতিতে কঙ্গোর উদ্বাস্তুরা জীবন-যাপন করছে। খাবার নেই। মাথার উপর ছাদ নেই। বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেক দিন কী নির্মম পরিশ্রম করছে। ছবিটা দেখার পরে মনে হল, ওদের থেকে তো আমি অনেক গুণ ভাল আছি। কঙ্গোর সেই উদ্বাস্তুরা যদি বেঁচে থাকার জন্য এত লড়াই করতে পারে, তা হলে আমি পারব না কেন? কী নেই, তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। যা আছে, তা নিয়েই এগোবো।”
কঙ্গো-যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে করিম দলের নির্ভরযোগ্য ফুটবলারদের না থাকার শোক মুছে ফেললেও, বাস্তবে কি তা দিয়ে বাগানের ট্রফি-খরা কাটানো সম্ভব? ওডাফা-ক্রিস্টোফার-রোউইলসন-সহ প্রথম দলের ছ’জন ফুটবলার নেই। শিল্ডে চার বিদেশি খেলানোর সুযোগ থাকলেও, খেলতে পারবেন শুধু ইচে-সুয়োকা। নিয়মিত গোলকিপার নেই। সে যতই দলের তৃতীয় গোলকিপার মনোতোষ বলুন না কেন, “করিমস্যার আমার উপর বিশ্বাস রেখেছেন। তাকে মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করব,” তবু আশঙ্কা তো একটা থেকেই যাচ্ছে। আর সেটা করিমের শরীরী ভাষাতেও স্পষ্ট। শনিবার অনুশীলন দেখে যা মনে হল, তাতে চার ডিফেন্ডার ইচে, সৌভিক-প্রীতম-কিংশুক। মাঝমাঠে রাম-ডেনসন-পঙ্কজ-ওয়াহিদ। ফরোয়ার্ডে কাতসুমি-সাবিথ জুটি। উলটো দিকে আবার মহমেডান ম্যাচে রেজিস্ট্রেশন-সমস্যায় আটকে থাকা ভাইচুং ভুটিয়ার ক্লাবের নতুন বিদেশি স্ট্রাইকার রবিবারের ম্যাচে খেলতে পারবেন। করিম বলছিলেন, “ইউনাইটেড সিকিম আই লিগের টিম না হলেও, প্রচুর প্রতিভাবান ফুটবলার আছে ওদের। যে কোনও টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ জিতলে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। তবে রবিবারের ম্যাচ সহজ হবে না।”
সহজ নয় তো বটেই। কেননা ইউনাইটেড সিকিমের কাছে হারানোর কিছু নেই। কিন্তু মোহনবাগান জিততে না পারলে, এ বছরও সম্ভবত ট্রফিহীনের লজ্জা নিয়ে থাকতে হবে। চা-র-টে পয়লা বৈশাখ এল আর চলে গেল। মোহনবাগানের ঘরে আর ট্রফি ঢুকল না। শিল্ড না জিতলে এ বারের নববর্ষের সন্ধ্যাতেও সাফল্যের আলোকের ঝর্নাধারায় মোহনবাগানকে ধুইয়ে দেওয়ার মতো কোনও পরিস্থিতি তৈরি করতে পারবেন না করিম। ওই দিন সকালে ঘটা করে বারপুজো হবে, লুচি, আলুর দম, পান্তুয়া বিতরিত হবে। আর আমরা খুব যত্ন করে ভুলে যাব এ বারও ট্রফি এল না!

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.