প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের অনুরোধে তিন দিনের মাথায় অনশন প্রত্যাহার করলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। যার জেরে তৃণমূল শিবির থেকে উড়ে এল কটাক্ষ!
রায়গঞ্জে এইম্সের ধাঁচে হাসপাতালের দাবি, টেট-দুর্নীতি-সহ রাজ্যে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ময়দানে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে গত শুক্রবার দুপুর থেকে অনশনে বসেছিলেন দীপা। সঙ্গে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের জনা পঞ্চাশ কর্মীও। অনশনের তৃতীয় দিনে রবিবার সকালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য-সহ ৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল কলকাতা সফররত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজভবনে দেখা করেন। তখনই প্রদীপবাবুর মোবাইল থেকে প্রধানমন্ত্রী দীপাকে ফোন করে অনুরোধ করেন অনশন তুলে নিতে। ব্যক্তিগত অনিচ্ছা সত্ত্বেও দলের শৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধেই তিনি অনশন প্রত্যাহার করছেন বলে দীপা জানান। বিকেলে ফলের রস খাইয়ে দীপার অনশন ভাঙান বর্ষীয়ান নেতা সোমেন মিত্র।
পরে দীপা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ফোনে তাঁকে বলেছেন, রায়গঞ্জে এইম্স গড়ার লড়াই শুধুমাত্র তাঁর একার নয়। কংগ্রেসের সব কর্মীরও লড়াই। রায়গঞ্জে ওই হাসপাতাল গড়ার জন্য প্রাক্তন মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির কাছে প্রধানমন্ত্রী দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতা পূরণে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। দীপার কথায়, “প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই তাঁর এই সিদ্ধান্ত সাকার করতে পদক্ষেপ করবেন। তার পরেও ফ্যাসিস্ত মুখ্যমন্ত্রী জমি অধিগ্রহণ না-করলে আমরা আমরণ অনশনে বসব!” দিল্লিতে কয়েক দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে হাসপাতালের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা করবেন বলে দীপা জানান।
তিন দিনের মাথায় দীপার অনশন-প্রত্যাহারে তৃণমূল কটাক্ষ করবে আগাম আঁচ করেই দীপার হুঁশিয়ারি, “অনশন তোলার পরেই তৃণমূল বলবে, দিদির সঙ্গে টক্কর দেওয়া থেমে গেল? বা খিদেয় অনশন তুলে নিয়েছি! কিন্তু তৃণমূল ও মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দিতে চাই, ২৬-২৭ দিনের সংখ্যার অনশনে আমরা যাব না। প্রধানমন্ত্রীর চেষ্টাতেও ফল ভাল না হলে আমরণ অনশনই করব!”
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীপাকে এক সারিতে আনতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “ওঁর (দীপা) অনশন প্রথম থেকেই রাজনৈতিক চমক! রায়গঞ্জে জনসমর্থন থাকলে সেখানেই অনশনে বসতেন। তা না করে গাঁধী মূর্তিতে বসেও ব্যর্থ হলেন। মমতার সঙ্গে তুলনা করলে ওঁকে বেশি সম্মান দেওয়া হবে! মমতার লড়াইয়ের ক্ষমতা, ত্যাগ, তিতিক্ষার ছিঁটেফোটাও ওঁর নেই।”
অনশন প্রত্যাহারে দলের কর্মীরা মনোক্ষুণ্ণ হতে পারেন বুঝে প্রদীপবাবুও বলেন, “এটা সাময়িক বিরতি। অপেক্ষায় কাজ না হলে ফের আন্দোলনের পথেই যেতে হবে আমাদের।” রাজ্যে আইনশৃঙ্খলায় নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার জন্য অনশন-মঞ্চ থেকেই দীপা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির উদ্দেশে বলেন, “নবান্ন চলো’র ডাক দিন প্রদীপ’দা। দেখি কোন পুলিশ আমাদের রোখে!”
রাজ্যে একের পর ধর্ষণ-সহ নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এ দিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানান কংগ্রেস নেতারা। রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন বলে পরে প্রদীপবাবু জানান। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা টেট-এ দুর্নীতির অভিযোগের নিরিখে যৌথ তালিকাভুক্ত শিক্ষায় মানবসম্পদ মন্ত্রক যাতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে, রাজ্য কংগ্রেস সে অনুরোধও করেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। রাজ্যের বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ভাবে তদন্ত চালানোর আর্জিও জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা।
|