প্রধানমন্ত্রী ফিরতেই ‘স্বমহিমা’য় ধর্মতলা
মাত্র পাঁচ ঘণ্টার ফারাক। তাতেই বদলে গেল ধর্মতলা চত্বরের ছবিটা। বলা ভাল, ফিরে এল পুরনো ছবি।
ভারতীয় জাদুঘরের দ্বিশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার শহরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। রাজভবন থেকে জাদুঘর পর্যন্ত তাঁর যাত্রাপথের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে রাস্তার পাশ থেকে হকার তুলে দিতে বলেছিল স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি)। সেই কারণে শুক্রবার থেকেই ধর্মতলা চত্বরে সমস্ত হকারকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। শনিবার বিকেলের পরে মেট্রো সিনেমার সামনে থেকে জাদুঘর পর্যন্ত কোনও হকার বসতে পারেননি। ধর্মতলা চত্বরের ফুটপাথের ফাঁকা চেহারা দেখে অনেকেই বলেছিলেন, পরিচিত ভিড়ের ছবিটা যেন কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছে! শহরের প্রাণকেন্দ্রে যে এত বড় ফুটপাথ রয়েছে, তা-ও জীবনে প্রথম বার দেখছেন এমনটাও বলেছিলেন অনেকে।
সকাল সাড়ে ১০টার চিত্র। ঘড়িতে তখন ঠিক বিকেল সাড়ে ৩টে।
এমনই এক জন, বছর তিরিশের সৌম্য মুখোপাধ্যায়। শনিবার সন্ধ্যায় ধর্মতলা চত্বরের অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে রোজকার থিকথিকে ভিড়ে ঠাসা ফুটপাথের সুনসান চেহারা দেখে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “ধর্মতলা চত্বরটা যেন চিনতেই পারছি না! এমনটা যদি সব সময় থাকত!” ফুটপাথ ফাঁকা ছিল রবিবার সকালেও। সকাল সাড়ে দশটায় গ্র্যান্ড হোটেলের সামনের ফুটপাথে রীতিমতো ক্রিকেট ম্যাচ বসে গিয়েছে! যা দেখে পথচলতি এক তরুণীর বিস্মিত মন্তব্য, “এই ফুটপাথটা যে এমন, তা এই প্রথম দেখলাম!”
কিন্তু এ দিন দুপুরের পরে প্রধানমন্ত্রী শহর ছাড়তেই ফের ধর্মতলার ফুটপাথ ফিরে যায় চেনা চেহারায়। দোকান পেতে ফের বিকিকিনি শুরু করে দেন হকারেরা। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধু মেট্রো সিনেমার সামনেই ভিড় জমেছিল। নিউ মার্কেট কিংবা লিন্ডসে স্ট্রিটের সামনে জওহরলাল নেহরু রোডের ফুটপাথে হকার বসেনি। তবে আজ, সোমবার সকাল থেকে ওই এলাকাতেও হকার বসতে পারবে বলেই পুলিশ সূত্রের খবর।
এক দিনের মধ্যে ধর্মতলা চত্বরে যেমন ভিড় ফিরে এসেছে, তেমনই ফিরে এসেছে পথচারীদের অসুবিধাও। এ দিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ মেট্রো সিনেমার সামনের ফুটপাথে গিয়ে দেখা গেল, ফুটপাথের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসে পড়েছেন বিক্রেতারা। চুটিয়ে কেনাকাটা করতে হাজির দলে দলে লোক। এক কথায়, পরিচিত হাটের চেহারাতেই ফিরে গিয়েছে ধর্মতলা। আর নিয়ম মেনে ফুটপাথ দিয়ে চলতে গেলে ভিড় কাটিয়ে বা ধাক্কা খেয়ে চলতে হচ্ছে পথচলতি মানুষকে। তাঁদের কারও হাতে ঢাউস ব্যাগ তো কারও কোলে একরত্তি শিশু।
কোলের শিশুকে নিয়ে ধর্মতলার ফুটপাথ ধরে যাচ্ছিলেন সামির খান। পেশায় চিকিৎসক সামির বলেন, “এ ভাবে চলতে অসুবিধা তো হয়ই। হকার উচ্ছেদ না করলেও নিয়ন্ত্রণ তো করা যেতেই পারে।” একই মত গৃহবধূ নীলিমা চক্রবর্তীরও। সপরিবার ধর্মতলায় এসেছিলেন ব্যবসায়ী অনুপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “ভিড়ের মধ্যে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলাফেরা করতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়।”
কেউ কেউ অবশ্য ফুটপাথের হকার নিয়ে খুশিও। যেমন, সদ্য ডাক্তারি পাশ করা ঐন্দ্রিলা বিশ্বাস। তিনি বলছেন, “হকার তুলে দিলে ধর্মতলার চরিত্র বদলে যাবে।” তাঁর দুই বন্ধু আকাশ গুহ এবং গৌরব বসু আবার ধর্মতলা বাদ দিয়ে শহরের বাকি রাস্তায় হকার উচ্ছেদের পক্ষে। তাঁদের যুক্তি, ধর্মতলার ফুটপাথ তুলনায় চওড়া। কিন্তু হাতিবাগান বা শ্যামবাজারের সরু ফুটপাথ জুড়ে যে ভাবে হকারেরা তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসেন, তাতে চলাফেরা করাই যায় না।
তবে ধর্মতলাকে যে আরও অনেক সুন্দর করে তোলা যায়, তা মেনে নিয়েছেন এঁরা প্রত্যেকেই। কিন্তু সেটা আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ধর্মতলা এলাকার নিত্যযাত্রীরা। এমনই এক জন বছর পঞ্চান্নর দেবপ্রিয় স্যান্যাল। তাঁর কথায়, “কেনাকাটা করতে আসা লোকেরা হকার পছন্দ করতেই পারেন। কিন্তু আমাদের মতো যাঁরা নিত্যদিন এই ভিড় ঠেলে যাতায়াত করেন, তাঁরা এর সমস্যাটা বুঝতে পারবেন।”
বস্তুত, কলকাতার অনিয়ন্ত্রিত হকার নিয়ে সমস্যা দীর্ঘদিনের। কখনও কখনও উচ্ছেদ অভিযান চললেও ধর্মতলা, হাতিবাগান কিংবা গড়িয়াহাটের মতো ব্যস্ত এলাকায় রাস্তা দখল করে হকার রয়েই গিয়েছে। দখল করা ওই ফুটপাথগুলি দিয়ে চলাফেরা করা নিত্যদিনের যন্ত্রণা এ শহরের বাসিন্দাদের। প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা মেনে যদি এক দিনের জন্য ধর্মতলা হকারমুক্ত করা যায়, তা হলে সব সময় কেন তা করা যায় না?
পুলিশের বক্তব্য, হকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু হকার উচ্ছেদ করাটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তা ছাড়া, হকার উচ্ছেদ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যাও হতে পারে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ধর্মতলা এলাকায় প্রচুর হকার ব্যবসা করেন। হঠাৎ রুজিরুটিতে বাধা দেওয়ার আগে মানবিক দিকটাও ভেবে দেখতে হয়।”
পুলিশ-প্রশাসন বললেও ওই এলাকা ছেড়ে যেতে রাজি নন হকারেরা। ওই এলাকার হকার নেতা জাহিদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পুলিশ দোকান বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছিল। তাই প্রশাসনকে সাহায্য করেছি। কিন্তু জোর করে সরিয়ে দিলে তা মানব না।”

রবিবার, ডোরিনা ক্রসিং-এর উত্তর দিকের ফুটপাথে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.