পর্যটনেরও ঢালাও রসদ জাদুঘরে চান মনমোহন
নিছক প্রত্নসামগ্রীর সংগ্রহশালা নয়। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ চান, পর্যটকদের আকর্ষণেরও কেন্দ্র হয়ে উঠুক দেশের বিভিন্ন জাদুঘর। সেগুলিকে তিনি এমন আকর্ষণীয় জায়গা হিসেবে দেখতে চান, যেখানে দর্শকেরা মনোরম পরিবেশে ঐতিহাসিক নানা নিদর্শন চাক্ষুষ করবেন, শিখতে পারবেন অনেক কিছু। পাবেন ভ্রমণের সুখও।
এ প্রসঙ্গে বিদেশের উদাহরণ টেনেছেন প্রধানমন্ত্রী। রবিবার কলকাতায় ভারতীয় জাদুঘরের দ্বিশতবার্ষিকী উদ্যাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসে মনমোহন বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় জাদুঘরগুলো এখন গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনস্থল হয়ে উঠেছে। ইদানীং কালের বহু বড় শহরের পরিচিতির পিছনে রয়েছে সেখানকার অসাধারণ কিছু জাদুঘর। মানুষ হাজার হাজার মাইল উজিয়ে তা দেখতে যাচ্ছেন।”
এ দিন নব কলেবরে সেজে ওঠা ভারতীয় জাদুঘরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় গ্রামীণ জাদুঘর তৈরি করা হবে। রাজ্যে ঐতিহাসিক সংরক্ষণের জন্য ১৬৬টি জায়গা প্রাথমিক ভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এবং এ ব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতা করছে পুরাতত্ত্ব বিভাগ। “যখন স্কুলের ছাত্রী ছিলাম, তখন বন্ধুদের সঙ্গে এই জাদুঘর দেখতে এসেছি। সে কথা আজ মনে পড়ছে” বলেন মমতা।
ভারতীয় জাদুঘরের দু’শো বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের
সঙ্গে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, এক জন পর্যটক বা দর্শককে সমৃদ্ধ করতে হলে নিশ্চিত করতে হবে, জাদুঘর ঘুরে তাঁর যেন পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা হয়। সে জন্য নিদর্শন সংরক্ষণ, নির্ভুল তথ্যের উল্লেখ ও প্রদর্শসামগ্রীর তালিকা তৈরির কাজ ব্যাপক ও সুবিন্যস্ত ভাবে হওয়া জরুরি বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। তাঁর কথায়, “বাইরে থেকে, বিশেষত বিদেশ থেকে কলকাতায় আসা প্রতিটি মানুষের অন্যতম গন্তব্যে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ভারতীয় জাদুঘরকে এগোতে হবে।” ভারতে জাদুঘর আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাবের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মনমোহন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে মিউজিওলজি বিষয়টি যে ভারতে অবহেলিত, তা জানাতেও ভোলেননি। প্রধানমন্ত্রীর মত, এই পরিস্থিতির সুরাহার উদ্যোগে কলকাতাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ভরসা রাখলেও ১৮১৪ সালে তৈরি হওয়া কলকাতার ভারতীয় জাদুঘর ঘিরে বিতর্কের কিন্তু অন্ত নেই। সংস্কারের স্বার্থে গত সেপ্টেম্বর থেকে জাদুঘরের দরজা সাধারণ মানুষের সামনে বন্ধ ছিল। সেই সময়ে আনাড়ি হাতে স্থানবদলের ফলে বেশ কিছু দুর্মূল্য প্রত্নবস্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, অসাবধানে এ দিক-ও দিক করতে গিয়ে গত ডিসেম্বরে নষ্ট হয়েছে রামপূর্বা লায়নের একটি অংশ। শোনা যাচ্ছে, মৌর্য যুগের ওই অমূল্য নিদর্শন, অর্থাৎ সম্রাট অশোকের আমলের সিংহমূর্তিটি ছাড়াও আরও চার-পাঁচটি মূর্তি নষ্ট হয়েছে। বছর সাতেক আগে সিবিআই-তদন্তে জাদুঘরের ২২ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়েছিল। এমনও অভিযোগ উঠেছিল, কর্তাদের একাংশ বেশ কিছু প্রাচীন সামগ্রী ধীরে ধীরে সরিয়ে পাচারকারীদের কাছে মোটা টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। ২০০৪-এর ডিসেম্বরে কলকাতার জাদুঘর থেকে গুপ্তযুগের একটি বুদ্ধমূর্তি চুরি যায়। তদন্তে নেমে সিবিআই সন্ধানদাতার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। আজ পর্যন্ত বেলেপাথরের ওই মূর্তিটির হদিস পাওয়া যায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কিছু কথা। রবিবার জাদুঘরের দু’শো বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল তথা জাদুঘরের অছি পরিষদের চেয়ারম্যান এম কে নারায়ণন অবশ্য এ দিন তাঁর বক্তৃতায় মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গের উত্থাপন করেননি। তবে আক্ষেপ করেছেন, সুয়েজের পূর্ব পারের প্রাচীনতম এই জাদুঘরের কাছে যতটা প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণের ক্ষেত্রে খামতি রয়ে গিয়েছে। যদিও এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। “মাঝে প্রায় এক দশক সময়ে ভারতীয় জাদুঘর কিছুটা গরিমা হারিয়েছিল। মান পড়ে গিয়েছিল। প্রত্নবস্তুর রক্ষণাবেক্ষণও ঠিকঠাক হচ্ছিল না। এখন সব ত্রুটি কাটিয়ে জাদুঘর সম্পূর্ণ নতুন সাজে সেজে উঠেছে।” মন্তব্য রাজ্যপালের। তিনি বলেন, “আমি নিউ ইয়র্ক আর প্যারিসের মিউজিয়াম দেখে এসেছি। সেখানকার আদলেই ভারতীয় জাদুঘরের আধুনিকীকরণ করতে হবে। কাজ শুরু হয়েছে।”
কলকাতার ভারতীয় জাদুঘর সংস্কারে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক ১০০ কোটি টাকা দিয়েছে। নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব, গান্ধার শিল্প, অলঙ্করণ ও বস্ত্র, মুদ্রা এবং মানবজাতির ক্রমবিকাশের গ্যালারি। মূল ভবনের বহিরঙ্গেও সংস্কারের ছোঁয়া। এ দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও যোজনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সঙ্গে নতুন সাজে সেজে ওঠা গ্যালারিগুলো মিনিট পনেরো ধরে ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। দেখে মমতার প্রতিক্রিয়া, “দুর্দান্ত, অসাধারণ, অবিশ্বাস্য কাজ হয়েছে।”
বৃহস্পতিবারই ব্রিগেডের জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন। সেই রাজনৈতিক অবস্থানের ছায়া অবশ্য জাদুঘরের অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। সকাল দশটায় জাদুঘরের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান হাসিমুখে। মঞ্চে মনমোহনের বাঁ দিকে বসেছিলেন মমতা। দু’জনে কিছু ক্ষণ কথাও বলেন। জানা গিয়েছে, রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়ার বিষয়ে এ দিন ফের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মমতা। জাদুঘরের দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করার পরে প্রধানমন্ত্রী সেটি উপহার হিসেবে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। আবার মঞ্চ থেকে রিমোট কন্ট্রোলে উদ্বোধনের সময়ে মনমোহনকে সাহায্য করেন মমতা। কাল, মঙ্গলবার ফের আমজনতার জন্য খুলবে জাদুঘরের দরজা।

—নিজস্ব চিত্র।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.