প্রথমে ধাক্কা। প্রতিবাদ করায় সরাসরি গায়ে হাত।
কলকাতা ও শহরতলিতে অটো-দৌরাত্ম্যের নবতম সংযোজন এই ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার সকালে লেকটাউনে এক তরুণী ও তাঁর সঙ্গীকে ধাক্কা মারা, গালিগালাজ করা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক অটোচালকের বিরুদ্ধে। খবর পেয়েই অভিযুক্ত অটোচালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই রোশন ঝা নামে ওই অটোচালককে বিধাননগর আদালতে তোলা হয়। তার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও মারধরের অভিযোগ এনেছেন ওই তরুণী। শ্লীলতাহানি-সহ কয়েকটি ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই চালককে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ওই অটোচালক জামিনের আবেদন করলে তা খারিজ হয়ে যায়।
জ্বালানি তেলের দাম কয়েক দফা বাড়লেও রাজ্য সরকার ভাড়া বাড়ায়নি বলে শহর থেকে বেসরকারি বাস প্রায় উধাও হতে বসেছে। একই অবস্থা সরকারি বাসেরও। এই অবস্থায় অটোর উপরে নিত্যযাত্রীদের নির্ভরতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অটোচালকেরা আরও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন। আগে যেখানে যাত্রীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির মধ্যেই নিজেদের আটকে রাখতেন চালকেরা, এখন তাঁরাই গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করছেন না। যাত্রীদের অভিযোগ, সরকার এ সব দেখেশুনে নানা হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। কিন্তু অটোর দাপট কমাতে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
পরিসংখ্যান বলছে, গত দু’সপ্তাহে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অটোচালকদের অভব্যতার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। যেমন তারাতলায় খুচরো দিতে না পারায় এক মহিলাকে থাপ্পড় মারেন এক অটোচালক। এর পরে পার্ক সার্কাসে বাড়তি ভাড়া দিতে রাজি না হওয়ায় এক মহিলার মাথায় রড মারার অভিযোগে অটোচালক গ্রেফতার হয়েছে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই রামগড়ে রাস্তা পেরোতে গিয়ে অটোর ধাক্কায় মারা যান এক প্রবীণ ব্যক্তি। এর কিছু দিন পরেই এন্টালিতে পুলিশকর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে একদল অটোচালকের বিরুদ্ধে।
এ দিন কী ঘটেছে?
তরুণীর অভিযোগ, এ দিন সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ লেকটাউন মোড়ে সঙ্গীকে নিয়ে তিনি রাস্তা পেরোচ্ছিলেন। ওই সময়ে বেলগাছিয়া-লেকটাউন রুটের একটি অটো যাত্রী নিয়ে স্ট্যান্ড থেকে বেরোচ্ছিল। চালক অটোটি ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাঁকে ধাক্কা মারে, গালিগালাজ করে। সঙ্গীকেও ধাক্কা মারে অটোটি। তাঁর কথায়, “আমি প্রতিবাদ করায় আমার গায়ে হাতও তুলেছে অটোচালক।” ঘটনার পরেই তাঁরা লেকটাউন থানায় গিয়ে অটোচালকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ অটোচালককে শ্লীলতাহানি ও মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকাল সওয়া ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়। কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্যান্য অটোচালকেরা দাবি করেন, অভিযোগকারী তরুণীই অন্য দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলেন। তখন অটোটি তাঁকে স্রেফ ছুঁয়ে যায়। তাতেই তিনি তেড়ে অটোচালককে গালিগালাজ করতে থাকেন। গ্রেফতার হওয়ার পরে ওই অটোচালকের দাবি, “মারধরের মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। অল্প ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।”
নৈহাটি থেকে ট্রেনে দমদম, সেখান থেকে অটো বদলে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ এটাই রোজনামচা ওই তরুণীর। এ দিনের ঘটনার পরে রীতিমতো আতঙ্কিত তিনি। বলেন, “রোজই এই রাস্তা দিয়ে অফিস যেতে হয়। এর পরে এখান দিয়ে যেতে ভয় তো করবেই।” সাধারণ মানুষের অভিযোগ, এমনিতেই লেকটাউন ব্যস্ত এলাকা। তার উপরে অটোগুলি প্রায় রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে এমন ঘটনা প্রায়ই হয়।
পুলিশের যুক্তি, মাঝেমধ্যে অটোগুলিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরেও অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেমন এ দিনও হয়েছে।
কিন্তু অটোচালকেরা এমন বেপরোয়া হচ্ছেন কেন? আইএনটিটিইউসি অটো ইউনিয়নের নেতা মেঘনাদ পোদ্দারের সাফাই, “কোনও অটোচালকের নামে অভিযোগ এলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রশাসনও ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে অভিযোগ পাওয়ার পরে ব্যবস্থা নিয়ে লাভ নেই। অভিযোগ যাতে না ওঠে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। সে জন্য আমরা প্রতিটি ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে চাইছি। তবে এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।” |