অটো-শাসন অভিযানের প্রথম দিনেই বাজেয়াপ্ত করা হল বৈধ নথিহীন ৪৪টি অটো। ট্রাফিক বিধি ভাঙার জন্য মামলা দায়ের হল ৫৪৫টি অটোর বিরুদ্ধে। এমনটাই দাবি করছে কলকাতার ট্রাফিক পুলিশ। বেপরোয়া অটোকে নিয়মে বাঁধার এই কর্মসূচির মধ্যেও অবশ্য কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে শহরে। পুলিশ জানায়, রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বেপরোয়া ভাবে অটো চালানোর শিকার স্কুলপড়ুয়া এক বালিকা-সহ তিন জন। একটি ঘটনায় অটো-মোটরসাইকেলের ধাক্কায় কাটা পড়ে এক যাত্রীর পায়ের আঙুল। একটি ক্ষেত্রে পাঁচ জনের বেশি যাত্রী নিয়ে জোরে চালানো, অন্য ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে অটো চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
বৈধ পারমিট, লাইসেন্স না থাকা, বেপরোয়া ভাবে চালানো, বেশি যাত্রী তোলা, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার-সহ নানা অভিযোগ জমা পড়ছিল অটোচালকদের বিরুদ্ধে। সোমবার সকাল থেকে তাই অটো-শাসনে নামে পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের ২৫টি ট্রাফিক গার্ড এবং ট্রাফিক বিভাগের বিশেষ দল সোমবার শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অটো দৌরাত্ম্য ঠেকাতে অভিযান চালায়। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “বেপরোয়া অটোর বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চলবে।” |
অটোর ধাক্কায় জখম মেহইশ। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র। |
পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “অটোচালকদের বিরুদ্ধে যে কোনও ধরনের অভিযোগ জানাতে লালবাজারে আলাদা একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ১০৭৩ নম্বরে ফোন করে যাত্রীরা সেখানে অভিযোগ জানাতে পারেন।” তবে মন্ত্রীর কথায়, “আমাদের পক্ষে প্রত্যেক অটোচালকের পিছনে পুলিশ দেওয়া সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষ অনেক জায়গাতেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আমরা তাঁদের আরও সচেতন হতে বলছি। কোনও অনিয়ম দেখলেই তাঁরা যেন অভিযোগ জানান।”
পুলিশ জানায়, বেপরোয়া ভাবে অটো চালিয়ে দুর্ঘটনার প্রথমটি ঘটে প্রজাতন্ত্র দিবসের রাতে, পৌনে ৯টা নাগাদ। বেলেঘাটা এলাকার চুনপট্টিতে পাঁচ যাত্রীকে তুলে বেপরোয়া ভাবে অটো চালাচ্ছিলেন চালক। একটি মোটরসাইকেলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে অটোচালক তার গা ঘেঁষে এমন ভাবে চালান যে চালকের আসনের পাশে বসা এক যাত্রী মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন। তাঁর বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল কাটা পড়ে। গুরুতর চোট লাগে ওই যাত্রীর বাঁ পায়ে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর উরুর হাড় এবং ডান পায়ের গোড়ালিতে চিড় ধরেছে। অটোর সঙ্গে ধাক্কা লাগায় ছিটকে পড়ে যান মোটরসাইকেল আরোহীও। জখম যাত্রী শেখ ইমরান (১৭) এবং মোটরসাইকেল আরোহী বিকাশ সাউ (২৩)-কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এন্টালির বিবিবাগানের বাসিন্দা ইমরান এসএসকেএম হাসপাতালের কার্জন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। বিকাশের চিকিৎসা চলছে নীলরতন সরকার হাসপাতালে। পুলিশ জানায়, অটোচালক মহম্মদ আলি হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ দিন ইমরানের বাবা জামির আহমেদ বলেন, “পাড়ার ছেলেরা রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আমাকে এসে বলে ছেলেকে নীলরতন সরকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখান থেকে ওকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখি, ছেলের পায়ের বুড়ো আঙুলটাই নেই! যারা ওকে রাস্তা থেকে তুলেছিল, তারাই ওর আঙুলটা রাস্তা থেকে কুড়িয়ে ওই হাসপাতালে নিয়ে যায়।” একইসঙ্গে তিনি জানান, চিকিৎসকেরা বলেছেন, ইমরানের আঙুল জোড়া লাগানো যাবে না। অন্য দিকে, এনআরএসের চিকিৎসকেরা জানান, বিকাশের শরীরের বিভিন্ন অংশে চোট লেগেছে। তবে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়।
পুলিশ জানায়, দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে সোমবার বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ, কলেজ স্ট্রিট মোড়ের অদূরে ১০৬ নম্বর মহাত্মা গাঁধী রোডের সামনে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জেলিয়াটুলির বাসিন্দা ন’বছরের মেয়ে মেহইশ আনসারি রামমন্দির এলাকার একটি স্কুল থেকে ফিরছিল। গলি দিয়ে কলাবাগান এলাকা পেরিয়ে বাড়ির সামনে মহাত্মা গাঁধী রোড পেরোতে গিয়ে অটোর ধাক্কায় ছিটকে পড়ে সে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আজিজ আনসারি জানান, মেয়েটিকে রাস্তা পেরোতে দেখে একটি বাস দাঁড়িয়ে পড়ে। বড়বাজারগামী অটোটি বাসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। আচমকাই ওই অটোর সামনে পড়ে যায় মেয়েটি। পুলিশ জানায়, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীটির কানে, মুখে ও কপালে চোট লাগে। প্রৌঢ় অটোচালক অমরনাথ বিশ্বাস সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেন এবং জখম ছাত্রী ও স্থানীয় কয়েক জনকে অটোয় তুলে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছাত্রীটিকে বাড়ি নিয়ে আসেন তার বাবা মহম্মদ সাহাবুদ্দিন। পুলিশ জানায়, অটোচালক অমরনাথকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
|