পাড়ার দোকান থেকে পুরি-সব্জি আনতে গিয়েছিল বছর ষোলোর মূক ও বধির মেয়েটি। তার পরে দীর্ঘ ক্ষণ কেটে যেতেও সে বাড়ি না ফেরায় চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। প্রতিবেশীদের সে কথা জানালে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেন তাঁরাও। শেষে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার তোড়জোড় শুরু হলে বস্তিরই একটি তালাবন্ধ ঘর থেকে গোঙানির শব্দ পান স্থানীয় এক বাসিন্দা। তখন সেই ঘরে উঁকি মেরে দেখা যায়, একটি সেলাই মেশিনের সঙ্গে ওড়না দিয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় মেয়েটি বসে রয়েছে। মুখ বাঁধা থাকায় চিত্কার করারও ক্ষমতা ছিল না তার।
|
আসফার আলি |
পরে ঘরের তালা ভেঙে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে স্থানীয় থানার পুলিশ। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে কাশীপুর বস্তিতে।
পুলিশ জানায়, বস্তির লোকজন যখন মেয়েটিকে খুঁজতে ব্যস্ত, তখনই সকলের নজর এড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করে
অভিযুক্ত। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বস্তিরই একটি বাড়ির ছাদে লুকিয়ে থাকা ওই যুবককে ধরে ফেলে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ধৃত ওই যুবকের নাম আসফার আলি। কাশীপুর রুটে অটো চালায় সে। পাড়ার লোকজন পুলিশকে জানিয়েছেন, আদতে ওড়িশার কেন্দ্রাপড়ার বাসিন্দা আসফার বেশ ক’বছর ধরে ওই বস্তির একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে আছে। তার বিরুদ্ধে ওই কিশোরীকে জোর করে আটকে রাখা, ধর্ষণ ও শিশু যৌন নিগ্রহ প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। আজ, রবিবার আসফারকে শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হবে। এ দিনই ওই কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা হয় আর জি কর হাসপাতালে। ঘটনাস্থল থেকে সেলাই মেশিন-সহ বিভিন্ন জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, মা ও দিদিমার কাছে থাকে ওই কিশোরী। দিদিমা পুলিশকে জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি নাতনিকে পাড়ারই একটি দোকান থেকে পুরি-সব্জি আনতে পাঠিয়েছিলেন। দোকান বাড়ির কাছেই, তা সত্ত্বেও দু’ঘন্টা কেটে যাওয়ার পরে নাতনি ফিরছে না দেখে তিনি প্রতিবেশীদের ওই কথা জানান। এর পরেই সকলে মিলে ওই মেয়েটিকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন।
পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়ার পরে মেয়েটি ইশারায় সব কথা তার মাকে জানায়। থানায় আনার পরে ওই কিশোরীর অভিযোগ নথিভুক্ত করতে এক জন মূক-বধির বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেয় পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, পুরি-সব্জির দোকানে যাওয়ার পথেই আসফার মেয়েটিকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে তার কাকার ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন চালানো হয়। ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যাবে, এই ভয়ে সে ওই মেয়েটির হাত-মুখ বেঁধে ঘরের মধ্যে রেখে তালা বন্ধ করে এলাকা ছেড়ে পালানোর মতলব ফেঁদেছিল বলে পুলিশের তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন। বস্তির লোকজন পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা যখন মেয়েটিকে খুঁজতে ব্যস্ত ছিলেন, তখন আসফারকে দরজায় তালা লাগাতে দেখে তাঁদের সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়। এর পরে সকলে মিলে আসফারের উপরে নজর রাখতে শুরু করেন। আর তাতেই প্রমাদ গোনে ওই যুবক। তখন সে বস্তিরই একটি বাড়ির ছাদে লুকিয়ে পড়ে। সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। |