কলকাতাকে ঘিরে জনবসতি যে ভাবে বাড়ছে, তাতে পুরনো পরিকাঠামো ব্যবহার করে বিদ্যুত্ সরবরাহ করতে গেলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছে সিইএসসি। বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তর কলকাতায় নতুন-নতুন অসংখ্য বহুতল আবাসন গড়ে উঠছে বলে ওই সমস্ত এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। এই অবস্থায় পাটুলি এবং কাশীপুরে সিইএসসি দু’টি ‘মেগা’ সাবস্টেশন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই দু’টি সাবস্টেশনের মাধ্যমে আগামী দিনে কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নির্বিঘ্নে বিদ্যুত্ সরবরাহ করা যাবে বলে দাবি সংস্থার। প্রয়োজনে হাওড়ার চাহিদা মেটাতেও কাশীপুর সাবস্টেশনটি থেকে বিদ্যুত্ পাঠানো হবে।
সিইএসসি-র এক কর্তা জানান, কলকাতা শহর ধরলে গড়ে বছরে ৪ শতাংশ হারে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তর কলকাতার একটি অংশ ধরলে ওই চাহিদাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ শতাংশের ঘরে। সেই কারণেই নতুন বড় সাবস্টেশন তৈরির সিদ্ধান্ত। ওই কর্তা বলেন, “সাবস্টেশন গড়ার জন্য কলকাতার মধ্যে জমি পাওয়া একটা বড় সমস্যা। তাই যে জমি হাতে রয়েছে, তাতেই অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন সাবস্টেশন তৈরি করছি আমরা।” সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাটুলি এবং কাশীপুর দু’জায়গাতেই ‘গ্যাস ইনসুলেটেড’ আধুনিক সাবস্টেশন হবে। যেগুলি ঝড়-বৃষ্টি বা অন্য কোনও কারণে হঠাত্ খারাপ হয়ে যাবে না। নির্বিঘ্নে বিদ্যুত্ সরবরাহ করে যেতে পারবে। দু’টি সাবস্টেশন-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো গড়তে এই প্রকল্পের জন্য সিইএসসি ২৫০ কোটি টাকা খরচ করছে।
জনবসতি বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে সিইএসসি এলাকায় এখন গড়ে বছরে ১০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। আর তাতে দেখা যাচ্ছে, এ বছরের মধ্যে কলকাতার চাহিদা মেটাতে সিইএসসি-কে কমপক্ষে ২,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ দিন-রাত সরবরাহ করতে হবে। অর্থাত্ এখন সংস্থা গ্রাহকদের জন্য যত বিদ্যুত্ সরবরাহ করে থাকে, তার থেকে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বেশি। সেই চাহিদা মেটাতে হলদিয়ার বাণেশ্বরচকে নির্মীয়মাণ ৬০০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পে উত্পাদন শুরু হলে সেখানকার ৭০ শতাংশ বিদ্যুত্ই কলকাতায় নিয়ে আসবে সিইএসসি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, কাশীপুরে নতুন যে মেগা সাবস্টেশনটি তৈরি হচ্ছে, সেখানেই আসবে হলদিয়ার বিদ্যুত্।
সংস্থার এক কর্তা বলেন, “হলদিয়ার বিদ্যুত্ রায়চক হয়ে আসবে সুভাষগ্রামে। সেখান থেকে আমাদের কসবা সাবস্টেশন হয়ে কাশীপুরের নতুন সাবস্টেশনটিতে পড়বে। কসবা থেকে কাশীপুর নতুন কেব্ল লাইনও পাতা হবে।”
কলকাতা ও হাওড়ার একাংশ মিলিয়ে সিইএসসি-র গ্রাহক সংখ্যা এখন ২৫ লক্ষের কিছু বেশি। এ ছাড়াও প্রতি বছরই কলকাতা ও তার আশপাশে বহুতল আবাসনের পাশাপাশি নতুন-নতুন বাজার, ছোট-মাঝারি শপিং মল, রেস্তোরাঁ, হোটেলের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গেই বাড়ছে বৈদ্যুতিন ভোগ্যপণ্য ব্যবহারের প্রবণতাও। যে কারণে ফি-বছর বিদ্যুতের গড় চাহিদা ধীরে হলেও বাড়ছে। এর সঙ্গে কলকাতা লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুত্ বণ্টন সংস্থার পরিষেবা এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডও সিইএসসি-র মধ্যে ঢুকে যেতে পারে। ফলে নানা দিক থেকেই ধীরে হলেও বিদ্যুতের গড় চাহিদা বাড়ছে।
সিইএসসি-র বক্তব্য, এ বছরের মধ্যেই হলদিয়ার তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রটিতে উত্পাদন শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। ফলে চাহিদা মেটানোর জন্য বাড়তি বিদ্যুত্ পেতে কোনও সমস্যা হবে না। ওই বিদ্যুত্ যাতে সুপরিকল্পিত ভাবে সব জায়গায় যাতে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তার জন্যই নতুন সাবস্টেশন তৈরির পাশাপাশি পুরনোগুলিরও বিদ্যুত্বহন ক্ষমতা বাড়ানোর কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। |