কেউ দিনমজুরি ছেড়ে, কেউ কৃষি কাজ না করে নাম লিখিয়েছিলেন। ১০০ দিনের কাজে কাজও পেয়েছেন। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার এক মাস পরেও মেলেনি পারিশ্রমিক। মজুরি না পেয়ে, কেউ গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ি নিয়মিত হত্যে দিচ্ছেন, কেউ বা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে ধর্না দিচ্ছেন।
কোচবিহার জেলার এমনই অন্তত তিরিশ হাজার শ্রমিক গত এক মাস ধরে ১০০ দিনের কাজের টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। সরকারি প্রকল্পের টাকা না পেয়ে দিনমজুরি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। প্রশাসন সূত্রের খবর, তাঁদের মজুরি বাবদ প্রায় ৩৪ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “১০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। দ্রুত তা শ্রমিকদের হাতে পৌঁছে যাবে। তাতে সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে আশা করছি।” জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত আর্থিক বছরের উদ্বৃত্ত এবং এ বারের পাওনা মিলিয়ে জেলা প্রায় ৭৫ কোটি ৯৯ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা পেয়েছে। এর মধ্যে খরচ হয়েছে প্রায় ৭৪ কোটি ৮৭ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। প্রশাসনের হাতে ১ কোটি ১২ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা। অথচ বকেয়ার পরিমাণ ৩৫ কোটি ১০ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা। যার মধ্যে জবকার্ডধারী শ্রমিক মজুরি ২৯ কোটির কিছু বেশই। শীতলখুচির মতো ব্লকে প্রায় ২ কোটি টাকা মজুরি বকেয়া রয়েছে। জেলার প্রশাসনিক এক কর্তা দাবি করেন, গোটা রাজ্য জুড়েই ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সমস্যা মেটাতে কেন্দ্রের কাছে রাজ্য সরকার দেড় হাজার কোটি টাকা চেয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মজুরির টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ গীতালদহ, সিতাই, শীতলখুচির বাসিন্দারা। ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের সনেকা বর্মন, শোভা বর্মনরা জানান, ২৮ দিন করে কাজ করে টাকা পাননি। তাঁদের কথায়, “কষ্টের সংসার। সারা দিন কাজ করে যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চলে। ১০০ দিনের কাজ করে ভেবেছিলাম কিছু টাকা জমাতে পারব। কিন্তু এখনও টাকা না পাওয়ায় খুব সমস্যায় পড়েছি।”
ঘুঘুমারি পঞ্চায়েতের উপ প্রধান সহিরুদ্দিন মিয়াঁ বলেন, “প্রশাসনের কাছে বরাদ্দ চেয়েছি। খুব দ্রুত টাকা পাব আশা করছি।” মাতালহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মনোরঞ্জন রায় বলেন, “মজুরি বাবদ ২০ লক্ষ টাকা বকেয়া। কিন্তু এর আগে সমস্ত টাকা ঠিকঠাক দেওয়া হয়েছে। ওই টাকায় খুব কম সময়ের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে প্রশাসনের কর্তারা জানান।” মাথাভাঙার পচাগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্যা কল্যাণী রায়ের কথায়, “সকলেই টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। পঞ্চায়েত অফিসে বিষয়টি জানিয়েছি।” |