|
|
|
|
বর্ধিত সময়েও কি শেষ হবে কাজ, সংশয় বহু জেলাতেই
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ভুয়ো রেশন কার্ডের দৌরাত্ম্য রুখতে ২০১২ সালের মধ্যেই বারকোড-যুক্ত ডিজিটাল রেশন কার্ড চালু করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এ রাজ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে তার কাজ শুরুও হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমা বাড়িয়েও শেষ করা যায়নি ডিজিটাল রেশন কার্ড প্রকল্পের কাজ।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ফের সময়সীমা এক মাস বাড়িয়ে ৩১ জানুয়ারি করা হবে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে খাদ্য দফতরের অনেক কর্তাই।
খাদ্যমন্ত্রী কিন্তু বলছেন, “কিছু সমস্যার কারণে কাজে দেরি হয়েছে। তবে, বর্তমানে দু’টি জেলায় কাজ প্রায় শেষ। প্রকল্পের অন্তর্গত বাকি জেলাতেও নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।”
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে খাদ্য দফতর ইতিমধ্যেই দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে নতুন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। তবে বাস্তব হল, গোড়া থেকেই হোঁচট খাচ্ছে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। শুরুর আগেই বরাদ্দ টাকা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েনে প্রকল্পটি প্রায় বাতিল হওয়ার মুখে পৌঁছেছিল। পরে সে বাধা কাটিয়ে গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে রাজ্যের ১১টি জেলায় শুরু হয় রেশন কার্ড ডিজিটাল করার কাজ। মোট প্রায় সাড়ে ৯ কোটি ডিজিটাল রেশন কার্ড তৈরি হওয়ার কথা। এখন গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। কিন্তু নানা কারণে সেই কাজ মাঝেমধ্যেই থমকেছে। কলকাতা বাদে অন্য ১০টি জেলায় গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ হয়েছে গড়ে ৫১%।
কেন এই পরিস্থিতি?
খাদ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, সীমিত সংখ্যক যন্ত্র (ট্যাবলেট) নিয়ে কাজ করতে গিয়েই চাপ পড়েছে। তা ছাড়া, জাতীয় জনসংখ্যা নথি (ন্যাশন্যাল পপুলেশন রেজিস্টার) এবং জাতীয় আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত সুমারির (ন্যাশনাল সোশিও-ইকনমিক অ্যান্ড কাস্ট সেন্সাস) সঙ্গে গ্রাহকের নাম মেলাতে হচ্ছে বলে বেশি সময় লাগছে।
জেলা খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ আবার ওই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার বিরুদ্ধে ঢিলেমির অভিযোগ করছেন। একই সঙ্গে নতুন কার্ড করাতে গ্রাহকদের একাংশের ‘অনীহা’কেও দুষছেন। সংস্থার কর্মীদের প্রতিটি রেশন দোকানে গিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে নাম-ঠিকানার পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু বর্ধমান জেলার খাদ্য নিয়ামক সাধনকুমার পাল, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা খাদ্য নিয়ামক রণজিৎ গোস্বামীদের অভিযোগ, “ওই কাজে যত লোক প্রয়োজন, তা ওই সংস্থার হাতে নেই। তাই এই দেরি।” জানা গিয়েছে, এই কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বিভিন্ন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করেছে। খাদ্য দফতরের কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, ওই কর্মীদের যথাসময়ে যন্ত্র সরবরাহ করা হয়নি। তার উপর রেশন কার্ডের তথ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলি সম্বন্ধে ওই কর্মীদের তেমন ধারণা নেই। রেশন ডিলারদের একাংশের দাবি, ডিজিটাইজেশন-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা অনিয়মিত ভাবে কাজ করেছেন। ঠিক মতো যোগাযোগ না হওয়ায় অনেক গ্রাহক ওই কর্মীরা রেশন দোকানে কবে আসবেন, সেই খবর জানতেও পারেননি। ফলে, ক্রমশ পিছিয়েছে প্রকল্পের কাজ।
গ্রাহকদের দিকেও আঙুল উঠছে। কোচবিহারের জেলা খাদ্য নিয়ামক মানিক সরকার যেমন বলেছেন, “অনির্দিষ্ট কাল ওই সুযোগ মিলবে ভেবে বহু গ্রাহকই প্রকল্পের কাজে সে ভাবে সাড়া দিচ্ছেন না।”
তবে খাদ্য দফতরের কর্তাদের সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে সিউড়ির মহকুমার রেশন ডিলার রবিলাল দাস কিংবা বাগনানের রেশন ডিলার সমর গুছাইতরা কিন্তু বলছেন, “রেশন কার্ড ডিজিটাল করাতে মানুষের মধ্যে খুবই আগ্রহ রয়েছে। রীতিমতো ভোরবেলা উঠে লাইন দিয়ে গ্রাহকেরা সমস্ত তথ্য দিয়ে গিয়েছেন।”
এ দিকে, গ্রাহকদের একাংশের অভিযোগ, নতুন কার্ডের বিষয়ে প্রশাসনই গ্রাহকদের ঠিক করে জানায়নি। অনেকেই দোকানে টাঙানো কাগজ থেকে ওই কথা জানতে পেরেছেন। এমনকী, অনেক ডিলারও ডিজিটাল রেশন কার্ড প্রকল্প নিয়ে কিছু জানেন না বলে দিয়েছেন।
রেশন কার্ড ডিজিটাল করার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও প্রক্রিয়াগত কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ওয়েস্টবেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান জগন্নাথ কোলে। তাঁর বক্তব্য, “যাঁদের কার্ড হারিয়ে গিয়েছে এবং যাঁদের কার্ড নতুন করে তৈরি হবে, তাঁদের ক্ষেত্রে সরকারের নীতি ঠিক কী, তা স্পষ্ট করুক। এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম নয়। এই ব্যাপারগুলো স্পষ্ট না হলে গোটা প্রক্রিয়াটা মেটানো সহজ হবে না।”
খাদ্য দফতর অবশ্য জানিয়েছে, কার্ড হারানো এবং নতুন কার্ড করতে ইচ্ছুকেরা খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের কাছে আবেদন করলে এক মাসের মধ্যেই সাধারণ রেশন কার্ড পাবেন। পরে সেই কার্ড নিয়ে ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে।
এ দিকে, ডিজিটাল রেশন কার্ড প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, প্রথম দিকে বেশ কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা ছিল। এখন সেই সমস্যা দূরও করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ অনেকটাই গুটিয়ে আনা গিয়েছে। অন্য কোনও অভিযোগ তারা মানতে চায়নি। |
|
|
|
|
|