|
|
|
|
ভর্তুকি কমাতে স্বেচ্ছাবসর চালু পরিবহণ নিগমে
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরকারি পরিবহণের দুর্দশা ঘোচাতে কিছু কর্মীর স্বেচ্ছাবসর-সহ কয়েকটি ব্যবস্থার কথা মন্ত্রী মদন মিত্র আগেই ঘোষণা করেছিলেন। সেই অনুযায়ী ভর্তুকির চাপ কমাতে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প চালু হয়ে গেল পরিবহণ নিগমে। শুক্রবার তারই প্রথম দফায় তিনটি পরিবহণ নিগমের ২৩৯ জন কর্মীর হাতে স্বেচ্ছাবসরের চেক তুলে দেন পরিবহণ-কর্তারা। তাঁরা জানান, কর্মীদের তিন কিস্তিতে প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। এ দিন তাঁরা প্রথম কিস্তির চেক পেলেন।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, পরিবহণ নিগমগুলির বেহাল আর্থিক দশার মোকাবিলায় ত্রিমুখী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, ভর্তুকির বোঝা কিছুটা হাল্কা করতে বিভিন্ন সরকারি বাস ডিপোর জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজের ভিত্তিতে বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, উদ্বৃত্ত কর্মী পুনর্বিন্যাস। তৃতীয়ত, ভর্তুকি কমাতে কিছু বয়স্ক কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের আওতায় আনা। এ দিন পাঁচটি পরিবহণ নিগমের পঞ্চাশোর্ধ্ব কর্মীদের জন্য সেই স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পই চালু করে দেওয়া হল।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন পরিবহণ নিগমের অন্তত ৯০০ কর্মীর স্বেচ্ছাবসরের আবেদন গৃহীত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৩৯ জনকে এ দিন চেক দেওয়া হয়। প্রাপকদের মধ্যে কলকাতা ট্রাম কোম্পানি বা সিটিসি-র ৫৭, কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা বা সিএসটিসি-র ৬২ এবং দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ বা এসবিএসটিসি-র ১২০ জন কর্মী রয়েছেন। এই কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দিতে আপাতত খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। দফতরের এক কর্তা জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি)-এর কয়েকশো কর্মীর হাতে স্বেচ্ছাবসরের প্রথম কিস্তির চেক তুলে দেওয়া হবে।
পরিবহণে স্বেচ্ছাবসরের এই প্রকল্পে রাজ্যের অর্থ দফতর ১৩২ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। দফতরের সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে কর্মী এবং সরকার, দু’পক্ষই লাভবান হচ্ছে। এক দিকে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ কমছে। অন্য দিকে নিগমের ওই কর্মীরা এক দফায় অনেক টাকা হাতে পেয়ে যাচ্ছেন।” সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিগমগুলিকে আগামী দিনে স্বনির্ভর হয়ে উঠতেও সাহায্য করবে বলে মনে করছেন পরিবহণ-কর্তারা। এক পরিবহণ-কর্তা জানান, যে-সব কর্মীর বয়স পঞ্চাশের বেশি, তাঁদের অনেকেই স্বেচ্ছায় অবসর নিতে চাইছেন। তবে কারও উপরে জোর খাটানো হয়নি। সম্মানের সঙ্গেই ইচ্ছুক কর্মীদের বিদায় জানানো হচ্ছে।
ওই পরিবহণ-কর্তা জানান, এ দিনের অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাবসরের চেক নেওয়ার পরে অনেক কর্মীই ‘অবসরপ্রাপ্ত কর্মী’ হিসেবে বিশেষ পরিচয়পত্র দেওয়ার আর্জি জানান। সরকারি পরিবহণে বিশেষ ছাড়ের সুযোগ করে দেওয়ার দাবিও জানান তাঁরা। কর্মীদের এই দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে পরিবহণ দফতর।
কিছু কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে আনার পাশাপাশি সরকারি বাস ডিপোর জমি দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই অনুযায়ী সিটিসি-র ছ’টি ডিপোর জমি বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। ঘুরে দাঁড়ানোর দাওয়াই হিসেবে কর্মী পুনর্বিন্যাসের পথেও এগোচ্ছে পরিবহণ দফতর। এই ব্যবস্থায় কিছু কর্মীকে অন্য বিভাগে বদলি করে কাজে লাগানো হবে। বদলির সুযোগ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন পরিবহণ নিগমের কয়েকশো কর্মী ইতিমধ্যেই আবেদন করেছেন বলে ওই দফতর সূত্রের খবর। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য দফতরের কর্মহীন কর্মীদের বিভিন্ন বিভাগে সরিয়ে দেওয়ায় ভাল ফল মিলেছে। সেই পথেই পরিবহণ এবং অন্যান্য দফতরে বদলির ব্যবস্থা হচ্ছে। বদলিতে ইচ্ছুক পরিবহণকর্মীর তালিকা তৈরির কাজ চলছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের নীতি মেনেই এই পথ নেওয়া হচ্ছে বলে পরিবহণ-কর্তারা জানান। |
|
|
|
|
|