|
|
|
|
বিদেশি লগ্নিতে চোখ, বড় ছাড় মিৎসুবিশিকে
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিদেশি লগ্নি টানার গন্তব্য হিসেবে রাজ্যকে তুলে ধরতে জাপানি সংস্থা মিৎসুবিশির হলদিয়া কারখানায় বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। শুক্রবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হলদিয়ার কারখানায় ওই জাপানি সংস্থা এখনও পর্যন্ত যে পরিমাণ পুঁজি (ফিক্সড ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট) বিনিয়োগ করেছে, তার ১২৫% ভ্যাট ফেরত দেওয়া হবে। অর্থাৎ ১০০ টাকা বিনিয়োগ হয়ে থাকলে সরকার জাপানি সংস্থাটিকে ১২৫ টাকার ভ্যাট ফেরত দেবে। তবে এর জন্য নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা থাকছে না। পাশাপাশি কারখানার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার পর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বিদ্যুৎ মাসুলেও নির্দিষ্ট হারে ছাড় দেওয়া হবে বলে এ দিন মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শিল্প দফতর সূত্রের খবর, ২০০৬ সালে বামফ্রন্ট সরকার ঠিক করেছিল, মিৎসুবিশিকে তাদের লগ্নির উপর ১২৫% ভ্যাট ফেরত দেওয়া হবে। তবে তা কাযর্কর হবে পাঁচ বছরের জন্য। অর্থাৎ পাঁচ বছর পর আরও বিনিয়োগ করলেও তার উপর কিন্তু আর আর্থিক ছাড় পাওয়ার বন্দোবস্ত ছিল না। সরকারি সূত্রের খবর, সে সময় মিৎসুবিশি কর্তৃপক্ষ যে পরিমাণ বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা ৫ বছরের মধ্যে করতে পারেননি। ফলে ভ্যাট-এ ছাড়ও পাননি। রাজ্যে পালাবদলের পরে মিৎসুবিশি কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের সরকারি ছাড়পত্র না পাওয়ার ফলেই তাঁরা পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ করতে পারেননি। তাই এ যাবৎ তাঁরা যে পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন, তার উপর ১২৫% ভ্যাট ফেরত দেওয়া হোক। শিল্প দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, মূল কারখানা এবং সম্প্রসারণ মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ২৭২৭ কোটি টাকা ফিক্সড ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট করেছে মিৎসুবিশি। তাতে বছরে ১২.৭ লক্ষ টন পণ্য উৎপাদন হয়েছে। সরকার এই বিনিয়োগের ১২৫% টাকা ভ্যাটের ছাড় হিসেবে ওদের ফেরত দেবে। তবে সরকার এর কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা ঠিক করেনি। অর্থ ও শিল্প দফতর নিজেদের সুবিধা মতো এই টাকা জাপানি সংস্থাটিকে মিটিয়ে দেবে।
রাজ্যের শিল্প তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন,“মিৎসুবিশি কারখানার পাশাপাশি জাপান সরকারের পক্ষ থেকেও অনেক বার এই ছাড়ের জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। কারখানাটি এ রাজ্যের সর্ববৃহৎ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের নিদর্শন। তাই তাদের আবেদন বিবেচনা করা হয়েছে।” অথর্মন্ত্রী অবশ্য জানিয়ে দেন, এখনও পর্যন্ত যে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে, তার উপরই ভ্যাটে ছাড় দেওয়া হবে। পরবর্তী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার নতুন নীতি নেবে। তবে এখন আর নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নয়, সরকার মোট বিনিয়োগের উপর ভ্যাট ছাড় দেবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
সরকারি সূত্রের খবর, বিশ্ব জুড়ে পেট্রোরসায়ন শিল্পে মন্দার প্রভাবে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মিৎসুবিশিও। তার উপর সরকার পণ্য প্রবেশ কর চালু করার পর মিৎসুবিশির কাঁচামাল আমদানির খরচ ব্যাপক বেড়ে যায়। এর পরই জাপানি সংস্থাটি রাজ্য সরকারের কাছে বাড়তি উৎসাহ ভাতার সুবিধা পাওয়ার জন্য আর্জি জানায়। কলকাতায় অবস্থিত জাপানের কনসাল জেনারেল পূর্বতন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এ নিয়ে দরবারও করেন। জাপানের রাষ্ট্রদূতও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার ফাঁকে মিৎসুবিশির সঙ্কটের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন বলে সরকারি সূত্রের খবর।
এর মধ্যেই এ বারের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-কে আমন্ত্রণ জানায় নয়াদিল্লি। চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে ভারত এখন জাপানের সঙ্গে আর্থিক, নিরাপত্তা এবং কৌশলগত সহযোগিতা অনেকটাই বাড়িয়েছে। জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে নয়াদিল্লির তরফে বিভিন্ন রাজ্যকে বার্তা দিয়ে বলা হয়, ভারত-জাপান বন্ধুত্ব সুদৃঢ হয় এমন পদক্ষেপ করতে। সেই প্রসঙ্গে ওঠে মিৎসুবিশির কথাও। এ সবের পাশাপাশিই সরকারের বিবেচনায় আসে জাপানি ঋণে চলা এ রাজ্যের একাধিক প্রকল্পের কথা। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্য সরকার মিৎসুবিশির জন্য দ্রুত আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছে বলে এ দিন এক সরকারি কর্তা জানান। ওই কর্তার কথায়, “জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় ১২০০ কোটি টাকার জলপ্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পও হচ্ছে জাইকার ঋণে। আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্পে জাপানি বিনিয়োগের ব্যাপারে কথা চলছে। ফলে মিৎসুবিশিকে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত এ রাজ্যে জাপানি লগ্নি টানার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।” |
|
|
|
|
|