নন্দীগ্রাম মামলা তুলে নিতে চেয়ে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
ন্দীগ্রাম মামলায় চার্জশিটের জন্য ব্রিগেড সমাবেশ থেকে সিবিআইকে কড়া আক্রমণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, আন্দোলনকারীদের গায়ে হাত পড়লে তারা বুঝে নেবে! তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্য মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিল, নন্দীগ্রাম আন্দোলন-পর্বের ৩০৩টি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সিঙ্গুরেরও ১২২টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে মন্ত্রিসভার সেই বৈঠকে।
নবান্নে ওই বৈঠকের পরে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের ৪২৫টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রাজনৈতিক অভিসন্ধি ও প্রতিহিংসামূলক কারণে ওই মামলাগুলি দায়ের হয়েছিল।” ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধি বা সিআরপিসি-র ৩২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী এর পরে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলাগুলি প্রত্যাহারের আর্জি জানাবে সরকার।
সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের জমি-আন্দোলনে ভর করেই মহাকরণে পৌঁছেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। নন্দীগ্রামে গুলিচালনার ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি সিবিআই চার্জশিট দেওয়ার পরে তৃণমূল ও বামেদের মধ্যে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। সিবিআইয়ের রিপোর্টে আন্দোলনকারীদের অনেকেই অভিযুক্ত। ফলে এখনকার শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে বাম-সহ বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ব্রিগেড থেকে বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার এক দিনের মধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, আন্দোলনকারীদের পাশেই রয়েছে তাঁর সরকার।
মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত আদালতের সায় মিলবে কি না, তা অবশ্য পরের কথা। আপাতত মুখ্যমন্ত্রী তাঁর একদা ভরসাস্থলের প্রতি রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি বোঝাতে পারলেন, প্রশাসনিক ভাবেও তাঁর সরকার আন্দোলনকারীদের স্বস্তি দিতে চায়।
স্বাভাবিক ভাবেই খুশি নন্দীগ্রামের তৎকালীন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির দুই নেতা আবু তাহের ও শেখ সুফিয়ান। তাঁদের বক্তব্য, “তখন ভোটার তালিকা ধরে ধরে আন্দোলনকারীদের নামে এফআইআর করেছিল সিপিএম! মোট ১২২টি মামলা আছে আমাদের বিরুদ্ধে। রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পরে আমরা সরকারের কাছে এর বিচার চেয়েছিলাম। প্রশাসন যে নন্দীগ্রামের পাশে আছে, এই সিদ্ধান্তই তার প্রমাণ।” তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, “এতে নন্দীগ্রামের সাড়ে চার হাজার মানুষ রেহাই পাবেন।”
একই সুর শোনা গিয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্নার গলাতেও। পুলিশি তথ্য বলছে, সিঙ্গুরের কৃষিজমি রক্ষা কমিটির নেতা, বর্তমানে তিনটি দফতরের প্রতিমন্ত্রী বেচারামের বিরুদ্ধে ৫০টির বেশি মামলা আছে। মন্ত্রিসভায় এ দিন যে মামলাগুলি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেখানে তাঁরও নাম আছে। বেচারাম এ দিন বলেছেন, “সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, মামলা তুলে নেবে। আমরা যে কেবল প্রতিশ্রুতি দিই না, পালনও করি, এ দিনের সিদ্ধান্ত তারই প্রমাণ।”
মামলা প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কিন্তু এর মধ্যেই সরব বর্তমান বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, তাঁদের অনেক কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে সেই সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বহু মামলা দায়ের করা হয়েছিল। রাজনৈতিক অভিসন্ধি ও প্রতিহিংসা যদি মামলা প্রত্যাহারের মূল কারণ হয়, তা হলে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে করা ওই মামলাগুলিও প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত সরকারের। সিপিএমের অভিযোগ, নন্দীগ্রামে আন্দোলন-পর্বে তাদের ৬০ জন কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছিলেন। তা হলে দুই পক্ষের ক্ষেত্রে আলাদা অবস্থান কেন প্রশ্ন তাঁদের।
এই সূত্র ধরেই সিপিএমের অভিযোগ, সিবিআই চার্জশিটের পরে শাসক দলের অস্বস্তি আড়াল করতেই এখন রাজ্য সরকার মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ভাবে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে তারা। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, “নন্দীগ্রামে গুলিচালনার পরে যে সব অভিযোগ, অপপ্রচার ওঁরা (তৎকালীন বিরোধী নেতৃত্ব) চালিয়েছিলেন, তার পক্ষে কোনও প্রমাণ পায়নি সিবিআই। ওই চার্জশিটই ওঁদের কাছে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠেছে! তাই এখন দেখাতে চাইছেন, তাঁরা আন্দোলনকারীদের পাশেই আছেন। তবে চাইলেও এই ভাবে আইনমাফিক বা পদ্ধতিগত ভাবে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া সম্ভব কি না, জানি না!” বিরোধীদের মতে, সিবিআই চার্জশিটে এক বার ধাক্কা খেয়ে রাজ্য সরকার যে পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তাতে আবার আদালতে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা!
নবান্নের কর্তারা বলছেন, সিআরপিসি-র ৩২১ নম্বর ধারায় বলা আছে সরকারি কৌঁসুলি বা অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি আদালতে দাঁড়িয়ে মামলা প্রত্যাহারের আর্জি জানাতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন জরুরি। নন্দীগ্রামের ক্ষেত্রেই এক বার আদালতে এই ব্যাপারে প্রশাসনের আর্জি নাকচ হয়েছে। রাজ্যের এক পুলিশ-কর্তার বক্তব্য, “সিআরপিসি-র ওই ধারা ব্যবহার করে অতীতেও বেশ কিছু মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে আইনগত অসুবিধা নেই। কিন্তু সিদ্ধান্তটা যে একপেশে, এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই।”
নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে যে ১৬৬ জন আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই, তাঁরা মূলত ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটিরই লোক। সেখানে ৬ পুলিশ অফিসারেরও নাম আছে। তাঁদের বিরুদ্ধেই বিচার শুরু করার অনুমোদন চেয়ে রাজ্যের কাছে আর্জি জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু রাজ্য সেই অনুমতি দেয়নি। ব্রিগেডে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, পুলিশের নিচু তলার কয়েক জনের কথা সিবিআই বলেছে। কিন্তু তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথায় উপর তলার যাঁরা দাঁড়িয়ে থেকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁদের কী হবে? মুখ্যমন্ত্রীর আগের বার্তা যদি পুলিশের পাশে থাকার হয়, তা হলে এ দিনের সরকারি সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারীদের প্রতি স্বস্তিদায়ক বলেই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.