ছয় লুফলেই সিম ফ্রি, এগরায় চিয়ারলিডারও
‘নমস্কার, ক্রিকেটকা নন্দন কানন মে আপকো স্বাগতম’।
‘ইটস্ আ বিউটিফুল ক্রিকেট গ্রাউন্ড অ্যান্ড ওয়েলকাম অল।’
‘পিনাকী দিন্ডা বোলিং করি বা পাঁয়ি প্রস্তুত হইছন্তি’।
ব্যাটসম্যান রাজেশ আলি পত্রপাঠ সীমানার ওপারে বলটিকে পাঠালেন অবলীলায়। আম্পায়ারও দু’হাত উপরে তুলে জানালেন ছক্কাছক্কা’।
হিন্দি, ইংরেজি, ওড়িয়া, বাংলা—চার ভাষায় ধারাভাষ্য চলছে। চার-ছয় মারলেই বেজে উঠছে আইপিএল-এর ধুন। মাঠের এক কোণে মঞ্চে তিন-চারটি মেয়ে ঝালর দোলাচ্ছেন তালে-তালে। কলকাতা বা মফস্সল নয়, পূর্ব মেদিনীপুরে এগরার প্রত্যন্ত গ্রামের মাঠে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। আশপাশেরই আটটা ক্লাবের খেলা। তার জন্যই লক্ষ লক্ষ টাকা বাজেট।

এগরা ক্রিকেট মাঠের পাশে মঞ্চে চিয়ারলিডারেরা।
সাধারণত শীতে ফাঁকা জমিতে, জায়গা থাকলে বড় মাঠে ক্রিকেট হয় বিভিন্ন জায়গায়। তবে পূর্ব মেদিনীপুরে এগরা, ভগবানপুর, কাঁথি, দুই ২৪ পরগনা বা হাওড়ার কিছু গ্রামে এই টুর্নামেন্টগুলি নিয়ে যেমন উন্মাদনা দেখা যায়, সর্বত্র তেমনটা নয়। খেলা ক্যাম্বিসের বলে। দশ-বারো ওভারের। কখনও বাজেট দু’লক্ষ, কখনও পাঁচ লক্ষ।
এই ফেব্রুয়ারিতে এগরা ও কাঁথি মহকুমার মাঝে ভবানীচক রেড রোজ ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় একটি বড় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা। ওই ক্লাবের সম্পাদক তথা স্থানীয় বিধায়ক সমরেশ দাসের ছেলে পার্থবাবু জানান, বাজেট ত্রিশ লক্ষ। আয়োজনের তালিকায় ভিআইপি আপ্যায়ন থেকে আলো, একাধিক ভাষায় ধারাভাষ্যকার, চিয়ার গার্ল আনাও রয়েছে।
এত টাকা আসছে কোথা থেকে? এগরার পানিপারুলে সদ্য শেষ হওয়া একটি টুর্নামেন্টের উদ্যোক্তা জানান, এলাকায় চাঁদা তোলা হয়। স্থানীয় কারও স্মৃতিতে ট্রফি উৎসর্গ হলে, সেই পরিবারও টাকা দেয়। তবে মূল টাকাটা আসে ‘স্পনসরশিপ’ থেকে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই ‘স্পনসর’। বৈশালি বিউটি পার্লার, গোপালের ফার্নিচারের বিজ্ঞাপন মাঠের চারদিকে। ফেন্সিংও ঘেরা বিজ্ঞাপনে। কাঁথির পিছাবনিতে একটি টুর্নামেন্টের স্পনসর ছিলেন স্থানীয় ভোডাফোন ডিলার। ছক্কার বল ধরতে পারলে দর্শকদের সঙ্গে সঙ্গে বিনামূল্যে সিম দেওয়া হচ্ছিল। গ্রামীণ ওই টুর্নামেন্টটি হচ্ছিল একেবারে আইপিএল-এর ঢঙে। মাঠের এক পাশে শোলা দিয়ে তৈরি স্কোরবোর্ড। খেলার ফাঁকে ফাঁকে দর্শকদের জন্য ক্যুইজ।

এগরায় রাতের আলোয় ক্রিকেট।
সঠিক উত্তর দিলেই সঙ্গে-সঙ্গে উপহার। মঞ্চে চার ভাষায় ধারাভাষ্য। ধারাভাষ্যকার তাপস রাউত বলেন, “সাধারণত দু’জন করে কমেন্ট্রি করি। আমি একাই বাংলা, হিন্দি, ইংরেজিটা চালিয়ে দিই। ওড়িয়ায় অন্য এক জন। ওড়িশা সীমানা লাগোয়া বলে এ দিকে ওড়িয়া চলে। অন্য জায়গায় নয়। চার দিনের ম্যাচ হলে ১২০০-১৫০০ টাকা নিই। দিন-রাতের ম্যাচ হলে ৭০০-১০০০ টাকা।”
এই নকআউট টুর্নামেন্টগুলো নিয়ে উৎসাহও প্রচুর। ফল জানতে বন্ধুদের মধ্যে এসএমএস-ফোন চলে। এগরার অর্জুন মান্না বলেন, “আমাদের তো আর এত দূর থেকে ইডেন গার্ডেনে গিয়ে খেলা দেখা সম্ভব নয়। তবে, টিভিতে যেমনটা দেখি, মোটামুটি সেই মাপেই আয়োজন হয় এখানে।” দর্শকদের জন্য মাঠের ধারে ঘুঘনি, ছোলাভাজা বিকোয় দেদার। দিন-রাতের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হলে অস্থায়ী ভাবে রোলের দোকানও বসে। হাওড়ার দেউলটির তারক দাস বলেন, “খেলার মাঝে বিরতিতে ক্যুইজ হয় আমাদের টুর্নামেন্টে। পেন, টর্চ দেয়। বন্ধুরা মিলে হইহই করে খেলা দেখতে যাই। সবচেয়ে বড় কথা এই দলগুলোকে আমরা চিনি। তাই এদের নিয়ে আবেগটা অনেক বেশি।”

—নিজস্ব চিত্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.