সিএবি আইনের বজ্রআঁটুনিতে ফস্কা গেরো।
এবং সেটাকে ব্যবহার করেই আসন্ন অম্বর রায় সাব-জুনিয়র টুর্নামেন্টে খেলতে চলেছে বয়স ভাঁড়ানো-কাণ্ডে শাস্তিপ্রাপ্ত কয়েকটা ক্রিকেট কোচিং সেন্টার। নির্ধারিত জরিমানা না দিয়ে, সিএবি আইনকে ‘বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ’ দেখিয়ে। শুধু টিমের নামটা পাল্টে! শাস্তিপ্রাপ্ত কোচিং সেন্টারের ক্রিকেটাররাই খেলছে। কিন্তু ওই কোচিং সেন্টারের নামে নয়। সিএবি অনুমোদিত সংস্থার নামে!
এক নয়, এমন উদাহরণ একাধিক।
ঘটনাটা কী?
গত অম্বর রায় টুর্নামেন্টে খুদে ক্রিকেটারদের বয়স ভাঁড়ানোর অপরাধে তেরোটা কোচিং সেন্টারকে প্রথমে নির্বাসন-দণ্ড দিয়েছিল সিএবি। কিন্তু পরে কোনও কোনও মহলের চাপে সেটা আর্থিক জরিমানায় পর্যবসিত হয়। সিএবি ঘোষণা করে দেয়, যে তেরোটা কোচিং সেন্টারকে নির্বাসিত করা হয়েছিল তাদের পঁচিশ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। ভিডিওকন স্কুল অব ক্রিকেট, মেনল্যান্ড সম্বরণ অ্যাকাডেমি, টোয়েন্টি-টু ইয়ার্ডস, স্পোর্টস লাভার্স অ্যাসোসিয়েশন, উত্তর হাওড়া, হাওড়া সম্মিলনী এই ছয় এখনও পর্যন্ত জরিমানার টাকা দিয়েছে। বাকিরা নয়। নতুন বছরের টুর্নামেন্টের জন্য প্রথম দফার রেজিস্ট্রেশন শেষ হচ্ছে, কাল, ২ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাকিদের মধ্যে আপাতত তিনটে অ্যাকাডেমি নিয়ে বিভ্রান্তিতে সিএবি।
সৃষ্টি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। পি সি ঘোষাল ক্রিকেট কোচিং সেন্টার। বুলান ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। |
সৃষ্টি কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে সিএবি-কে পরিষ্কার জানিয়েছে, টাকা নেই। তাই জরিমানা দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সৃষ্টির ক্রিকেটাররা আসন্ন অম্বর রায়ে খেলবে। কুমোরটুলি এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবের হয়ে। কুমোরটুলির হয়ে সৃষ্টির ক্রিকেটাররা আগেই খেলত। নতুন সংযোজন ইন্টারন্যাশনাল। যারা দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাব এবং সিএবি অনুমোদিত সদস্য। পি সি ঘোষাল আবার জরিমানা দূরের ব্যাপার, আবেদনের রাস্তাতেও যায়নি। অথচ অভিযোগ, তাদের প্লেয়াররা নাকি খেলবে আড়িয়াদহ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে! সিএবি-ই বলছে। ইন্টারন্যাশনালের মতো আড়িয়াদহ-ও দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাব এবং অম্বর রায়-এ আবির্ভাব এই প্রথম। বুলান অ্যাকাডেমি জরিমানার অঙ্ক জমা দেয়নি। কিন্তু সিএবি-র কাছে খবর, তারাও নিজেদের ক্রিকেটার অন্য কোথাও খেলাবে। কিন্তু কোথায়, এখনও খবর নেই।
এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচনা চলছে সৃষ্টিকে নিয়ে। যে অ্যাকাডেমি সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, অরিন্দম ঘোষের মতো রঞ্জি ক্রিকেটার দেয়, তারা এমন পথ ধরল কেন? সৃষ্টির কোচ প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সোজাসুজি বলে দিলেন, “সিএবি আমার কোচিং ক্যাম্পকে নির্বাসিত করেছে। কোথাও তো বলেনি আমার ক্রিকেটাররা খেলতে পারবে না। আমি নিজে ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। ওদের এ বার কোচও আমি। চেষ্টা করব ক্যাম্পের ক্রিকেটারদের যতটা সম্ভব খেলার সুযোগ করে দিতে।”
ময়দান আবার যা দেখে বলছে, অন্য কোচিং ক্যাম্পের বদলে সিএবি-র অনুমোদিত সংস্থায় ক্রিকেটারদের খেলিয়ে দেওয়ার সুবিধে হচ্ছে কর্তারা চট করে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। যে ব্যবস্থা কোচিং ক্যাম্পের ক্ষেত্রে নেওয়া যায়, সেটা অনুমোদিত সংস্থার প্রতি চলে না। কড়া কিছু করতে গেলে ওয়ার্কিং কমিটি বা জেনারেল বডি-র অনুমোদন লাগে।
সিএবি কী বলছে? সংস্থার কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে মেনে নিচ্ছেন, জরিমানার সিদ্ধান্তের সময় এই ব্যাপারটা খেয়াল করে দেখা হয়নি। বলছেন, “এটা ঠিক যে কেউ কেউ ফাঁকটা ব্যবহার করছে। সৃষ্টি, পি সি ঘোষাল তো আছেই। বুলানের নামও আমরা শুনেছি। আপাতত কিছু করার নেই। রেজিস্ট্রেশন শেষ হলে দেখতে হবে।” রেজিস্ট্রেশনেও শোনা গেল নানা বিপত্তি দেখা দিয়েছে। কোনও কোনও কোচিং সেন্টার নাকি কোচের নাম লিখছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অক্ষরে। কোথাও আবার পুরো সইয়ের বদলে নাকি ‘ইনিশিয়াল।’ কারণ সিএবি পরিষ্কার জানিয়েছে, পরের বার থেকে বয়স ভাঁড়ানো কাণ্ডে কোনও অ্যাকাডেমি ধরা পড়লে, ক্রিকেটার, অ্যাকাডেমির সঙ্গে কোচকেও নির্বাসিত করা হবে। তাই ক্ষুদ্র অক্ষর ব্যবহার। ভরসা ইনিশিয়ালে।
সত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র এই বঙ্গ ক্রিকেট! |