মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতিটি ব্লকে একটি করে আইটিআই গড়ার কথা বলছেন। সেই প্রকল্পেরই অঙ্গ হিসাবে হাওড়ার জগৎবল্লভপুরে আইটিআই গড়তে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছে জেলা প্রশাসন। বাধা এসেছে তৃণমূল পরিচালিত জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির তরফেই। ফলে টাকা বরাদ্দ হলেও এখনও কাজ শুরুই করতে পারেনি জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মহম্মদ ইব্রাহিমের বক্তব্য, ‘‘আইটিআই তৈরির জন্য সঠিক জায়গা নির্বাচন করা হয়নি। সেই কারণেই আমরা জায়গা পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মেনেই আমরা বাধা দিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা সব কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছি। এরপরে তিনি অবশ্য যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা মেনে নেব।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত আইটিআই গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জগৎবল্লভপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে। পার্কটি তৈরি হচ্ছে মূলত বেসরকরি উদ্যোগে। হাওড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিই জমি কিনে পার্কটি গড়ে তুলছে। এখানে ক্ষুদ্র ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের একটি ক্লাস্টারও গড়ছে তারা। এখানেই আইটিআই গড়ার জন্য পরিকল্পনা করেছে জেলা প্রশাসন। আইটিআই-টি তৈরি হবে পিপিপি মডেলে। |
অভিযুক্ত তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি |
‘‘মুন্সিরহাটে রাস্তার ধারেই ৩ একর খাস জমি রয়েছে। সেই জমিতেই আইটিআই গড়া হোক।”
মহম্মদ ইব্রাহিম। (জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি) |
“সরকার যেখানে চাইবে আইটিআই সেখানেই হবে। ইব্রাহিমকে বলে সমস্যা আলোচনায় মেটাতে।”
পুলক রায়। (গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি।) |
|
জেলা প্রশাসন এখানে ভবন তৈরি করে দেবে। ভবিষ্যতে এটি চালাবে চেম্বারের সদস্যরাই। প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, এখানে শিল্প গড়ে উঠলে আইটিআই থেকে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা এই শিল্পতালুকেই চাকরি পাবেন। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে শিল্পের প্রয়োজনে দক্ষ শ্রমিকের অভাবও মিটবে। চেম্বারের সভাপতি শঙ্কর সান্যালের দাবি, মূলত এ সব কারণেই তাঁরা পিপিপি মডেলে আইটিআই গড়ার জন্য শিল্পতালুকের ভিতরেই জেলা প্রশাসনকে তিন একর জমি দান করেন।
কিন্তু জমি পেয়ে যাওয়ার পরে কাজ শুরু করতে গিয়েই বাধার মুখে পড়েন প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীরা। গত সপ্তাহের শুরুতে তাঁরা জমি মাপা করতে এলে তাঁদের কার্যত মারধর করেই তাড়িয়ে দেন গ্রামবাসীদের একাংশ। তারপর থেকেই এই এলাকায় তাঁরা আর পা দেননি। স্থানীয় বাসিন্দাদেরই একাংশের দাবি, বিক্ষোভে মদত দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতিরই কর্তারা। সমিতির সভাপতি অবশ্য বিক্ষোভে মদত দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, ‘‘গ্রামবাসীরাই আসলে চাইছেন না শিল্পতালুকে আইটিআই হোক। আমরা খতিয়ে দেখেছি গ্রামবাসীদের অভিযোগ সত্যি। তাই আমরা জায়গা পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি।’’
তা হলে কোথায় হবে আইটিআই? বিকল্প জায়গা তৈরিই আছে বলে দাবি করেছেন ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘‘মুন্সিরহাটে রাস্তার ধারেই ৩ একর খাস জমি রয়েছে। সেই জমিতেই আইটিআই গড়া হোক এ কথা আমরা পঞ্চায়েত ও জেলাশাসককে জানিয়েছি। শিল্পতালুকে জেখানে আইটিআই গড়ার কথা বলা হচ্ছে সেটি মাঠের মাঝখানে। সেখানে যাতায়াতের সমস্যা রয়েছে।’’
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ অবশ্য সমিতির এই বক্তব্য মানতে নারাজ। তাঁদের পাল্টা বক্তব্য, খাস জমি আরও অন্য ভাবে ব্যবহার করা যায়। শিল্পতালুকের ভিতরেই যেহেতু জমি পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই আইটিআই হওয়া বাঞ্ছনীয়। ওই শিল্পতালুকে যাতায়াতের সমস্যা মেটাতে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে দেড় কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য পঞ্চায়েত সমিতিকে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। সমিতির সভাপতি আবার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনও নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ১০০ দিনের প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হবে না।’’
পুরো ঘটনাটিতে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন শঙ্করবাবু। তিনি বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনকে আমরা জমি দান করেছি। ওখানে তারা কী ভাবে আইটিআই গড়বে, তা তারাই বুঝবে। এ ব্যাপারে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই।’’ জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস বলেন, “ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কেই আইটিআই তৈরি হবে। তবে পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে যদি কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে তা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া হবে।” অন্য দিকে জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি তথা পরিষদীয় সচিব পুলক রায় বলেন, “আমরা ইব্রাহিমকে বলেছি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটি মিটিয়ে নিতে। সরকার যেখানে চাইবে আইটিআই সেখানেই হবে।” |