তিন বছর পরে যে-কে-সেই। যান নিয়ন্ত্রণের সেই বেহাল ছবিটি আবার ফিরে এসেছে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট এলাকায়। পুরবাসীদের এমনই অভিযোগ।
২০১১-এ হাওড়ায় পুলিশ কমিশনারেট চালু হওয়ার পরে যানচালকদের ট্রাফিক আইন মানতে বাধ্য করার যে চেষ্টা পুলিশের মধ্যে দেখা গিয়েছিল, অভিযোগ তা এখন তলানিতে ঠেকেছে। ফলে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে যাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ফলে এক দিকে যেমন আইন ভাঙলে জরিমানা বাবদ প্রাপ্ত কমে গিয়েছে। অন্য দিকে, কমে গিয়েছে গাড়ির গতিও। যে রাস্তা দিয়ে আগে গন্তব্যে পৌঁছতে ২০ মিনিট লাগত, এখন লাগছে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ঠিক মতো না হওয়ায় শহরে গাড়ির গতি যে ফের কমেছে এবং আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা যে বেড়েছে তা মেনে নিয়েছেন খোদ পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডেও। তিনি বলেন, “মূলত দু’টি কারণে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ট্রাফিক দফতরে কর্মরত ১২জন পদস্থ অফিসারের পদোন্নতি হওয়ায় তাঁরা অন্যত্র চলে গিয়েছেন। সেই জায়গায় অভিজ্ঞ অফিসার মেলেনি। দ্বিতীয়ত, নবান্নের আশপাশের রাস্তার পাহারায় অতিরিক্ত অফিসার ও কর্মী
মোতায়েন করার জন্য শহরের সব জায়গায় প্রয়োজন মতো ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা যাচ্ছে না।
তবে এর মধ্যেই আমরা যান নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।” |
এ ভাবেই চলছে বেপরোয়া যান চলাচল। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার। |
পুলিশ কমিশনারেট হওয়ার পরে হাওড়ার বেপরোয়া ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রায় ৪ হাজার সিটি পুলিশ ভলান্টিয়ার্স ফোর্স বা সিপিভিএফ কর্মী নেওয়া হয়েছিল। ছ’টি ট্রাফিক গার্ড তৈরি হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল ডিসি ট্রাফিক পদও। সিপিভিএফ-কে মূলত যান নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগানো হয়েছিল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট বা পদস্থ পুলিশ কর্তাদের দেখা যেত। আইন ভাঙা চালকদের জরিমানা করা হত। হাওড়া সিটি পুলিশের ওয়েবসাইটই বলছে, শুধু ২০১২-য় ট্রাফিক আইন না মানার জন্য জরিমানা বাবদ আয় হয়েছিল ৭ কোটি ৪৪ লক্ষ ২০ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু ২০১৩-এ এই আয় কমে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৪৪ লক্ষ ৪০ হাজার ৪৫০ টাকা। এ বিষয়ে পুলিশের একাংশের বক্তব্য, ট্রাফিক আইন কার্যকর করার বিষয়ে পুলিশ কর্তাদের ঢিলেঢালা মনোভাবের জন্যই জরিমানা আদায় কমেছে। পাশাপাশি শহর ফের তিন বছর আগের অবস্থায় ফিরে গিয়েছে।
কদমতলার বাসিন্দা পার্থ শী বলেন, “আগে এখানে হেলমেট না পরে মোটরসাইকেল চালানোটাই নিয়ম ছিল, পুলিশের জরিমানা আদায়ের ঠেলায় প্রায় সবাই হেলমেট পরতে শুরু করে।
জরিমানার ভয়ে ওভারটেকিং, যত্রতত্র পার্কিং, রেষারেষিও কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ ঢিলে দেওয়ায় ফের সব শুরু হয়েছে।” হাওড়া মল্লিক ফটক এলাকার পুরানো বাসিন্দা অম্বুজ রায় বলেন, “শুধু মোটরসাইকেল চালকই নন, অন্য যানচালকরাও ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে ওয়ানওয়ে কিছুই মানছেন না।” মধ্য হাওড়ার বাসিন্দা পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, “হাওড়ায় ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নতির জন্য আগে প্রশংসা করেছিলাম।
এখন যা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি, তা ভাল নয়।” |