|
আপনার সাহায্যে... |
|
|
এক বার মিসক্যারেজ হলেও
চুপ করে বসে থাকবেন না
তখন অবশ্যই বুদ্ধি করে চলতে হবে। সতর্ক করলেন
ডা. প্রসেনজিৎ সরকার
লিখছেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়। |
|
প্র: মনে করা যাক, আমার বয়স ছত্রিশ। বেশি বয়সে বিয়ের জন্য কি মিসক্যারেজ হতে পারে?
উ: হ্যাঁ। মিসক্যারেজের সম্ভাবনা বেশি।
প্র: তবে? কী করব?
উ: প্রেগন্যান্সি এসেছে বুঝলেই সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যাবেন। তাঁর পরামর্শ মতো সাবধানে থাকবেন।
প্র: সাবধান বলতে অফিস বন্ধ করে বাড়িতে?
উ: না না, স্বাভাবিক জীবনযাপন করবেন। তবে কোনও রকম শারীরিক ও মানসিক ধকল নেবেন না। একমাত্র মিসক্যারেজের সম্ভাবনা দেখা দিলে বিশ্রামে থাকতে হবে।
প্র: মিসক্যারেজের সম্ভাবনা! সেটা কী করে বুঝব?
উ: প্রেগন্যান্সির সময় ব্লিডিং আর পেটে ব্যথা শুরু হলে বুঝবেন মিসক্যারেজ হতে পারে। তক্ষুনি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
প্র: কী ধরনের পেট ব্যথা?
উ: দফায় দফায় মোচড় দিয়ে পেট ব্যথা। সঙ্গে ব্লিডিং।
প্র: সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে গেলে মিসক্যারেজ এড়ানো যাবে?
উ: অনেকটা। কারণটা খুঁজে পেলে চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া যায়।
প্র: কেন হয় এ রকম?
উ: অনেক কারণ থাকতে পারে। ভ্রূণের নিজের কোনও সমস্যা হতে পারে। আবার মায়ের কারণেও মিসক্যারেজ হতে পারে।
প্র: মায়ের কারণ বলতে?
উ: এই যে দেরি করে প্রেগন্যান্সি নিচ্ছেন।
প্র: কিন্তু অনেককেই তো দেখছি চল্লিশেও সুস্থ বাচ্চার জন্ম দিচ্ছে।
উ: চল্লিশে যে সুস্থ বাচ্চা হবে না, এর কোনও মানে নেই। তবে কি না বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মিসক্যারেজের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আসলে মায়ের থাইরয়েড, ব্লাডসুগার, ব্লাডপ্রেসারের মতো সমস্যাগুলো চলে আসে। প্রেগন্যান্সিতে সমস্যা তৈরি করে দিতে পারে এই সব অসুখ। তাই বেশি বয়সে মা হতে চাইলে এ সব সমস্যার কথা ভাবতে হবে। সমস্যা থাকলে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে এনে তার পর প্রেগন্যান্সি-প্ল্যানিং করবেন। |
|
প্র: ধরুন আগে কিছু ছিল না, প্রেগন্যান্সির মাঝে ধরা পড়ল, তখন?
উ: ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে সে সব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
প্র: কিন্তু কম বয়সেও তো দেখি আকছার মিসক্যারেজ হচ্ছে।
উ: হতেই পারে। ধরুন প্রেগন্যান্সির মাঝে মা’র ইনফেকশন হল। বা আগে কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল। যার জন্য মিসক্যারেজ হয়ে
গেল। আর এক বার মিসক্যারেজ হলে পরে আবার মিসক্যারেজের সম্ভাবনা থেকে যায়।
প্র: ধরুন এক বার মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। তখন?
উ: এক বার মিসক্যারেজ হয়ে থাকলে একদমই চোখ বুজে বসে থাকবেন না। কেন হল, পরীক্ষা করে কারণটা খুঁজতে হবে। তার ট্রিটমেন্ট করে সমস্যা মিটিয়ে তবেই পরের বার প্রেগন্যান্সি-প্ল্যানিং করবেন। যেমন পলিসিস্টিক ওভারি থাকলে আগে সেটার ট্রিটমেন্ট দরকার। নইলে আবার মিসক্যারেজ হতে পারে।
প্র: পরীক্ষা বলতে?
উ: কিছু রক্ত পরীক্ষা এবং ইউএসজি। জরায়ুর গঠনগত ত্রুটি আছে কি না দেখার জন্য হিস্টেরোস্কপিও করা হয়।
প্র: শুনেছি জরায়ুতে টিউমার থাকলে প্রেগন্যান্সির আগে সেটা অপারেশন করে নিতে হয়। এটা কি ঠিক?
উ: টিউমার, পলিপ যাই থাকুক না কেন, নির্ভর করছে সেটা কোথায় আছে। তবে অপারেশন করতে হলেও এখন আর পেট কাটার দরকার হয় না। ল্যাপরোস্কপি করে সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া যায়।
প্র: এর পর অফিস করা যাবে?
উ: হ্যাঁ। পুরো প্রেগন্যান্সিতে সব কিছুই করতে পারেন। একটু সাবধান থাকলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
প্র: কী রকম সাবধান?
উ: চলাফেরা সাবধানে। পেটে যেন কোনও চাপ না পড়ে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা যতটা পারেন কম। মোটের ওপর কোনও রকম শারীরিক আর মানসিক চাপ নেবেন না। প্রেগন্যান্সির সময় হুটহাট করে নিজে নিজেই ওষুধ খেয়ে নেবেন না।
প্র: মানসিক চাপ থেকেও অঘটন ঘটে?
উ: হ্যাঁ।
প্র: আচ্ছা বলুন তো কী খেলে সমস্যা হবে না?
উ: মিসক্যারেজের সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। সুষম খাবার খাবেন। তবে বাইরের খাবার এড়িয়ে চলবেন। বদহজমের মতো সমস্যা কম হবে। |
বিপদ এড়াতে |
|
• আগে মিসক্যারেজ হলে অবশ্যই তার কারণ খুঁজে ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে হবে।
• প্রেগন্যান্সির সময় কোনও রকম শারীরিক ও মানসিক চাপ নেওয়া যাবে না।
• প্রেগন্যান্সি চলাকালীন মোচড় দিয়ে তলপেট ব্যথার সঙ্গে ব্লিডিং দেখা দিলে, অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন।
• চলাফেরা সাবধানে। পেটে যেন কোনও চাপ না পড়ে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা কম করতে হবে।
• মাথায় রাখতে হবে মায়ের বয়স বাড়লে মিসক্যারেজের সম্ভাবনা বাড়বে। |
|
প্র: প্রেগন্যান্সিতে কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না?
উ: কোনও ওষুধই নিজের থেকে খাওয়া উচিত নয়।
প্র: সামান্য মাথাব্যথা হলেও কি ডাক্তারকে জানাতে হবে?
উ: মাথাব্যথায় প্যারাসিটামল চলবে। প্রয়োজনে অ্যান্টাসিড খেতে পারেন। তার বেশি কিছু দরকার হলে ডাক্তারকে না জানিয়ে খাওয়া উচিত না। বিশেষ করে প্রেগন্যান্সির প্রথম ও শেষ তিন মাস। আর প্রেগন্যান্সির সময় ধূমপান একেবারে বন্ধ রাখবেন।
প্র: একটা-দুটো সিগারেট খেলেও সমস্যা হবে?
উ: একটা খেতে গিয়ে পাঁচটা খেয়ে ফেলবেন। তার থেকে প্রেগন্যান্সি প্ল্যানিং করার সময়ই ধূমপান একেবারে বন্ধ করে দেবেন। মাথায় রাখবেন আপনি মা হতে চলেছেন। নিকোটিন আর কার্বন মনোক্সাইড বাচ্চার ক্ষতি করবে।
প্র: আর মদ্যপান?
উ: না খেলেই ভাল।
প্র: প্রেগন্যান্সির সময় ব্যায়াম করা যাবে?
উ: নর্মাল ডেলিভারির জন্য ডাক্তারই কিছু ব্যায়াম করতে বলবেন। সেগুলো ছাড়া ডাক্তারকে না জানিয়ে কোনও ব্যায়াম করবেন না। বিশেষ করে যাতে শরীরের ওপর চাপ পড়ে। হাল্কা মর্নিংওয়াক করতে পারেন। তবে সাঁতার বন্ধ।
প্র: আর কিছু?
উ: বার বার অ্যাবর্শন করালে কিন্তু পরে প্রেগন্যান্সি এলে মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
প্র: কেন?
উ: অ্যাবর্শন করালে জরায়ুর নানা ক্ষতি হতে পারে। টিউব ব্লক হয়ে যেতে পারে। বা কোনও ইনফেকশন হয়ে গেল। সব মিলিয়ে দেখলেন পরে আর প্রেগন্যান্সিই আসছে না। বা এলেও বার বার মিসক্যারেজ হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে তবেই অ্যাবর্শনের দিকে এগোবেন। |
যোগাযোগ: ৯৯০৩০১৫৫৯০ |
|