বিমান-সুরক্ষায় ভারতের মান ছেঁটে দিল আমেরিকা
বিমান পরিবহণে নিরাপত্তার নিরিখে ভারতকে পিছনে ঠেলে দিল আমেরিকা। প্রথম স্তর থেকে দ্বিতীয় স্তরে। ফলে মার্কিন মাপকাঠিতে পাকিস্তানের বিমান-সুরক্ষার মান ছাপিয়ে গেল ভারতকে। এ ক্ষেত্রে ভারত এখন বাংলাদেশ, ঘানা বা বার্বাডোজের মতো দেশের সঙ্গে এক সারিতে।
যে সব দেশের বিমান নিয়মিত মার্কিন মুলুকে যাতায়াত করে, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সংক্ষেপে এফএএ) সেই দেশগুলোয় গিয়ে উড়ানের নিরাপত্তা খুঁটিনাটি যাচাই করে থাকে। সমীক্ষায় এফএএ প্রতিনিধিরা সন্তুষ্ট হতে না-পারলে বিমান-সুরক্ষামানের মার্কিন তালিকায় দেশটির অবনমন ঘটে। তখন ওই দেশের মার্কিন ভূখণ্ডে যাতায়াতকারী সংশ্লিষ্ট বিমানসংস্থার উপরে কিছু শর্তও আরোপ করা হয়।
এ বার অবনমন ঘটেছে ভারতের। বিমান মন্ত্রকের খবর: এই প্রথম আমেরিকা এ ভাবে ভারতের মান নামিয়ে দিল। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরে এফএএ-প্রতিনিধিরা ভারতে এসে সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। যার ভিত্তিতে শুক্রবার এফএএ সিদ্ধান্তটি জানিয়ে দিয়েছে। এবং এই মুহূর্তে ভারত থেকে আমেরিকায় নিয়মিত উড়ান চালাচ্ছে যে দুই বিমানসংস্থা, অবনমনের দরুণ সেই এয়ার ইন্ডিয়া ও জেট এয়ারওয়েজ কিছুটা অসুবিধায় পড়তে পারে বলে বিমান পরিবহণ মহলের আশঙ্কা। কী রকম?
সূত্রের ব্যাখ্যা: মার্কিন এক বিমানসংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে আরও সে দেশে আরও কিছু গন্তব্যে উড়ান চালানোর পরিকল্পনা করেছে জেট। অন্য দিকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ-লুফ্তহানসার মতো বিশ্বের বেশ কিছু নামজাদা বিমানসংস্থাকে নিয়ে গঠিত যে জোট, সেই ‘স্টার-অ্যালায়েন্স’-এ সামিল হওয়ার কথা রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া-র। স্টার অ্যালায়েন্সের সদস্য সংস্থারা পরিচালনা ও যাত্রী-পরিষেবার বিবিধ ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা পেয়ে থাকে। কিন্তু এখন মার্কিন সুরক্ষা-মূল্যায়নে ভারতীয় উড়ানের ‘পদাবনতি’র জেরে দু’টি পরিকল্পনাই সঙ্কটে পড়তে পারে বলে বিমান পরিবহণে জড়িত অনেকের মত। উপরন্তু নতুন পরিস্থিতিতে মার্কিন বিমানবন্দরে যখন-তখন সেখানকার ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে জেট বা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান পরীক্ষা করানো হতে পারে, যাতে সংস্থার ভাবমূর্তি ধাক্কা খেতে পারে।
এ দিন রাতে অবশ্য এয়ার ইন্ডিয়া-র তরফে জানানো হয়েছে, এফএএ-র সিদ্ধান্ত তাদের স্টার-অ্যালায়েন্সের সদস্য হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করবে না। স্টার-অ্যালায়েন্সের তরফেই এমন আশ্বাস মিলেছে বলে এয়ার ইন্ডিয়া-র দাবি। জেট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। ভারতে বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) সূত্রের মন্তব্য, “এফএএ-র সমীক্ষাকারীরা অভিযোগ করে গিয়েছিলেন যে, তাঁদের দেওয়া ৩৩ দফা সুরক্ষা-শর্তের বেশ কয়েকটি নাকি ভারতে মানা হচ্ছে না। তার পরেই এ দিনের সিদ্ধান্ত।” ভারত সরকারের কী বক্তব্য?
বিভিন্ন দেশের বিমান পরিবহণে সুরক্ষা বলয় যাচাই করে থাকে একটি আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (ইকাও)। ইকাও-নির্দেশিকা মেনে চলার কথা প্রতিটি দেশের। এটা আবশ্যিক। মার্কিন সিদ্ধান্ত জানার পরে এ দিন ভারতের বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ বলেন, “আমরা ইকাও-এর সমস্ত নিয়ম-নীতি মেনে চলি।” কিন্তু তা হলে আমেরিকার এ হেন খবরদারি কেন? এ কি দেবযানী-কাণ্ডের জের? আমেরিকায় নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে নিগ্রহের প্রতিবাদে নয়াদিল্লি যে ভাবে এ দেশে মার্কিন কূটনীতিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নিয়েছিল, এফএএ কি তারই বদলা নিল? বিমানমন্ত্রী এ হেন তত্ত্বে গুরুত্ব দেননি। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে দেবযানী-কাণ্ডের পরে নয়াদিল্লি যে রকম কড়া মনোভাব দেখিয়েছিল, এ বারেও তেমন কিছু হবে না কেন? সপ্তাহে যে ২৮টি ভারতীয় উড়ান আমেরিকায় যাতায়াত করে, সেগুলোকে তুলে নিলেই তো হয়!
সরকারি মহলে যদিও এই সম্ভাবনা আমল পাচ্ছে না। বিমানসংস্থাগুলিও একে সমর্থন করছে না। তাদের যুক্তি, এমনটা হলে আমেরিকায় বসবাসকারী বহু ভারতীয় বিপদে পড়ে যাবেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.