|
|
|
|
বাপ্পি এখন বিজেপির, লড়বেন বাংলা থেকে
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৩১ জানুয়ারি |
প্রশ্ন শুনে থতমত বিজেপি সভাপতি। সিনেমা না দেখুন, ডিস্কো ড্যান্সার দেখেছেন নিশ্চয়ই?
সামনে সারি সারি ক্যামেরা। ভোটের আগে বলিউডের ছোট-বড় তারকা যোগ দিচ্ছেন বিজেপি-তে। রাজনীতির প্রশ্ন না হয় সামলে নেওয়া যায়। কিন্তু দলের সদস্য হয়েছেন পাঁচ মিনিট হল। তার মধ্যেই এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়ায় রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার জোগাড় রাজনাথ সিংহের। তড়িঘড়ি সামলে নিয়ে যেন কিছুটা মনরক্ষার তাগিদেই বললেন, “হ্যাঁ, হ্যা। আলবাত দেখেছি। এখন ভাল লাগছে আপনারাও বিজেপিকে দেখছেন। আপনি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। সেখানে অনেক ভরসা আপনার উপর।”
এ বার তা হলে একটা গান হোক। সম্মিলিত সাংবাদিকদের অনুরোধ বাপ্পিদাকে। বাপ্পি লাহিড়ী। তৈরিই ছিলেন। চিরকূটে বাংলাতেই লিখে এনেছিলেন চার লাইন। গেয়েও শোনালেন। ‘অটলজিকে প্রণাম/ আডবাণীজিকে প্রণাম/ রাজনাথের স্বপ্ন হবে সাকার/ মোদী করবেন চমৎকার।’ ঠিক এই ভাবেই দশ বছর আগে দিল্লিতে এআইসিসি দফতরে গিয়ে সনিয়া গাঁধীর জয়গান করেছিলেন। আজ করছেন মোদীর। বাপ্পির জবাব, “তখন হাওয়া ও দিকে ছিল। আজ হাওয়া বদলেছে।” |
|
এ বার রাজনীতির মালা। পরাচ্ছেন রাজনাথ সিংহ। নয়াদিল্লিতে শুক্রবার। ছবি: ইয়াসির ইকবাল। |
কিন্তু শুধু হাওয়া বুঝেই ঘুরপাক খাচ্ছেন বাপ্পি লাহিড়ী? তা যে নয়, সেটাও জানিয়েছেন তিনি। স্পষ্টই বলেছেন, “আসলে কংগ্রেস আমাকে সুযোগ দেয়নি। কিন্তু রাজনাথ সিংহ সেই সুযোগটা করে দিচ্ছেন। তার জন্য আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।”
আজ দলে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দেওয়ার আগেই রাজনাথ দলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি রাহুল সিংহের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির করে ফেলেছেন, বাংলা থেকে লোকসভায় লড়বেন বলিউডের এই তারকা। রাহুল সিংহ বলেন, “আমি ওই সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। রাজনাথ সিংহের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। বাপ্পি লাহিড়ী পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকসভা ভোটে লড়তে রাজি হয়েছেন।” রাহুল এ-ও জানান যে, “বাপ্পি লাহিড়ীর জন্য ৩টি আসনের কথা ভাবা হয়েছে। যে কোনও একটি তিনি বেছে নেবেন।” আর বাপ্পি বললেন, “এখনও ঠিক হয়নি আসন। তবে কলকাতারই কোনও আসন হতে পারে।”
ক’দিন আগেই ডিস্কো ড্যান্সারের নায়ক মিঠুন চক্রবর্তীকে রাজ্যসভার টিকিট দিয়ে চমক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মোকাবিলায় কি সেই ছবির সঙ্গীত পরিচালকই পাল্টা অস্ত্র বিজেপি-র? বাপ্পির জবাব, “ভাল তো! মিঠুন রাজ্যসভায় যাচ্ছে। আমি লোকসভায়।”
সংখ্যা অনুকূলে থাকলে মনোনয়ন পেশ করেই রাজ্যসভায় জেতা যায়। কিন্তু লোকসভায় জেতার জন্য তো মেহনত করতে হবে। বাপ্পি বললেন, “করব। বাংলায় আমার ভক্তকুল কি কম?”
অনেক দিন ধরেই সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দলে টানার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদী। এর আগে পশ্চিমবঙ্গে দলের পর্যবেক্ষক বরুণ গাঁধী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সৌরভ রাজিনীতির ময়দানে পা রাখতে রাজি হননি। এ জন্য বিজেপি নেতাদের আফশোসও কম নয়। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে কোথাও বাপ্পি লাহিড়ীকে প্রার্থী করার কথা বলে আজ থেকেই যে ভাবে প্রচার শুরু হয়েছে, সেটা রাজ্য বিজেপি-র বাড়তি প্রাপ্তি। বিশেষ করে আগামী বুধবার ব্রিগেডে মোদীর সভার আগে। তবে ব্রিগেডের সভায় থাকছেন না বাপ্পি। তিনি কলকাতায় যাচ্ছেন ৯ তারিখ। সে দিনই আসন নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে। কিন্তু কখনও কংগ্রেস, কখনও বিজেপি, ভোট এলেই এই পরিযায়ীদের দলে-দলে বিচরণ কতটা লাভ হয় রাজনৈতিক দলগুলির? বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে দাবি করছেন, এঁরা আসছেন মোদীর টানে। কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, আম আদমি পার্টি যখন সমাজের বিশিষ্ট জনদের নিয়ে আসে, তখন তো প্রচার হয়। বলিউডের তারকারা এলে বিজেপি-রও প্রচার হবে। আর তাতে যদি আসন বেরিয়ে আসে, তা হলে সোনায় সোহাগা! অনেকে মোদীকে সমর্থন করেন, কিন্তু সরাসরি দলে যোগ দিতে চান না। লতা মঙ্গেশকরও তো মোদীকে সমর্থন করেছেন। সলমন খানও ঘুড়ি উড়িয়েছেন মোদীর সঙ্গে। কিন্তু দলে আসেননি। প্রশংসা করেছেন মোদীর, বলেছেন ভাল মানুষ। কিন্তু যোগ্যতম বলেননি তাঁকে। সেই হিসেবে এ বারের ভোট মরসুমে তারকাদের মধ্যে বাপ্পি লাহিড়ীই প্রথম, যিনি বিজেপি-তে এলেন। আর পশ্চিমবঙ্গের দলের শক্তি কিছুটা বাড়াতে যদি তাঁর জনপ্রিয়তা সাহায্য করে, তা তো দলেরই লাভ। |
|
|
|
|
|