“আমি এক বার মিউজিয়াম গিছলুম। তা দেখালে ইট পাথর হয়ে গেছে। জানোয়ার পাথর হয়ে গেছে। দেখলে সঙ্গের গুণ কি! তেমনি সর্বদা সাধুসঙ্গ করলে তাই হয়ে যায়।” ভারতীয় জাদুঘর দেখে এমনটাই বলেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ।
স্মৃতির সরণি বেয়ে দুশো পেরলো ভারতীয় সংগ্রহালয়। আগামিকাল, রবিবার সকালে সংগ্রহালয়ের দ্বিশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করার কথা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের। এ ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী চন্দ্রেশকুমারী কাটোচ প্রমুখ।
সংগ্রহালয়ের অধিকর্তা বি বেণুগোপাল দ্বিশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি। তবে সংগ্রহালয় সূত্রের খবর, ভিতরে গ্যালারি সংস্কারের পাশাপাশি সংগ্রহালয়ের ভবনটিরও বহিরঙ্গে সংস্কার হয়েছে। নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব, গান্ধারশিল্প, অলঙ্করণ ও বস্ত্র, মুদ্রা ও মানবজাতির ক্রমবিকাশ গ্যালারি। গ্যালারির মেঝেতে বসানো হয়েছে বেলেপাথর। প্রদর্শগুলির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক আলো এবং লেবেল। শুধু তাই নয় পুরনো প্রদর্শের পাশাপাশি থাকবে বহু না দেখা সংগ্রহ। নিরাপত্তার কারণে বসানো হয়েছে আধুনিক সিসি টিভি ও ক্যামেরা। এ সবের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ক্যাফেটেরিয়া ও সুভেন্যির শপ। প্রকাশিত হবে বই, ডাকটিকিট ও ফার্স্ট ডে কভার। সন্ধে হলেই আলোয় সাজবে বাঙালির ‘জাদুঘর’। রবিবার বিকেলে প্রতিষ্ঠাদিবসের ভাষণ দেবেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার। সংস্কারের জন্য গত সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ থাকার পরে সংগ্রহালয় সবার জন্য জন্য খুলে দেওয়া হবে ৪ ফেব্রুয়ারি। |
আলোয় সেজেছে জাদুঘর। ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী। |
১৮১৪-র ২ ফেব্রুয়ারি পার্ক স্ট্রিটের এশিয়াটিক সোসাইটির বাড়িতেই ন্যাথানিয়াল ওয়ালিচের তত্ত্বাবধানে সংগ্রহালয়ের সূচনা। এর সঙ্গেই শুরু হয় দেশের ‘মিউজিয়াম মুভমেন্ট’। ১৮১৬-র মধ্যে ২৭জন ইয়োরোপীয় সংগ্রাহক ১৭৪টি নিদর্শন সংগ্রহালয়ে দান করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রেভারেন্ড উইলিয়াম কেরি, কর্নেল স্টিওয়ার্ড, কলিন ম্যাকেনজি, ক্যাপ্টেন ডিলন প্রমুখ। তবে এ কাজে ভারতীয় তথা বাঙালিরাও পিছিয়ে ছিলেন না। সেই সময় ৪৯ জন ভারতীয় সংগ্রহালয়ে দান করেছিলেন নানা নিদর্শন। বাঙালিদের মধ্যে ছিলেন রামকমল সেন, শোভাবাজারের রাধাকান্ত দেব, কালীকৃষ্ণ ঠাকুর, মথুরানাথ মল্লিক, শিবচন্দ্র দাস প্রমুখ। পরবর্তী কালে বহু পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত সংগ্রহ এই সংগ্রহালয়কে সমৃদ্ধ করেছে।
১৮১৪ থেকে ১৮৭৮ পর্যন্ত সংগ্রহালয় ছিল এশিয়াটিক সোসাইটির বাড়িতে। পরে সংগ্রহালয় স্থানান্তরিত হয় বর্তমান ভবনটিতে। ভবনটির নকশা করেছিলেন ওয়াল্টার বি গ্রানউইল, ১৮৭৮-এর ১ এপ্রিল নতুন ভবনে সংগ্রহালয়টি সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় ছিল মাত্র দুটি গ্যালারি। পরবর্তী কালে শিল্প, প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ভূতত্ত্ব, প্রাণিতত্ত্ব এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অন্তর্গত গড়ে ওঠে অসংখ্য গ্যালারি।
সংগ্রহালয়ের নাম বদলেছে একাধিক বার। প্রথমে ‘এশিয়াটিক সোসাইটি মিউজিয়াম’ পরে তা বদলে হয় ‘ইমপিরিয়াল মিউজিয়াম’।
পরবর্তী কালে সেটাও বদলে হয় ‘ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম’।
তবে নামে কী আসে যায়!
দুশো বছরেও জাদুঘরের জাদু আজও অম্লান। |