বাসে পিষ্ট করে ভাইকে খুন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড যুবকের
ম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে ভাইকে বাসের চাকায় পিষে মেরেছিল দাদা। সেই মামলার বিচারে মা-বোনের সাক্ষীর ভিত্তিতেই অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন সাজা দিল শিয়ালদহ আদালত।
২০১১ সালের ১ অগস্ট উল্টোডাঙা থানা এলাকার বেলগাছিয়া এবং দত্তবাগান রোডের সংযোগস্থলে ভোর সওয়া পাঁচটা নাগাদ ৩সি রুটের একটি বেসরকারি বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় চায়ের দোকানের মালিক সুনীল গুপ্তের। বাসটির চালক ছিল মৃত সুনীল গুপ্তের দাদা অনিল। তদন্তের পরে পুলিশ আদালতকে জানায়, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরেই ঠান্ডা মাথায় ভাইকে খুন করেছে অনিল। তার ভিত্তিতে সরকার পক্ষের হয়ে সওয়াল শুরু করেন শিয়ালদহ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি অসীম কুমার এবং নিবাস দত্তচৌধুরী।
অসীমবাবু জানান, মামলায় অনিল ও সুনীলের মা সরস্বতীদেবী এবং তাঁদের মেজ বোন অঞ্জুর সাক্ষীতেও বিবাদের কথা উঠে আসে। বাসটিতে যে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না, তা ওই বাসের কন্ডাক্টরের কথায় জানা যায়। যদিও অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সওয়াল করেছিলেন, দত্তবাগান মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল ঠিক ছিল না। কিন্তু পুলিশি তদন্তে সিগন্যাল খারাপ থাকার কোনও প্রমাণ মেলেনি বলেই সরকারি কৌঁসুলির দাবি। ওই সওয়াল-জবাবের ভিত্তিতেই শিয়ালদহ আদালতের প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক সুকুমার সূত্রধর অনিলকে যাবজ্জীবন সাজা দেন।
কী ভাবে জানা গিয়েছিল খুনের ঘটনাটি?
লালবাজার সূত্রের খবর, ঘটনার পরে উল্টোডাঙা থানার পুলিশ একটি পথ-দুর্ঘটনার মামলা শুরু করে। পরে তদন্ত করতে গিয়ে লালবাজারের ফেটাল স্কোয়াড ট্রাফিক পুলিশের (এফএসটিপি) গোয়েন্দারা জানতে পারেন সুনীল ও অনিল দুই ভাই। পরে সুনীল-অনিলের বোন অঞ্জু গুপ্ত পুলিশের কাছে দাদার বিরুদ্ধে ভাইকে বাস চাপা দিয়ে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
এফএসটিপির গোয়েন্দারা তদন্তে জানতে পারেন, পাতিপুকুর রেল সেতুর কাছে চায়ের দোকানটির মালিকানা নিয়েই দু’ভাইয়ের শত্রুতার সূত্রপাত। মা ও বোনের দায়িত্ব নেওয়া সুনীল একা কেন দোকানের মালিকানা পাবেন, তা নিয়েই ঝগড়া করতেন অনিল। মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে মাইকেল কলোনিতে এক কামরার ফ্ল্যাট কেনার পর থেকে সেই শত্রুতা আরও বাড়ে। ঝগড়ার সময়ে ভাইকে বাসের চাকায় পিষে মারার হুমকিও দিয়েছিলেন অনিল।
তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা আরও জানতে পারেন, ঘটনার দিন সকাল সাতটা নাগাদ বাস নিয়ে বেরোনোর কথা ছিল অনিলের। কিন্তু মালিকের অনুমতি না নিয়েই পাঁচটা নাগাদ দত্তবাগান মোড়ের কাছে চলে আসেন তিনি। বাস চালু রেখেই ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। সওয়া পাঁচটা নাগাদ সুনীলকে সাইকেলে চেপে আসতে দেখেই তিনি বাস দিয়ে ধাক্কা দেন। সুনীল রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পরে বাস কিছুটা পিছিয়ে আনেন অনিল। তার পরে ফের বাস চালিয়ে চাকায় ভাইয়ের মাথা পিষে দেন তিনি।
ভাই মারা যেতেই বাস নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন অনিল। কিন্তু পাতিপুকুরের একটি সুলভ শৌচালয়ে পোশাক বদলের সময়ে তাঁকে ধরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারাই পুলিশের হাতে তুলে দেন অনিলকে। পরে ওই বাসের এক যাত্রীর খোঁজ পান তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁর কাছ থেকেই বাসের ইঞ্জিন চালু রেখে দত্তবাগান মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকার ঘটনা জানা যায়। বোনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতার হওয়ার পরে জেরার মুখে ঘটনাটি স্বীকার করেন অনিলও।
আড়াই বছর ধরে মামলা চলার পরে সাজা ঘোষণা হয়েছে আসামির। এক তদন্তকারী অফিসারের উক্তি, “চাকরি জীবনে বহু মামলা করেছি। কিন্তু ভাইয়ে-ভাইয়ে এমন শত্রুতার নজির পাইনি!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.